ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানি ব্যয় কমছে, বাড়ছে রফতানি আয়

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২৫ জুন ২০১৯

 আমদানি ব্যয় কমছে, বাড়ছে রফতানি আয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে আমদানি প্রক্রিয়া চলমান থাকলেও কমে গেছে এর পরিমাণ। বিশেষ করে গত তিন মাস ধরে আমদানির বাণিজ্যের এই সূচক একেবারেই নিচের দিকে। গতবছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই তিন মাসের আমদানি বাণিজ্যের সঙ্গে এ বছরের একই সময়ের আমদানির তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গত এপ্রিল মাসে আমদানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। এর আগে, মার্চে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি মাত্র এক শতাংশে আটকে ছিল। আর গত ফেব্রুয়ারিতে আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল মাসে আমদানিতে শুধু নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে তাই নয়, আমদানির পরিমাণও কমে গেছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৫৪৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের এপ্রিলে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৫১২ কোটি ১ লাখ ডলার। এ হিসাবে গতবছরের এপ্রিলের তুলনায় এবারের এপ্রিলে আমদানি ব্যয় কমেছে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খাদ্যশস্য আমদানি কমে যাওয়ার কারণে এবং টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ার কারণে অনেকেই আমদানিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এ কারণে আমদানিতে ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত এ বিষয়ে বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণে খাদ্যশস্য আমদানি কমে গেছে। আবার টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিতে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে। এতে অনেকেই আমদানিতে অনুৎসাহিত হচ্ছেন। এমনকি শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিও আগের মতো আসছে না।’ এছাড়া, সরকারের বড় বড় প্রকল্পের জন্য আমদানি আগের মতো করতে হচ্ছে না। যেমন: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য আগের মতো যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হচ্ছে না। এসব কারণে আমদানিতে ব্যয় কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় কমেছে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৫০১ কোটি ৯১ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই ব্যয় হয়েছে ৪৭০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। আবার ২০১৮ সালের মার্চে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৪৮৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের মার্চে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪৮৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। যদিও গত জানুয়ারিতে পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬১২ কোটি ৮ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ভেতরের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে চাল ও গম আমদানি কমেছে। এই অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে চাল ও গম আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৬২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ সময়ে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৫৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। জুলাই থেকে এপ্রিল এই ১০ মাসে শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এ সময়ে সার্বিক এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ১৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অবশ্য এ সময়ে সার্বিক এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) খাদ্যশস্য আমদানিতে ব্যয় কমেছে ৫৫ শতাংশ। এ সময়ে বিদেশ থেকে ১০৬ কোটি ২৬ লাখ ডলারের খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে। যদিও গতবছরের একই সময়ে খাদ্যশস্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছিল ২৪১ কোটি ডলার। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে শূন্য শুল্কের সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীরা প্রচুর চাল আমদানি করে মজুদ রেখেছেন। পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় এখন তারা চাল আমদানি করছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে চাল আমদানি কমেছে ৯৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ সময়ে চাল আমদানিতে ব্যয় হয়েছে আট কোটি ৯৬ লাখ ডলার। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে চাল আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছিল ১৩০ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে গম আমদানি কমেছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ সময়ে গম আমদানিতে খরচ হয়েছে ৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে গম আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ১১০ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ভোগ্যপণ্য আমদানিও কমেছে আট দশমিক ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানি কমেছে তিন দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ১১৬ কোটি ডলারের ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ভোজ্যতেল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ১১৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। চিনি আমদানি কমেছে ৩৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ওষুধশিল্পের কাঁচামাল আমদানি চার দশমিক ৩৯ শতাংশ কমে ১৬ কোটি ১০ লাখ ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ওষুধশিল্পের কাঁচামাল আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছিল ১৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। তবে এই সময়ে মসলা, গুঁড়োদুধ, ডাল, শিল্পের কাঁচামাল, সিমেন্ট তৈরির ক্লিংকার, অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, তেলবীজ, রাসায়নিক দ্রব্য, সার, গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামাল তন্তু, কাঁচা তুলা আমদানি বেড়েছে। এদিকে আমদানি পরিস্থিতি নেতিবাচক হলেও ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রফতানি আয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে রফতানি আয় হয়েছে ৩৮১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। আগের মাস এপ্রিলে রফতানি আয় হয়েছিল ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার। গত মার্চ মাসে রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ৩৩৪ কোটি ২ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিভিন্ন পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৭৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এই পরিমাণ গতবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি।
×