ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বিএনপিকে মাইনাস করতে হবে

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৪ জুন ২০১৯

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বিএনপিকে মাইনাস করতে হবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিএনপিকে জঙ্গীর দোসর ও সাম্প্রদায়িক শক্তি আখ্যায়িত করে বলেছেন, এধরণের রাজনৈতিক শক্তিকে ক্রেণ দিয়ে তুলে বিরোধী দলে বসানো, এটা দেশের জন্য ও গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। বরং উন্নয়ন ও অগ্রগতির অর্থনীতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বিএনপির মত সাম্প্রদায়িক জঙ্গীর দোসর রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দান থেকে মাইনাস করতে হবে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় আরও অংশ নেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সরকারি দলের ডা. ইউনুস আলী সরকার, মনোরঞ্জন শীল গোপাল, মাহফুজুর রহমান, শাহে আলম, জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, এলডিপির মাহি বি চৌধুরী, বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাসদ সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বিএনপিকে জঙ্গীর দোসর ও সাম্প্রদায়িক শক্তি উল্লেখ করে বলেন, এখন রাজনীতির স্পেস নাই বলে কথা বলা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। শান্তির শত্রুদের জন্য কোন রাজনৈতিক স্পেস দেওয়া যায় না। গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে যারা গণতন্ত্রের পিঠে ছোবল মারে তাদের জন্য মায়া কান্না গণতন্ত্রকে ধ্বংসই করে। এধরণের রাজনৈতিক শক্তিকে ক্রেণ দিয়ে তুলে বিরোধী দলের বসানো, এটা দেশের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক না। তিনি বলেন, অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য রাজনীতির শান্তি দরকার। শেখ হাসিনা সরকারকে অনেক মূল্য দিয়ে সেই শান্তি অর্জন করতে হয়েছে। তাই শান্তির শক্তিতে অশান্তির হোতাদের কোনো ছাড় নাই। দমন ওদের করতেই হবে। আগুণ সন্ত্রাস, জঙ্গী, আন্তর্ঘাত, খুনি, যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতির বিচার প্রতিহিংসা না। এসব ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেওয়া উচিত না। তিনি বলেন, এমনও রাজনৈতিক শক্তি বিদ্যমান যারা সামরিক শাসনের আমলে রাজনৈতিক বিঁষবৃক্ষ হিসেবে কাজ করছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি হচ্ছে সেই দল যে দলে খুনি, জঙ্গী, সাম্প্রদায়িক চক্রমহলের রাজনৈতিক ছায়া। এটি সাম্প্রদায়িক দল। সংসদে বা বাইরে যেখানেই থাকুক না কেন বিএনপি এখনো যুদ্ধাপরাধের বিচার মানে না, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানে না। সংবিধানের চারনীতি মানে না। স্বাধীনতার ঘোষণা মানে না সুতরাং এরকম একটি অবস্থায় সংবিধান এবং দেশবিরোধী রাজনৈতিক দল। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন তত্ত্ব হিসেবে পালন করেন। জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বলার চেস্টা করে। এধরণের রাজনীতির শক্তিকে ক্রেণ দিয়ে তুলে বিরোধী দলের বসানো এটা দেশের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক না। অর্থনীতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বিএনপির মত সাম্প্রদায়িক জঙ্গীর দোসর রাজনীতির দলকে বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দান থেকে মাইনাস করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, লুটপাট, অগ্নিসন্ত্রাস, শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা দেশবাসী কখনো ভুলে যাবে না। যাদের আমলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ করেছিল, বিচারপতির দরজায় লাথি মারে, হাজার হাজার সেনা কর্মর্তাদের হত্যা করেছে, তাদের মুখে আইনের শাসনের কথা মানায় না। এখন বাজেটের টাকা তারেক রহমানের হাওয়া ভবন ও খোয়াব ভবনের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয় না বলেই দেশের সবক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পদে থেকে খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন। বিএনপির আমলে সালসা ও আজিজ মার্কা নির্বাচনও দেশবাসী কখনো ভুলবে না। এমপিওভূক্তকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকল যোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। কাউকে বঞ্চিত করা সরকারের লক্ষ্য নয়। যারা অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে তাদের প্রতি আমাদের লক্ষ্য রয়েছে যাতে তারা আগামীতে যোগ্য হয়ে উঠে। বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করে বলেন, খালেদা জিয়াকে যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে, তা জামিনযোগ্য। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত নানা উছিলায় তাঁকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের নামে দায়েরকৃত গায়েবী মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ধনীকে আরও ধনী করবে, গরীবকে আরও গরীব করবে। বাজেট প্রতিবছর বাড়লেও বাস্তবায়ন কমছে। ঘাটতি মেটাতে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে বিনিয়োগ বাড়ছে না। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না, কর্মসংস্থান না হলে রাজস্ব আদায়ও বাড়বে না। শেয়ারবাজার ও ব্যাংক থেকে লুট হচ্ছে, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ঋণখেলাপীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে কোন দিক-নির্দেশনা নেই বাজেটে। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহি বি চৌধুরী বলেন, সারাদেশে নারীর ক্ষমতায় চোখে দেখার মতো। তবে দুর্নীতিতে নারীরা পিছিয়ে আছে, এটা একটা শুভ সংবাদ। বিশাল একটি তরুণ প্রজন্ম উচ্চাভিলাষী হয়ে পড়েছে। উন্নত দেশে এটা পজেটিভ হিসেবে দেখলেও আমাদের দেশে তা নেগেটিভ হিসেবে দেখা হয়। সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু বলেন, সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। বাজেট শুধু বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়, দেশের কল্যাণে সরকারের দর্শন ফুটে উঠে বাজেটে। তবে করের আওতা অবশ্যই সহনীয় মাত্রায় বাড়াতে হবে। অনেক মন্ত্রণালয় বাজেট বরাদ্দ কেন বাস্তবায়ন করতে পারছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। কে কি সমালোচনা করলে সেটি দেখলে হবে না। বিএনপি এখন কোথায়, তারা তো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গোটা জাতিকে নিয়ে বাজেট বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আর বিচার বিভাগের জন্য বাজেট আরও বাড়াতে হবে। বিচারকের বেতন-ভাতা বাড়াতে হবে। মামলাজট নিরসনে বিচারকের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। হাইকোর্টে আরও একশ’জন বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, বিএনপিসহ কিছু কথিত সুশিল সমাজের ব্যক্তিরা প্রস্তাবিত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলেন। কিন্তু টানা ১০ বছর ধরে এমন উচ্চাভিলাষী বাজেট দিয়ে তা বাস্তবায়ন করে বর্তমান সরকার দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে স্থাপন করেছে। দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ বলেন, ঋণখেলাপীর কারণে আর্থিকখাতে তারল্য সঙ্কটের সৃষ্টি করেছে। এ সঙ্কট নিরসনে বাজেটে কোন নির্দেশনা নেই। বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাজেটের ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতিবারই ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। এটা অর্থনীতির জন্য শুভকর নয়। তিনি মোবাইলের ওপর কর না আরোপের দাবী জানান।
×