ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দলের একটি সিন্ডিকেট দায়ী!

বিএনপি অফিসের পাশে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৫ জুন ২০১৯

 বিএনপি অফিসের পাশে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে পরপর ছয়টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আল আশরাফ মামুনসহ অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বোমা বিস্ফোরণের সময় ছাত্রদলের বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় নগরের দিকে যাচ্ছিল। বোমা হামলার সঙ্গে বিএনপির একটি সিন্ডিকেট দায়ী বলে দাবি করেছেন ছাত্রদলের সদ্য বহিষ্কৃত কমিটির সহসভাপতি ইখতিয়ার কবির। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ছাড়াও অন্য গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নেতাকর্মীদের মধ্যে বোঝাবুঝি, ত্যাগী নেতাকর্মীদের দলে পদ পদবি না পাওয়া এবং আগামী ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে চলমান সঙ্কটের জেরে বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। সোমবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মাত্র ২০ থেকে ২২ গজ পশ্চিম দিকে বিজয় নগর মোড়ের দিকে যেতেই হক‘স বে নামের একটি প্রাইভেটকারের শোরুমের সামনে পরপর ছয়টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমা হামলার সঙ্গে বিএনপির একটি সিন্ডিকেট দায়ী বলে দাবি করেছেন সদ্য বহিষ্কৃত ছাত্রদল সহসভাপতি ইখতিয়ার কবির। তার অভিযোগ, ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। কর্মসূচী শেষ করে নেতাকর্মীরা বিজয়নগর মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের খুবই কাছেই হক’স বে নামের প্রাইভেটকারের শোরুমের সামনেই পরপর ছয়টি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এটিকে তিনি পরিকল্পিত হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিস্ফোরণে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আল আশরাফ মামুনসহ অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। এই হামলার জন্য বিএনপির একটি সিন্ডিকেট দায়ী। কারা কি উদ্দেশে ওই হামলা চালিয়েছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খুঁজে বের করার দাবি করেন তিনি। এর আগে বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও তাদের অনুসারীরা নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীরা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও বয়সসীমা না করে ধারাবাহিক কমিটি গঠনের দাবি করেন। বিক্ষোভ চলাকালে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় তাকে বাধা দেয়া হয়। তিনি কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। এ সময় তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান তুলেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত তিনি কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যেতে বাধ্য হন। ওই সময় ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্না স্লোগান দিয়ে বলেন, তাদের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। তিনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালনের জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালনের পক্ষে। কিন্তু একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে অপ্রীতিকার ঘটনা চাচ্ছে। কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বিএনপির সিন্ডিকেট দায়ী থাকবে। এ বিষয়ে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার এসএম শিবলী নোমান জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, নানা ইস্যুতে বিএনপিতে সৃষ্টি হওয়া একাধিক গ্রুপ, আগামী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কাউন্সিল নিয়ে সৃষ্টি জটিলতা, ছাত্রদল থেকে নেতাদের বহিষ্কার করা নিয়ে সৃষ্টি জটিলতার সূত্রধরেই বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। তারপরেও ঘটনার গভীরে আরও কোন কারণ আছে কিনা তা নিয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিএনপি কার্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের একাংশ আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের সূত্রধরে গত ২২ জুন দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে আন্দোলনকারী নেতাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতিতে পৌঁছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলীয় কার্যালয় দখলে রেখে রিজভী নিজের স্বার্থ হাসিল করছেন। তারা রিজভীকে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেন। রিজভী সরকারের দালাল বলে অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা। রিজভী বিএনপির জন্য একটি বড় সমস্যা। বিএনপিকে রক্ষা করতে হলে রিজভীকে দল থেকে সরাতে হবে। তাকে সরালেই দল আগের মতো সাবলীলভাবে কাজ করতে পারবে। গত ২২ জুন ওই রাতেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকার দাবি করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ১২ নেতাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে প্রকাশ করা হয়।
×