ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শৃঙ্খলা জরুরী

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ২৪ জুন ২০১৯

 শৃঙ্খলা জরুরী

যন্ত্রচালিত যে কোন বাহনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে যদি তা পড়ে বেপরোয়া চালকের হাতে। রাস্তায় চলাচলেরও কিছু রীতিনীতি আছে। শর্ত আছে। সেসব পূরণ করার আবশ্যকতা রয়েছে। নিয়মকানুন মেনেই পথ চলতে হয়। রাস্তায় অবৈধ যানচালক যেমন বাঞ্ছিত নয় তেমনি বেপরোয়া চলাচলও পরিত্যাজ্য। যানজটের শহর ঢাকায় সব ধরনের গণপরিবহনেই রয়েছে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে আগুয়ান বোধকরি মোটরসাইকেল। অথচ এই দ্বিচক্রযান যখন যাত্রীসেবার জন্য রাস্তায় নেমেছিল, ঢাকাবাসী তাকে স্বাগতই জানিয়েছে। অন্য বাহনের তুলনায় অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ভরসা করেছে এই বাহনটির ওপর। তাছাড়া কত কর্মহীন তরুণ-যুবা এর মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছে উপার্জনের একটি ভাল পথ। তাই ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালনাকে ইতিবাচকভাবেই দেখে এসেছে মানুষ। তাদের পুরো সহানুভূতিই রয়েছে এর চালকদের প্রতি। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, অল্প কয়েক বছরের মধ্যে এটি যেন হয়ে উঠেছে বিভীষিকা। ভরে গেছে অবৈধ চালকে, আর তারা বড় বেপরোয়াও বটে। কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না। ট্র্যাফিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রোবটের মতো তারা ছুটে চলেছে যাত্রী নিয়ে। এ সংক্রান্ত একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে শনিবারের জনকণ্ঠে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাস্তব চালচিত্র, যা কিছুটা মর্মপীড়ার, অনেকটা ভীতির, ভীষণ উদ্বেগের, হতাশার তো বটেই। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বিআরটিএ বলছে, সারাদেশে মোটরসাইকেলের নিবন্ধিত চালক ১০ লাখের কিছু বেশি। অথচ মে মাস পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে ২৬ লাখ মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে। এই হিসেবে ১৬ লাখের বেশি মোটরসাইকেলের অবৈধ চালক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই চাকার যানে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি। এখন মোটরসাইকেল বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া যুবক-তরুণদের একটা বড় অংশই মোটরসাইকেল আরোহী। তাদের একটি বড় অংশের ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমনকি গাড়ির কাগজপত্রও নেই। রাইড শেয়ারিংয়ে অনিয়ম নিয়েও কথা উঠছে। যানজটের শহর ঢাকার রাস্তায় মোটরবাইকের দাপট লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে ট্র্যাফিক আইন উপেক্ষা করার উদাহরণও বাড়ছে। প্রশ্ন উঠছে, রাইড শেয়ারিংয়ের মোটরবাইকে যাত্রীরা কতটুকু নিরাপদ? রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর এ্যাপে পাওয়া মোটরসাইকেলে প্রাইভেট কার, বাস, সিএনজির ফাঁকফোকর দিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে। তাই চলতি বছরে যানজটের ঢাকায় নগরবাসী উবার, পাঠাওয়ের মতো মোটরসাইকেল সেবার দিকে ঝুঁকছে। পাল্লা দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতাধীন মোটরসাইকেল ও চালকের সংখ্যাও বাড়ছে। একই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের দিক থেকে মোটরসাইকেল সেবা নিয়ে অভিযোগ-অসন্তুষ্টিও বেড়ে চলেছে। ঢাকায় এখন চলছে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি মোটরসাইকেল। কঠোর নিয়মকানুনের মধ্যে এনে বেপরোয়া চালকদের চিহ্নিত করে ধাপে ধাপে তাদের লাইসেন্স বাতিল এবং আইন প্রয়োগে নীতিনিষ্ঠ থাকলে মোটরসাইকেলের ভয়ঙ্কর দাপট কমে আসবে বলে আশা করা যায়।
×