ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপ্লবী বাহিনীর প্রশংসায় খামেনি ॥ মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে হোয়াইট হাউস

ইরানে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ২১ জুন ২০১৯

ইরানে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত

ইরান যুক্তরাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা ড্রোন বিমান ভূপাতিত করেছে। ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করায় দেশটির বিপ্লবী বাহিনীর সদস্যরা বৃহস্পতিবার বিমানটি ভূপাতিত করে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই ঘটনা ঘটল। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় হরমুজগান প্রদেশের কুহমোবারক জেলায় যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়। কুহমোবারক জায়গাটি হরমুজ প্রণালীর কাছের একটি এলাকা। এই হরমুজ প্রণালী দিয়ে মূলত বিশ্বের অধিকাংশ তেলের জাহাজ চলাচল করে। তাই অঞ্চলটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও ইরানের কাছে ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার খবর যুক্তরাষ্ট্রও স্বীকার করেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, আমরা মধ্যপ্রাচ্যে তেহরানের সব কর্মকা- গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। তিনি বলেন, তেহরান আমাদের সেনাবাহিনীর একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করেছে। আমরা বিষয়টি ইতোমধ্যে আমাদের মিত্র দেশ ও অন্যান্য বাহিনীকে অবহিত করেছি। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ড্রোনটি ভূপাতিত করে বিপ্লবী বাহিনীর সদস্যরা। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের। মার্কিন সেনাবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের মুখপাত্র, দেশটির নৌ বাহিনীর ক্যাপ্টেন বিল উরবান প্রথমে বলেছিলেন, আমাদের সেনাবাহিনীর কোন সামরিক ড্রোন ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি। তবে এ বিষয়ে আর বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। বৃহস্পতিবার ইরানের বিপ্লবী বাহিনী পরিচালিত ওয়েবসাইট ‘সেপাহ নিউজের’ খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরকিউ-ফোর গ্লোবাল হক মডেলের একটি সামরিক গোয়েন্দা ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। এই ধরনের ড্রোন টানা ৩০ ঘণ্টা আকাশে উড়তে পারে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে এই ধরনের ড্রোন আকাশ থেকে স্থলভাগের একটি বৃহৎ অঞ্চলের উচ্চমানের ছবি ও অন্যান্য নিখুঁত তথ্য যোগাড় করতে সক্ষম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছর সরে আসেন। ইরান ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শক্তিধর দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করেছিল। ওয়াশিংটন এই চুক্তির শর্ত থেকে সরে এসে তেহরানের ওপর কয়েক দফা অবরোধ আরোপের পর মূলত ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। এর প্রেক্ষিতে ইরান অধিক মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের ঘোষণা দেয়। এরপর সম্প্রতি ওমান উপসাগরে দুটি তেলবাহী জাহাজে অন্তর্ঘাতমূলক হামলার ঘটনা ঘটে। ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর ওপর এর দায় চাপায় যুক্তরাষ্ট্র। ইরান অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ অস্বীকার করে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান উত্তেজনার মধ্যে ওয়াশিংটন মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত এক হাজার মার্কিন সেন্য মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত সোমবার তেহরান তার নির্ধারিত সীমার চারগুণ ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়ায়। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বিপ্লবী বাহিনীর সদস্যদের প্রশংসা করে বলেন, তেহরানের সময় বৃহস্পতিবার ভোরে বিপ্লবী বাহিনীর সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করে। ওই মার্কিন ড্রোনটি আমাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় হরমুজগান প্রদেশের কুহমোবারক জেলার আকাশসীমায় প্রবেশ করায় এটি ভূপাতিত করা হয়। এই কুহমোবারক জেলা ইরানের রাজধানী তেহরানের ১২শ’ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। এই এলাকাটি হরমুজ প্রণালীর খুব কাছে। চলতি বছরের মার্চে এই এলাকায় চারটি তেলের জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে মঙ্গলবার মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএয়ের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক বানচাল করে দেয়ার দাবি করেন ইরানী গোয়েন্দারা। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানায়, সিআইএয়ের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক পরিচালনায় ব্যবহৃত একটি অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা আবিষ্কারের পর তারা গোয়েন্দাগিরির বিষয়টি শনাক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ তার গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাইবার জগতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করে সেই নিরাপদ ব্যবস্থায় ঢুকতে সক্ষম হয়েছেন ইরানের গোয়েন্দারা। ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের গুপ্তচর বিরোধী বিভাগের পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে ইরানের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ব্যয়বহুল গুপ্তচরবৃত্তির অংশ হিসেবে সিআইএ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে এবং প্রত্যেক গুপ্তচরের জন্য বিশেষ স্পেস বরাদ্দ করেছে।
×