ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তারুণ্যের সংগঠন ‘রংধনু’

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২৫ জুন ২০১৯

তারুণ্যের সংগঠন ‘রংধনু’

‘চলবো মোরা একসঙ্গে জয় করবো মানবতাকে’- স্লোগান নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রংধনু। রক্তের গ্রুপ এবং রক্তদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ৯ অক্টোবর, ২০১৮ দিনব্যাপী ফ্রি- ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির। ক্যাম্পেইনে ২০১ জনের রক্তের গ্রুপ বিনামূল্যে পরীক্ষা করা হয় এবং রক্তদানে উৎসাহিত করা হয়। পরবর্তী প্রোগ্রামে দরিদ্র মেধাবী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়। এ সম্পর্কে সানজিদা সিদ্দিকী মারিয়া বলেন, পড়ালেখায় যথেষ্ট আগ্রহ, ইচ্ছাশক্তি ও বড় হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ করা সম্ভবপর না হওয়ার কারণে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও অকালে ঝরে পড়তে হয় মৌলিক অধিকার নামক শিক্ষা থেকে। এতিম, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত অথচ পড়তে আগ্রহী ও মেধাবী এমন শিক্ষার্থীদের মাঝে নিয়মিতভাবে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করে যেতে চাই আমরা। ময়মনসিংহের মাসকান্দায় অবস্থিত আল-মানার এতিমখানার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয় শীতবস্ত্র। পাশাপাশি এতিমখানার শিক্ষার্থীদের মাঝে একবেলার খাবার, বিভিন্ন খেলার সরঞ্জাম বিতরণ ও শিক্ষার্থীদেও ফ্রি-ব্লাড গ্রুপিং করা হয়। এ সম্পর্কে মাহজুবা ইসলাম মোহনা বলেন, এতিমখানার শিশুরা মা-বাবার ভালবাসা পায়নি কখনও, আমরা নিজেদের হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে এবং আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করতে পারলে ওদের সঙ্গে একটু সময় অতিবাহিত করে ওদের দুঃখের অংশীদার হওয়ার চেষ্টা করে থাকি। এছাড়াও শীতকালে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত, হতদরিদ্র, অসহায় মানুষের মাঝে উষ্ণতা ছড়াতে মানবতার আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়ায় সংগঠনটি। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত বটতলার পাশে গড়ে তোলে ‘মানবতার দেয়াল’। সহযোগিতার এই প্রক্রিয়া অল্প সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এ ব্যাপারে সংগঠনটির সহ-সভাপতি নিলয় মাহমুদ রুবেল বলেন, আমাদের অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবতার দেয়ালটি মানবতার দৃষ্টান্ত রেখেছে। কিছু মানুষ প্রয়োজন থাকলেও অন্যের কাছে হাত পেতে চাইতে পারে না লজ্জায়, এই লজ্জার জন্য যেন প্রয়োজন অপূর্ণ না থাকে নিজের প্রয়োজনের সঠিক বস্ত্র নিতে পারে এবং যারা দান করতে চাই নিজের অপ্রয়োজনীয় বস্ত্র তাদের উভয়ের মেলবন্ধন তৈরির জন্যই রংধনুর মানবতার দেয়াল। আর এভাবেই মানবতার সুবাতাস চারপাশে বইয়ে দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ভ্রাতৃত্বের সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে। ফ্রি-ব্লাডগ্রুপিং ক্যাম্পেইন এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর সংগঠনটি। সেই লক্ষ্যে ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালের নজরুল মেমোরিয়াল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয় শিক্ষা উপকরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চির উন্নত মমশির স্মৃতিসৌধের সম্মুখে ৮ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ফ্রি-ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন করা হয়। ক্যাম্পেইনে ৩৫০ জনের রক্তের গ্রুপ বিনামূল্যে পরীক্ষা করা হয়। এ সম্পর্কে মাসকাতুল জিনান বলেন, কখনও যেন আশপাশের মানুষকে বলতে না হয় যদি রক্তের গ্রুপটা জানতাম তাহলে রক্তদান করে মানুষটাকে বাঁচাতে পারতাম বা মানুষটার ক্ষতিটা কম হতো তাই আশপাশের সবার রক্তের গ্রুপ জানাতেই রংধনু পরিবার নিয়মিতভাবে করছে বিনামূল্যে এই ক্যাম্পেইন। ২৫ মে, ২০১৯ নজরুলজয়ন্তীতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ করা হয়। এ বিষয়ে ফাইজাহ্ ওমর তূর্ণা বলেন, সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু বা এতিম শিশুদের জন্য সামান্য কিছু করতে পারাটাও অনেক বড় তৃপ্তির বিষয়। নতুন কাপড় পাওয়ার পর তাদের মুখের যে হাসি তার পেছনের কারণ হতে পেরে আমরা গর্বিত। নজরুলজয়ন্তীতেই কেন, এ প্রসঙ্গে মোঃ আলাল মিয়া বলেন, চির দুঃখী কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তীতে অসহায় এবং দুঃখী মানুষদের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে তাদের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল আমাদের প্রচেষ্টা। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং কমিউনিটি বেজড মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়মিতভাবে ব্লাড ডোনেট করছে সংগঠনটি। ময়মনসিংহ শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়া সত্ত্বেও সংগঠনটির রক্তদান প্রশংসনীয়। এ কর্মতৎপরতা সম্পর্কে জুবায়ের আহম্মদ সাব্বির বলেন, একজন রোগীকে বাঁচানোই আমাদের কাছে মুখ্য, সেক্ষেত্রে দূরত্বের কথা না ভেবে রোগীর জীবন বাঁচাতে ছুটে যায় আমাদের প্রতিটি সদস্য। একটি প্রাণ বেঁচে থাকুক আমাদের মতো তরুণদের রক্তে। স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমের সক্রিয়তার ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে সেরা স্বেচ্ছাসেবককে সংগঠনের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়। সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন গ্রামীণ খেলার আয়োজনও করে থাকে সংগঠনটি। আর গুণগত ও জীবনভর শিক্ষা অর্জন এবং সদস্যদের গ্রন্থমুখী করার লক্ষ্যে সংগঠনের সকল ধরনের পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয় শুধু বই। এ ব্যাপারে জেনাস ভৌমিক জানান, বই সে এক ভালবাসার নাম, বই মানুষের জ্ঞানকে বর্ধিত করে, বিবেকের দ্বার করে উন্মোচিত। স্বেচ্ছাসেবকরা বিবেকের তাড়নায় স্বেচ্ছায় সেবা করে। সেই বিবেকের দ্বার আরও উন্মুক্ত করতে রংধনুর এই প্রয়াস। সংগঠনটির উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ সাহাবউদ্দিন, প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান, সহকারী প্রক্টর আল জাবির ও সহকারী প্রক্টর মোঃ বাকীবিল্লাহ। উপদেষ্টাগণের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে রংধনুর কার্যক্রম চলমান। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক শাহীনূর রহমান শিমুল বলেন, রক্তদানের মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এছাড়া আমরা বিভিন্ন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ ভাগাভাগির চেষ্টা করে থাকি। আমরা এভাবেই স্বপ্ন দেখি একটা মানবিক সমাজের যেখানে রক্তের অভাব এবং ক্ষুধার তাড়নায় কেউ মারা যাবে না। সংগঠনটির সভাপতি মোঃ জুবায়েদ হোসেন সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, মানব সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করতে পেরে আনন্দিত রংধনু পরিবার। সবার সার্বিক সহযোগিতায় রংধনুর সমাজ সেবামূলক কাজের ধারা অব্যাহত থাকবে। সেবাই পরম ধর্ম। আসুন মানুষের পাশে দাঁড়াই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এএইচএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ নির্মাণে দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে আমাদের। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রংধনু যে অসাধারণ কর্মযজ্ঞ গ্রহণ করেছে, তা সত্যি প্রশংসনীয়।
×