ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৫ জুন ২০১৯

 ঢাকার দিনরাত

রবিবার কলাম লেখার ফাঁকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছি অভ্যাসবশত। অন্য সময়ে লেখামনস্ক থাকার কারণে জানালার ওপারে কী রয়েছে সেটি ভালমতো দেখা হয় না। এবার জানালার বাইরেই কি মনোযোগ বেশি? সকালে অফিসে আসার সময় লক্ষ্য করেছি গরমে মানুষের হাঁসফাঁস দশা। সারাটা দিন কড়া রোদ। বলা যায় ঢাকা সূর্য স্নান করছে। মহাযানজটের দিনগুলোও ফিরে আসছে। তীব্র গরমে প্রচন্ড যানজটে ঢাকাবাসীর গলদঘর্ম অবস্থা। জুনের দিনগুলো থাকে বছরের সবচেয়ে দীর্ঘ। বেশ সকালেই রোদে ভেসে যায় চারদিক। এমন রোদ অস্বাভাবিক নয়, যদি মাঝেমধ্যে আষাঢ়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে রোদের বদলে বৃষ্টি ঝরতে শুরু করে। এখন যে বর্ষাকাল চলছে ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী, তা কে বলবে! রীতিমতো রুদ্র বৈশাখ যেন চেপে বসেছে ঢাকার ওপর। নাকি আগাম ভাদ্রের গরম পড়তে শুরু হলো এবার? ভাদ্রেও তো বরিষণ থাকে। ওই যে গান আছে না- ঝরে ঝরোঝরো ভাদরবাদর বিরহকাতর শর্বরী। দেখলাম, সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে আমাদের জনকণ্ঠই পরিবেশ তথা জলবায়ু নিয়ে বিশেষ সচেতন। আজকের কাগজের প্রধান শিরোনাম- আষাঢ়ে বাদল নেই। কবিতার মতোই। আট মাত্রার হেডিং, পারফেক্ট পর্ব পয়ারের। এর পর ৪+৬=১০ মাত্রা জুড়ে দিলে একটি লাইন পূর্ণ হয়ে যাবে। ধরা যাক এমন- আষাঢ়ে বাদল নেই, সূর্য স্নানে ঢাকা বেসামাল। সঞ্চয়পত্র সমাচার জুন ফুরিয়ে এলো। চলতি বছরের অর্ধেকটা মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাবে। জুন ফুরোলেই নতুন অর্থবছরের সূচনা। মানে, নতুন বাজেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে শুরু করবে। জুনেই তার আভাস মিলেছে। খবরের কাগজে এ নিয়ে রিপোর্টও বেরিয়েছে। নতুন অর্থবছরে সাধারণ নাগরিকদের আমানত জাতীয় সঞ্চয়পত্রে ট্যাক্স কাটার হার দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। এখন কাটা হচ্ছে ৫ শতাংশ, সামনের মাস থেকে হবে ১০ শতাংশ। আমার এক বন্ধুর মা পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে দশ লাখ টাকার বিনিয়োগ করেছিলেন। বছর দুয়েক আগে এ সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন তিনি। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা তোলেন কয়েক মাস পর পর। সেদিন তিনি ছয় মাসের মুনাফা তুলে নিয়ে আসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে। তার মতো নিশ্চয়ই অনেকেই কয়েকদিন ধরে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আগেভাগেই তোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ভিড় করছেন। মতিঝিল অফিসের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের সাধারণত দিনে ১৩শ’ টোকেন দেয়া হয়। তবে গত মঙ্গলবার ২৮শ’ টোকেন দেয়া হয়েছে। এখন গ্রাহকদের বেশিরভাগই মুনাফা তুলতে আসছেন। অনেকেই আছেন, যারা বছরে একবার মুনাফা তোলেন। এ ধরনের গ্রাহক বেশি আসছেন। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা রাত ৮টা পর্যন্ত সেবা দিয়েছেন। সব হিসাব-নিকাশ শেষ করে তারা অফিস ত্যাগ করেছেন রাত ১১টার পর। সরকারী লোকজনের এই সেবাদানের বিষয়টি প্রশংসাযোগ্য। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের সুদব্যয়ের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। ব্যাংকের চেয়ে বেশি সুদহার থাকায় সঞ্চয়পত্রের দিকে গ্রাহকদের আগ্রহ বেশি। ব্যাংকগুলোর দাবি, সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হোক। তবে সুদের হার না কমিয়ে অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে কিছুটা নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত মার্চ থেকে সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন জমা দিতে হচ্ছে। ১০ শতাংশ কর নতুন করে যারা সঞ্চয়পত্র কিনবেন শুধু তাদের দিতে হবে নাকি আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপরও দিতে হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী যে কোন চুক্তি সম্পাদনের সময় যে ক্ষেত্রে যে হার থাকবে মেয়াদপূর্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই হার কার্যকর থাকার কথা। এর আগে ২০১১ সালে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নামানোর সময়ও এ নিয়ম অনুসরণ করা হয়। ওই সময়ে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। বিভিন্ন সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বা সুদের হার এখন ১১ দশমিক শূন্য ৪ থেকে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার এখন ৬ শতাংশের মতো। মেয়াদি আমানতের সুদহার এর চেয়ে একটু বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে গত মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে বিক্রি হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। কবিদের ক্রিকেট প্রীতি কবিদের ক্রিকেট প্রীতি বেশ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মাঝে ঢাকায় হয়ে গেল একটি ব্যতিক্রমী প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ। কবি বনাম কথাসাহিত্যিক। খেলার উছিলায় আনন্দযাপন। ওই ম্যাচের স্কোরার আহমেদ শিপলুর পোস্টের অংশবিশেষ তুলে দিচ্ছি পাঠকসমীপে। তিনি লিখেছেন: ‘অনুষ্ঠিত হলো ‘কবি বনাম কথাসাহিত্যিক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ-২০১৯’। কবি, সম্পাদক অনিকেত শামীম ও কবি মোসাব্বির আহে আলীর আহ্বান ও ব্যবস্থাপনায় আয়োজনটির প্রস্তুতি শুরু হলেও পরবর্তিতে এগিয়ে এসেছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মাঠে বিসিবির মাঠ ব্যবস্থাপনা ও আম্পায়ার প্রদান ছিল খেলার বিশেষ মাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিক সহযোগিতাও উল্লেখ্য। ঐতিহ্য প্রকাশনীর আরিফুর রহমান নাঈম পুরস্কার হিসেবে বিভূতি রচনাবলী, জীবনানন্দ রচনাবলীসহ বেশকিছু মূল্যবান বই দিয়ে সহযোগিতা করেন । প্রত্যেক প্লেয়ারের জন্য বই দেয় বিদ্যাপ্রকাশ। এছাড়া কবি সঞ্জীব পুরোহিতের পরামর্শে দর্শকের জন্য প্রায় দু’শ’ টি-শার্ট, ক্যাপ আয়োজনকে আরও নান্দনিক করেছে। এক হাজার পোস্টার, এক শ’ পোস্টারের মেমেন্টো, প্লেয়ারদের জার্সি, ক্রেস্টসহ সকল আয়োজন ছিল পরিপূর্ণ। খেলা হয় দুটি দলের মধ্যে- একদিকে কথাসাহিত্যিকরা ‘খোয়াবনামা স্কোয়াড’, আরেকদিকে কবির দল ‘গীতাঞ্জলি স্কোয়াড’। প্রস্তুতি ম্যাচে খোয়াবনামা দল জিতলেও বিশ তারিখ সকালে বৃষ্টির ফলে মাঠ এবং পিচ কর্দমাক্ত ছিল; তবু দুই দলের প্রায় সকল খেলোয়াড় প্র্যাকটিসে অংশ নেয়। বিকল্প পিচ তৈরিও হয়ে যায়, যদিও আবহাওয়ার আগাম বার্তা চিন্তিত করেছিল আয়োজকদের। তবে একুশ তারিখ সকালে ঝলমলে রোদ আশাবাদী করে তুললেও দুপুরে একদফা বৃষ্টি কিছুটা বিঘ্নিত করেছিল বটে। বিকেল তিনটা থেকে খেলা শুরু হয় অবশেষে। উদ্বোধক হিসেবে ছিলেন কবি কামাল চৌধুরী এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, কবি আসাদ মান্নান, ঢাবি প্রোভিসি কবি মোহাম্মদ সামাদ, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, মোহিত কামালসহ অনেকেই। গীতাঞ্জলি দলের অধিনায়ক কবি মোহাম্মদ সাদিক ও সহঅধিনায়ক কবি শামীম রেজা। খেলোয়াড়: জাকির জাফরান, জুয়েল মোস্তাফিজ, রোকন জহুর, মামুন খান, শিমুল সালাহ্উদ্দিন, মিছিল খন্দকার, অরবিন্দ চক্রবর্তী, সানাউল্লাহ সাগর, সাইয়েদ জামিল, নাঈম ফিরোজ, মোসাব্বির আহে আলী, বাসার তাসাউফ, কাজী মাহবুব, দীপংকর মারডুক। খোয়াবনামা দলের অধিনায়ক ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, সহঅধিনায়ক জাকির তালুকদার। খেলোয়াড়: আশরাফ জুয়েল, তানিম কবির, অরণ্য প্রভা, মেহেদি উল্লাহ, ফারুক সুমন, মোজাফফর হোসেন, রাসেল রায়হান, আশান উজ জামান, হাসান জামিল, মহসিন চৌধুরী জয়, সাজ্জাদ হোসেন শিহাব, মেহেদী ধ্রুব, মাহবুব ময়ুখ রিশাদ, আল ইমরান। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে পনেরো ওভারে একাশি রানের টার্গেট দিয়ে যায় গীতাঞ্জলি টিম। খোয়াবনামা দল আশি রানের মাথায় একটি চার হাঁকিয়ে চুরাশি রান করে বারো ওভার তিন বলে জয় ছিনিয়ে উল্লসিত হয়ে পড়ে। জমজমাট পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও পরবর্তীতে এ রকম আরও আয়োজনের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় কবিসাহিত্যিকদের এই প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ এবং সব শেষে ডিনারের আয়োজন ছিল রেড বাটন রেস্টুরেন্টে। ডিনারে গান, নাচ এবং অন্যান্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে প্রায় রাত সাড়ে দশটায় সমাপ্ত হয় এই নির্মল বিনোদনের এক আনন্দঘন উপস্থাপনা।’ ঢাকায় ব্রততী ভট্টাচার্য্য গত বছর কলকাতায় বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে গিয়ে পরিচয় হয়েছিল সঙ্গীতশিল্পী ব্রততী ভট্টাচার্য্যরে সঙ্গে। শ্যামবাজারে তার প্রতিষ্ঠিত সুরারতি সঙ্গীত আশ্রমে দীর্ঘ আড্ডা দিয়েছি, শুনেছি ক’জন গুণী শিল্পীর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত। ব্রততীদি রবীন্দ্রসঙ্গীতের কিংবদন্তিতুল্য দুই শিল্পী-সুচিত্র মিত্র ও মায়া সেনের সাক্ষাত শিষ্যা। গায়কীতে তার মিশ্র প্রভাবও রয়েছে যা কেবল সূক্ষ্ম শ্রবণেই অনুধাবন করা যায়। ব্রততীদি চট্টগ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। কলকাতায় ফেরার আগে দেড়দিনের জন্য ঢাকায় আসা। এ সুযোগ তো হেলায় হারানো ঠিক হবে না। আকাশপ্রদীপ সংগঠনের সদস্যরা মিলে ঠিক করলাম দিদির একক সঙ্গীতানুষ্ঠান হোক। ঘরোয়া আসরে দিদির কণ্ঠে রজনীকান্ত-অতুলপ্রসাদ এবং রবীন্দ্রনাথের গান শোনার সমান্তরালে গল্পও শোনা যাবে। বিশেষ করে শান্তিনিকেতনের স্মৃতি, তাঁর শিক্ষকদের স্মৃতি। ব্রততীদি অবশ্য বিমুখ করেননি সেদিন। একের পর এক গান শুনিয়ে গেছেন। গল্প শুনিয়েছেন সঙ্গীতের গুণীজনদের সান্নিধ্যযাপনের। গাইবার কালে শ্বাসযতিও যে কতো গুরুত্বপূর্ণ সেটি সুচিত্রা মিত্র একবার ব্রততী ভট্টাচার্য্যকে শিখিয়েছিলেন যা কিছুটা লজ্জাতেই ফেলে দিয়েছিল তাঁকে। গানে পান্থশালা শব্দটির মাঝে শ্বাস ফেলায় সেটি দুটি আলাদা শব্দ হয়ে গিয়েছিল। পরের শব্দটি কুটুমবাড়ির সঙ্গে সম্পর্কিত (শালা) হলেও গানের রসভঙ্গ ঘটাতে পটিয়সী বটে। সেদিন থেকেই ব্রততী সচেতন হয়ে যান গানের বাণীর শব্দ উচ্চারণের ব্যাপারে। আর মায়া সেনের কাছ থেকে তিনি শিখেছিলেন কাজকে গভীরভাবে গ্রহণের বিষয়টি। কোনো লঘুতা সেখানে কাম্য নয়; শৃঙ্খলা-নিয়মানুবর্তিতা এবং সাধনা- সঙ্গীতের উচ্চমান ও শুদ্ধতার জন্যে কতো জরুরী, তার শিক্ষা পেয়েছিলেন তাঁর কাছ থেকেই। ব্রততী ভট্টাচার্য্যরে গান শ্রোতাদের মন জয় করে নিলো। প্রার্থনাসঙ্গীত দিয়ে শুরু, ভজন দিয়ে সমাপ্তি- অধিবেশনজুড়ে ছিলো শিল্পীর সুপরিকল্পনার ছাপ। আকাশপ্রদীপের সদস্যরা কতোটা মুগ্ধ, বোঝা গেল গানশেষে কয়েকজনের বক্তব্যে। আগামীতে এসে আরো বেশি সময় থাকবেন ঢাকায়, আরো বেশি গান শোনাবেন, এমন একটা সুন্দর ছবি এঁকে দিয়ে গেলেন শ্রোতাদের মনের গহীনে। ১৬ জুন ২০১৯ [email protected]
×