ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেপালে জলবিদ্যুতে বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২৪ জুন ২০১৯

নেপালে জলবিদ্যুতে বিনিয়োগ

নেপাল এবার বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে সে দেশে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাব সরকারী ও বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই হতে পারে। এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে কক্সবাজারে সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ে কারিগরি কমিটির বৈঠকও হয়েছে। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়ে ওঠার দিকটাও লক্ষণীয় বৈকি। তার মানে বাংলাদেশ এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে বিনিয়োগের সক্ষমতা অর্জন করেছে। উল্লেখ্য, সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত ও খরস্রোতা নদ-নদী পরিবেষ্টিত নেপালে পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুত উৎপাদনের রয়েছে সুবিশাল সম্ভাবনা, কমপক্ষে ৪২ হাজার মেগাওয়াট। অথচ বর্তমানে হচ্ছে মাত্র এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। সে দেশে জলবিদ্যুত উৎপাদনে খরচও খুব কম, প্রতি কিলোওয়াট মাত্র ৮০ পয়সা বাংলাদেশী মুদ্রায়। অপরদিকে বাংলাদেশে কয়লা-ডিজেলচালিত বিদ্যুত উৎপাদনে প্রতি কিলোওয়াটে ব্যয় হয় ২২ টাকার বেশি। তদুপরি তা পরিবেশবান্ধব তো নয়ই, বরং পরিবেশ দূষণসহ ডেকে আনে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। যে কারণে বাংলাদেশও এখন কয়লা ও ডিজেল বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প জ্বালানির উৎস খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান এক্ষেত্রে সর্বাধিক পছন্দনীয় ও অনুকূল অবশ্যই। উল্লেখ্য, এবার বাংলা নববর্ষ বরণ উৎসবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে সেদেশে জলবিদ্যুত প্রকল্পে সরকারকে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। বিদ্যুত সেক্টরে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর সরকার এবার সবিশেষ জোর দিয়েছে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে। যার মধ্যে অন্যতম জলবিদ্যুত, সৌর ও বায়ুবিদ্যুত। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটানে যৌথভাবে জলবিদ্যুত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে তা দেশে এনে ব্যবহারের ওপর। ভারত ইতোমধ্যে নিজেদের জমি ব্যবহারের শর্ত শিথিল তথা তুলে নেয়ায় সঞ্চালন লাইন স্থাপনেও আর প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। এতে সাশ্রয়ী দামে যেমন জলবিদ্যুত পাওয়া যাবে তেমনি তা হবে পরিবেশবান্ধব। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে ২০৪১ সালের মধ্যে ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে, যা প্রধানত আসবে নেপাল ও ভুটানে যৌথ বিনিয়োগে উৎপাদিত জলবিদ্যুত থেকে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্নস্থানে বিশেষ করে চরাঞ্চল ও সমুদ্র উপকূলে সবিশেষ জোর দেয়া হবে সৌর ও বায়ু বিদ্যুত উৎপাদনে। হিমালয় পর্বতমালার সুউচ্চে অবস্থান বিধায় এই দুটো দেশে পরিবেশবান্ধব ও নবায়নযোগ্য জলবিদ্যুত উৎপাদনের সমুজ্জ্বল সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে বিদেশী ঋণ ও প্রযুক্তি পাওয়াও অপেক্ষাকৃত সহজ। আর তাই বাংলাদেশ সার্কভুক্ত প্রতিবেশী দেশ দুটোতে জলবিদ্যুত উৎপাদনে বিনিয়োগসহ উৎপাদিত বিদ্যুত দেশে আমদানি করতে ইচ্ছুক। এ নিয়ে নেপালের সঙ্গে নীতিগত সমঝোতা ও কারিগরি আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে নেপালের আপার কারনালি জলবিদ্যুত প্রকল্প থেকে আপাতত ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত আমদানি নিয়েও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এর মাধ্যমে দু’দেশের সৌহার্দ্য ও সহযোগিতাও বৃদ্ধি পাবে নিশ্চিতভাবে। সে দেশে বাংলাদেশী পণ্য রফতানিসহ বিনিয়োগের পথও প্রশস্ত হবে। ২০৪০ সাল নাগাদ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ। নেপাল ও ভুটানের পরিবেশবান্ধব এবং নবায়নযোগ্য জলবিদ্যুত এ ক্ষেত্রে সহায়ক হবে নিশ্চয়ই।
×