ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

’২১ সালের মধ্যে দেশ ৫০তম অবস্থানে আসবে

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২৫ জুন ২০১৯

  ’২১ সালের মধ্যে দেশ  ৫০তম অবস্থানে আসবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে বিশ^ব্যাংকের ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ তম অবস্থানে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান)। তিনি বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের খুব সহজে সেবা দেয়ার কাজ চলছে। উদ্যোক্তারা আমাদের কাছে আগে। এজন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস খুব শীঘ্রই কার্যকর হবে। সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর উদ্যোগে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জানাতে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক একটি দেশের ব্যবসার পরিবেশ কেমন তার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে প্রতিবছর ইজ অব ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সর্বশেষ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম অবস্থান পেয়েছে। আগের বছরের চেয়ে উন্নতি হয়েছে এক ধাপ। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, বিশ^ ব্যাংকের পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে আমাদের অগ্রগতি ভাল। আশা করি চলতি বছর সূচকে আমরা ব্যাপক অগ্রগতি করব। কারণ অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু পর্যালোচনায় আমরা পিছিয়ে ছিলাম। দেখা গেছে, আইন আছে, কিন্তু ওয়েবসাইটে নেই। এমন প্রশ্নের কারণে আমরা ভাল করতে পারিনি। তবে আইন কানুন আরও সংশোধন করা হবে। সরকার ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে যা যা করা দরকার করবে। সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা, বাংলদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা, বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বেপজাসহ সরকারের সব সংস্থা কাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের খুব সহজে সেবা দেয়ার কাজ চলছে। উদ্যোক্তারা আমাদের কাছে আগে। এজন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস খুব শীঘ্রই কার্যকর হবে। একটি সেবা সংস্থার আওতায় সব সেবা মিলবে। বিডা এর নেতৃত্ব দেবে। জানা গেছে, দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়নের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। প্রধানমন্ত্রী তাকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন। দেশ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে পিছিয়ে থাকবে না। এ ক্ষেত্রে কবে, কতটা এগিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালে সরকার সহজে ব্যবসা সূচকে উন্নতির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়। ওই বছর ১৯ নবেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে সচিবদের নিয়ে এক সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম এ সূচকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দুই অঙ্ক, অর্থাৎ কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে নিয়ে আসার লক্ষ্যের কথা জানান। এরপর ডুয়িং বিজনেসের ১০টি বিষয়ে কী কী সংস্কার করতে হবে, তা বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়। কিন্তু অভিযোগ আছে, ক্ষমতা ছাড়তে না চাওয়ার মানসিকতা সংস্কারকে আটকে রেখেছে। এখন নতুন করে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সালমান এফ রহমানকে। যিনি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি। পাশাপাশি সংস্কারের বিষয়ে তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় বলেছেন। সালমান এফ রহমান জানান, পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির মুনাফা থেকে রাখা সঞ্চিতি বা রিটেইনড আর্নিংসের ওপর করের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। বাজেট পাসের আগেই এ বিষয়ে কাজ হবে। আমরা অনেক জায়গা থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। তিনি বলেন, রিটেইনড আর্নিংসে রাখা হয় কর দেয়ার পর আয় থেকে। এর ওপর আবার কর আরোপ হলে সেটা দুবার করারোপ হয়ে যাবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কোম্পানির রিটেইনড আর্নিংস পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হলে সেটার ওপর ১৫ শতাংশ কর আরোপ করেন। এক পক্ষ মনে করে, শেয়ারধারীদের মুনাফার ভাগ বা লভ্যাংশ না দিয়ে এভাবে সঞ্চিতি রাখা ঠেকানো দরকার। আবার আরেক পক্ষের আশঙ্কা, এতে কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমে যাবে। বিদেশী কোম্পানিগুলোর কাছে যেহেতু রিটেইনড আর্নিংস বেশি, সেহেতু তারা সেটা লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে দিলে টাকা বিদেশে চলে যাবে। সালমান এফ রহমান বলেন, রিটেইনড আর্নিংসের ওপরে কর পুরোনো আয়ের ওপর নতুন করে কর আরোপেরও সমান। আমরা বিষয়টি চিহ্নিত করেছি। প্রতিবেদন উপস্থাপনের পরে, বিভিন্ন মিডিয়া থেকে আগত সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরকালে প্রাধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বাংলাদেশের অগ্রগতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বিশ্বের অন্যদেশের তুলনায় প্রতিবছর বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে, তাই নেতিবাচক দিকগুলো দ্রুত কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে উন্নত বিশ্বের দিকে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মোঃ আমিনুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের অমিত সম্ভাবনার দেশ, এ সময় তিনি প্রাধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিকল্পনার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে সব দিক দিয়েই বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে হবে, তবেই দ্রুত এগিয়ে যাবে প্রাণের দেশ বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কামাল আজাদ এ সময় বলেন, নতুন বাজেটে ট্রেড লাইসেন্স করতে করের হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি করলে আমরা ডুয়িং বিজনেস সূচকে পিছিয়ে থাকব। বিডাকে এ ব্যাপারে চিঠি দিতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, এফবিসিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বক্তৃতা রাখেন। পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর প্রতিবেদনটি উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগ-এফডিআই এসেছে ২০১৮ সালে। যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৬১ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৮ শতাংশ। ২০১৭ সালে এফডিআই এসেছিল ২১৫ কোটি ডলার।
×