ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নতি হচ্ছে লেনদেন পরিস্থিতির

প্রকাশিত: ০৯:৫৮, ২১ জুন ২০১৯

উন্নতি হচ্ছে লেনদেন পরিস্থিতির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে আমদানি কমছে। তুলামূলক বাড়ছে রফতানি আয়। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কমে আসছে বাণিজ্য ঘাটতিও। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ১ হাজার ৩৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ এক লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। যা গতবছরের চেয়ে প্রায় দুই শ’ কোটি টাকা কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের এ অবস্থা অর্থনীতির জন্য বড় উদ্বেগের বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যোগান দিতেই আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই তুলনায় রফতানি আয় বড়েনি। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১০ মাস শেষে ইপিজেডসহ (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৩৪৩ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৪ হাজার ৭১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এপ্রিল মাস শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা (বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে)। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যে ঘাটতি আরও বেশি ছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাণিজ্য ঘটতি ছিল ১ হাজার ৫২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতন ভাতা বাবদ বিদেশীদের পরিশোধ করা হয়েছে ৮৬৪ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৫৬৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে সেবাখাতে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯৬ কোটি ডলার, যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৯১ কোটি ডলার। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৩১১ কোটি ডলার, যার প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ১ শতাংশ। পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে যে পরিমাণ ঘাটতি হয়েছে, তা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ঋণাত্মক (-) রয়েছে। তবে গতবছরের তুলনায় এর পরিমাণ কিছুটা কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫০৬ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭৭৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত মানে হলো নিয়মিত লেনদেনে কোন ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকা মানে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভাল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আমদানি চাপের কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে চলতি বছরে কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছরের শুরুর দিন আন্তঃব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। এখন ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশী বিনিয়োগ ১৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ২৬ দশমিক ৬১ শতাংশ আর নিট বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। এদিকে আলোচিত সময়ে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ৫৭ শতাংশের ওপরে কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ১৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে, যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সর্বশেষ গত ১২ জুন হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৮০ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গতবছর একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ২৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
×