ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৫০ লাখ মানুষ খাবার পানি সঙ্কটে

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৫ জুন ২০১৯

 দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ৫০ লাখ মানুষ খাবার পানি সঙ্কটে

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের সাতক্ষীরা খুলনা বাগেরহাট জেলার ৫০ লাখ মানুষ খাবার পানি সঙ্কটে রয়েছে। এ এলাকার ৭৯ শতাংশ নলকূপে কমবেশি আর্সেনিকের প্রভাব রয়েছে। অপরদিকে গভীর নলকূপেও রয়েছে লবণাক্ততা ও আর্সেনিক। সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে বেসরকারী পর্যায়ের এক গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে একথা জানিয়েছে বেসরকারী সংস্থা উত্তরণ ও পানি কমিটি। সুপেয় পানি সঙ্কটের পাশাপাশি দুর্যোগকালে এ এলাকার স্যানিটেশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। ভূ-উপরিস্থ জলাধার খনন করে আর্সেনিকমুক্ত পানি সংরক্ষণ ও তা বিশুদ্ধ করে ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সরকারী বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে। এই অঞ্চলের সমস্যা সমাধানের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থান নিয়ে হাইড্রলজিক্যাল অনুসন্ধান পরিচালনা, পুকুর ও দীঘি খনন করে দূষণমুক্ত জলাধার সৃষ্টি করা, দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, দলিত ও নারীদের জন্য সরকারের বিশেষ বরাদ্দ, সুপেয় পানির জন্য এ এলাকায় প্রযোজ্য নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম, পানি কমিটির মইনুল ইসলাম ও অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহি। তারা পািন অপচয় রোধের ব্যাপারেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে বিশ^ ব্যাংকের রিপোর্টের তথ্য তুলে জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে দারিদ্র্য হার ২১.৬ শতাংশ হলেও সাতক্ষীরা জেলায় দারিদ্র্যের হার ৪৬ শতাংশ। তাদের পক্ষে পানি কিনে খাওয়া সম্ভব না হওয়ায় তারা আয়রন, লবণ ও আর্সেনিকযুক্ত পানি খেয়ে নানা রোগের মুখে পড়ছেন। একইভাবে দুর্যোগে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাট্রিন পুনর্নির্মাণ বা সংস্কার করার মতো আর্থিক সঙ্গতিও তাদের নেই। এসব কারণে তারা চর্মরোগ, পেটের পীড়া, আমাশয়, জ্বর, ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ নানা রোগের কবলে পড়ে। সঙ্কটের কারণে শুধু খাবার পানি নয়, গৃহস্থালি কাজেও তারা লবণাক্ত ও দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। সরকার এই অঞ্চলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে গভীর নলকূপ খনন করে পানি সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা করলেও বাস্তবে তাতে চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। এ জন্য এখনও গ্রামের নারীদের প্রতিদিন ভোরে ও বিকেলে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার হেঁটে ২ থেকে ৩ শ্রমঘণ্টা ব্যয় করে কলসিতে করে পানি নিয়ে আসতে হয়। ১২০০ ফুট পর্যন্ত খনন করা নলকূপের পানিও লবণাক্ত এবং তা আর্সেনিকযুক্ত উল্লেখ করে তারা বলেন, এই সঙ্কট দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্যের জন্য এই পানি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে তারা বলেন, এ এলাকায় যেসব পুকুর ছিল তা একদিকে যেমন ভরাট হয়ে যাচ্ছে তেমনি লোনা পানির চিংড়ি চাষ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মিষ্টি পানি মিলছে না।
×