ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২৫ জুন ২০১৯

রোহিঙ্গা গণহত্যার স্বীকৃতি

দীর্ঘদিন পরে হলেও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নকে জেনোসাইড বা গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভায় পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি রোহিঙ্গা হত্যা ও বিতাড়নকে গণহত্যা অভিহিত করার পাশাপাশি একইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর। এ সংক্রান্ত ‘বার্ম ইউনাইটেড থ্রো রিগোরাস মিলিটারি এ্যাকাউন্টিবিলিটি (সংক্ষেপে বার্মা এ্যাক্ট) শীর্ষক একটি আইনের খসড়াও অনুমোদন করেছে। অতঃপর এই আইনটি পাসের জন্য পাঠানো হচ্ছে প্রতিনিধি সভায়। সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবকরা প্রয়োজনে সিনেটেও আইনটি পাস হবে বলে আশা করছেন। বার্মা আইনটি পাস হলে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ থাকবে, সে দেশের জেনারেল ও পদস্থ কর্মকর্তাদের ভিসা প্রদান বন্ধসহ। অন্যদিকে রোহিঙ্গা নিপীড়ন ‘জেনোসাইড’ বা গণহত্যা কিনা, তা নির্ধারণের আহ্বান সংবলিত একটি প্রস্তাব বিবেচনায় নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি। ২৫ জুন ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে সিনেট কমিটির বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। সে দেশের সংবিধান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর যে কোন স্থানে ‘জেনোসাইড’ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ ঠেকাতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আর তাই কোথাও ‘জেনোসাইড’ সংঘটিত হলে এবং তার স্বীকৃতি মিললে যুক্তরাষ্ট্রকে তা ঠেকানোর জন্য অঙ্গীকার পূরণের উদ্যোগ নিতে হবে। এদিকে সোমবার থেকে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪১তম অধিবেশনেও রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি তোলা হচ্ছে গুরুত্বের সঙ্গে। এবার বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি প্রাধান্য পেতে পারে। ইতোপূর্বে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গৃহীত প্রস্তাবের বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে দীর্ঘদিন পরে হলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন যে, রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়ে জাতিসংঘ যথাসময়ে সজাগ হয়নি। বরং তারা গোপন রেখেছে অনেক কিছু, যার দায়িত্ব নিতে হবে তাদের। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে অবশ্যই। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর অমানবিক পরিস্থিতির জন্য ইতোমধ্যে নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জোট ওআইসি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওআইসি। এই মামলা রুজুর বিষয়ে তহবিল সংগ্রহ ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয়টি প্রশস্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাহায্য-সহযোগিতাও অবশ্যই কাম্য। রাশিয়া ও চীনের সমর্থনও প্রত্যাশিত বৈকি। জুলাইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের কথা রয়েছে। সেখানেও প্রধান্য পাবে রোহিঙ্গা ইস্যুটি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সর্বাত্মক চাপ সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি।
×