ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম ॥ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য হুমকি

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৫ জুন ২০১৯

শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম ॥ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য হুমকি

তরুণ প্রতিভাবানদের বেশিরভাগ গল্পই ভেলকি দেখানোর, শূন্য থেকে শিখরে উঠার বা ফিনিক্স পাখির মতো ভস্ম থেকে জ্বলে ওঠার। তবে মুদ্রার বিপরীত দিকও থাকে। ব্যর্থতার গল্পগুলো হয়ত আরেকটু ছোট থাকত যদি ছোট্ট একটি সমস্যাকে ‘সমস্যা’ বলে মনে করা হতো। তরুণ প্রজন্মের উদ্যম যেন হয় অফুরন্ত। আর এই অফুরন্ত উদ্যম যেমন কাউকে শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে আবার একটা ব্যর্থতার চক্রে ঘুরপাক খাবার জ্বালানিও সরবরাহ করতে পারে। তরুণ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে এমন প্রায়ই হয়ে থাকে যে তারা দারুণ কোন আইডিয়া আবিষ্কার করে বসেন। হঠাৎ করেই সেই আইডিয়া নিয়ে একটা সোনালি ভবিষ্যত দেখতে শুরু করেন। সাফল্যকে তখন অবশ্যম্ভাবী মনে হতে থাকে। কিছুদিন একটা আইডিয়া নিয়ে কাজ করার পরই রুক্ষ বাস্তবতা সামনে আসে। তখনই সরে আসতে হয় সেই আইডিয়া থেকে। কিন্তু এরই মধ্যে অর্থ এবং পরিশ্রম দুটোই খরচ হয়েছে অনেক। কিছুদিন পর আবার একটা দারুণ আইডিয়া। তারপর আবার সেই চক্রব্যুহে ঘুরপাক। মনোবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম। ব্যবসা, প্রযুক্তি, সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বা যাই হোক না কেন, প্রায় সব ধরনের স্টার্টআপের মধ্যে শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম কাজ করতে পারে। আর বেশিরভাগ সময় তরুণ উদ্যোক্তারা এই সমস্যাতে পড়ে থাকেন। মাথাভর্তি দুর্দান্ত সব আইডিয়া গিজগিজ করলেও শেষ পর্যন্ত কোন কিছুই পরিণতি পায় না। তবে একটু চিন্তাভাবনা করে এগোলেই এই ঘূর্ণিপাক থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সামর্থ্য সক্ষমতা এবং পরিকল্পনার সমন্বয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন উদ্যোক্তার পরিকল্পনার সঙ্গে তার সক্ষমতার বড় ফারাক থাকে। ফারাক থাকা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কতটুক সক্ষমতার ঘাটতি আছে এবং কিভাবে সেটা পূরণ করা যায় এই বিষয়ে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা শুরুতে না থাকলে সেই ঘাটতি আর কখনই পূরণ হয়ে উঠে না। প্রযুক্তিগত কোন নতুন পণ্য তৈরি করতে গেলে কাঁচামাল কোথা থেকে আসবে ব্যববসার ক্ষেত্রে মূলধন কিভাবে জোগাড় হবে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুবই জরুরী। বিকল্প পরিকল্পনা একটি আইডিয়াকে কেন্দ্র করে শুধু একটা পরিকল্পনা নিয়ে আগ্রসর হলে ঝুঁকির সম্ভাবনা বেশি। নতুন উদ্যোক্তাদের নিশ্চিত কোন কাজও শেষ মুহূর্তে এসে আটকে যেতে পারে। একটা রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে বিকল্প রাস্তাটা কি হতে পারে সেটা ভেবে রাখা দরকার। উদাহারণ হিসেবে বলা যায় একটা দল থেকে একজন প্রকৌশলী চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা কি হতে পারে সেটা অন্তত কিছুটাও ভেবে রাখলে অনেক আইডিয়াই পরিত্যক্ত হওয়ার থেকে বেঁচে যায়। সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি এমন পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো প্রাথমিক অবস্থায় সাফল্যের হার বেশি এমন কোন পরিকল্পনা নিয়েই এগিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। অতিরিক্ত ঝুঁকি থেকে ঘটা বিপদ সারাজীবনের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার খিদে নষ্ট করে দিতে পারে। শুধু নব্যউদ্যোক্তারা যে এ রকম বিপদে পড়েন তা নয়, কিন্তু প্রতিষ্ঠিতরাও একই ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। ভিডিওগ্রাফির জগতে আমূল পরিবর্তন আনা গো-প্রো হঠাৎ করেই ড্রোন বানাতে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা ক্যামেরার থেকে ড্রোনেই মনোযোগ দেয়া শুরু করে বেশি। এতে সাময়িকভাবে তাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়। পরে তারা সিদ্ধান্ত বদলায়। নতুন কিছুর পরিচিতি শুধু যে দারুণ কিছু আবিষ্কার করলেই হবে এমনটি নয়। আজকের পৃথিবীতে বিপণন সমান গুরুত্বপূর্ণ। নতুন কিছু করলে সেটা সবার কাছে পৌঁছাতে যথেষ্ট পরিকল্পনা না থাকলেই নয়। ভোক্তার হাতে শেষ পর্যন্ত না গেলে সেটা শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোম উসকে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এরপর গ্রাহকের মতামতই বলে দেবে পরের সিদ্ধান্ত কি হওয়া উচিত। ভোক্তার মতামত ভোক্তা নতুন কিছু গ্রহণ করলে সেটা উদ্যোক্তার পক্ষে মঙ্গলজনক। গ্রহণ করলেও আগামী দিনগুলোতে তারা কি কি চায় বা চাহিদা কিভাবে পরিবর্তিত হয় এসব বিশ্লেষণ উদ্যোক্তাকে শাইনি অবজেক্ট সিনড্রোমের হাত থেকে রক্ষা করবে, অনেক সময় প্রাথমিক অবস্থায় ভাল সাড়া পাওয়া গেলেও কিছুদিন পরেই মুখ থুবড়ে পড়ে যে কোন পণ্য বা সেবা। সূত্র : ফোর্বস
×