ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানি শুল্ক ও কর আদায়ে কিছু পরিবর্তন আসছে

প্রকাশিত: ১০:১৫, ২৫ জুন ২০১৯

  আমদানি শুল্ক ও কর আদায়ে কিছু পরিবর্তন আসছে

এম শাহজাহান ॥ আমদানি শুল্ক ও কর আদায়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট আগামী ৩০ জুন রবিবার সংসদে পাস হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সাধারণ মানুষকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে সঞ্চয়পত্রের ওপর নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর আদায়ের প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হবে। গুঁড়োদুধ, চাল ও চিনির বাজার পর্যবেক্ষণ করছে সরকারী বাজার তদারকি টিম। শিশুখাদ্য বিশেষ করে গুঁড়োদুধের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে আনা হয়েছে। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে গুঁেড়াদুধে নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ রেয়াতি আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হতে পারে। চাল ও চিনির ওপর আরোপিত শুল্ক এখন প্রত্যাহার হচ্ছে না। তবে বছরের কোন সময় যদি এ দুটি পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যায়, সেক্ষেত্রে এসআরও জারি করে মূল্যহ্রাসের ব্যবস্থা নেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্য বিশেষ করে ডাল, গম, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে না। এসব পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বিদ্যমান শূন্য শতাংশ শুল্কহার অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, সংসদে ১৬ দিনের দীর্ঘ বাজেট আলোচনা শেষে কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা বেশকিছু প্রস্তাব ও মতামত দেবেন। প্রস্তাবিত বাজেট পাসের দিনই ঋণের বিপরীতে ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও এ বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কথা জানাবেন। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, পুঁজিবাজারে প্রণোদনা, রেমিটেন্স ও রফতানিতে প্রণোদনা প্রদান, ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন, বিনিয়োগে ওয়ানস্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করার ঘোষণাসহ বেশকিছু পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে এবারের বাজেট পাস হচ্ছে। বাজেট পাসের আগের দিন পাস হবে অর্থবিল। এবার কোন পরিবর্তন আসছে না আয়-ব্যয়ের কাঠামোতে। কর কাঠামোর মধ্যে আয়কর অপরিবর্তিত রেখে চূড়ান্ত অর্থবিল প্রস্তুত করছে এনবিআর। এ লক্ষ্যে এনবিআর এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। এছাড়া আগামী ৩০ জুন রবিবার রাত ৮টায় শেরে বাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেটোত্তর নৈশভোজের আয়োজন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এদিকে, বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর বাড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এটি সামাজিক সুরক্ষা, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্প এটি। এখানে কেন হাত দিলেন অর্থমন্ত্রী? শুধু মতিয়া চৌধুরীই নয়, সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ সঞ্চয়কারীরাও। এছাড়া পেনশনার, গৃহিনী এবং সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষের নিরাপদ ও ঝুঁকিহীন বিনিয়োগ হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। দেশে অনেক পরিবার আছেন যারা সঞ্চয়পত্রের লাভের ওপর জীবনধারণ করছেন। বিশেষ করে অবসরে যাওয়া চাকরিজীবীদের টাকা সরকারের এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে সামাজিক সুরক্ষার এই সুযোগটি যাতে বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীরা নিতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে সঞ্চয়পত্র কেচাবেচার ক্ষেত্রে বেশকিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর কর্তনের বর্তমান যে হার নির্ধারিত আছে তাই বহাল রাখার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। এতে করে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহক বিশেষ করে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষ, পেনশনার এবং গৃহিনীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। নিয়মিত আয় উপার্জন নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেছেন তারা। এই বাস্তবতায় সঞ্চয়পত্রের ওপর নতুন আরোপিত ৫ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হবে। এদিকে, প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গ্রাহকদের মুনাফার টাকার ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছেন। অর্থাৎ আগে উৎসে কর দিতে হতো ৫ শতাংশ, এখন দিতে হবে ১০ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হতো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারাও বলছেন, বাজেট পাসের আগে নতুন আরোপিত উৎসে করা প্রত্যাহার না হলে ১০ শতাংশ করার ঘোষণা কার্যকর করা হবে আগামী ১ জুলাই থেকেই। উৎসে কর দ্বিগুণ করার কারণে সমাজের সীমিত আয় ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঞ্চয়পত্র গ্রাহকদের আয় কমে যাবে। এ প্রসঙ্গে এনবিআরের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে উৎসে কর দ্বিগুণ করার ঘোষণাটি কার্যকর হলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের নজরে এসেছে। আশা করছি, বাজেট পাসের সময় এটি প্রত্যাহার করা হবে। সঞ্চয়পত্রকে সরকার প্রতিবছরই বাজেটের ঘাটতি অর্থায়ন পূরণের অন্যতম উপায় হিসেবে বিবেচনা করে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও পরে তা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। এদিকে, প্রস্তাবিত বাজেটে চিনি ও গুঁড়োদুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এ দুটি পণ্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে। চিনি আমদানিতে র-সুগারের ক্ষেত্রে প্রতি মে. টন ২ হাজার টাকা এবং রিফাইন্ড সুগারের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ হাজার টাকা হারে স্পেসিফিক ডিউটিসহ ২০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি বিদ্যমান রয়েছে। তবে স্থানীয় চিনি শিল্প রক্ষায় প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে আমদানিকৃত র-সুগারের স্পেসিফিক ডিউটি ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা এবং রিফাইন্ড সুগারের ডিউটি সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
×