ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আফগানিস্তান ১৪৭/৬, (৩৭ ওভার)

আফগানিস্তানকে ২৬৩ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৫ জুন ২০১৯

  আফগানিস্তানকে ২৬৩ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ

জিএম মোস্তফা ॥ সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই। এমন সমীকরণ মাথায় রেখেই সোমবার খেলতে নামে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্যে ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনের রোজ বোল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথম ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটের বিনিময়ে ২৬২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর সংগ্রহ করে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৩ রান করেন মুশফিকুর রহীম। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫১ রান আসে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে। এর ফলে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে হলে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ২৬৩ রান। বিশ্বকাপ থেকে ইতোমধ্যেই ছিটকে গেছে আফগানিস্তান। তারপরও হাল ছাড়েনি রশীদ-গুলবাদিনরা। দুদিন আগে বিশ্বমঞ্চে ভারতকেও কাঁপিয়ে দেয় তারা। সেই ম্যাচের অনুপ্রেরণা নিয়েই যেন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নামে আফগানরা। টস জিতে প্রথমেই এদিন ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন দলের অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েব। বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে ১০ মিনিট বিলম্বিত হয়। আফগানদের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৩ রানেই প্রথম উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মাত্র ১৬ রান করেই সাজঘরে ফিরে যান লিটন দাস। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে মুজিব উর রহমানের বল কাভার অঞ্চল দিয়ে মারতে গিয়ে হাশমতুল্লাহ শাহিদীর তালু বন্দী হন লিটন। টিভি স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখা যায় বল মাটি ছুঁয়ে হাসমতুল্লাহর হাতে উঠে। তথাপি টিভি আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন। এ নিয়ে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় বিতর্কের ঝড়। এরপর তামিম ইকবালের সঙ্গে যোগ দেন ইনফর্ম ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান। শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কাটা বেশ ভালভাবেই সামলে নেন দুই বন্ধু মিলে। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে মিলে ৫৯ রানের জুটি গড়ে দেন বড় সংগ্রহের আভাস। কিন্তু দলীয় ৮২ রানের মাথায় তামিম ইকবালকে হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ৩৬ রানে মোহাম্মদ নবীর বলে বোল্ড আউট হন হার্ডহিটার এই ওপেনার। সাকিব অবশ্য খেলে যান তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই। এদিন ৩৫ রান যোগ করেই নতুন কীর্তি গড়েন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তার নামের পাশে যোগ করেন ১০০০ রান। এই রেকর্ড গড়ে বিশ্বকাপে রান সংগ্রহে সাকিব ছাড়িয়ে গেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী-মার্ক ওয়াহদের মতো কিংবদন্তিদেরও। মন্থর উইকেটে সাকিব এদিন খুব বেশি আগ্রাসী হননি। এক, দুই রান নিয়েই এগুতে থাকেন। ৪৫ বলে ৩৫ রানে যেতে সাকিব মেরেছেন মাত্র একটি বাউন্ডারি। বিশ্বকাপে হাজার রানে যেতে সাকিবের লাগল মাত্র ২৭ ম্যাচ। এক হাজারের বেশি রানের সঙ্গে বল হাতেও সাকিবের উইকেট ২৮ (আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত)। আর দুই উইকেট পেলে ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে এক হাজার রান ও ৩০ উইকেটের মালিক হবেন তিনি। বিশ্বকাপে এক হাজার রান ছুঁতে সাকিব করেছেন ২ সেঞ্চুরি আর ৮ ফিফটি। তবে আফগানদের বিপক্ষে অর্ধশতক করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সাকিব। ব্যক্তিগত ৫১ রানে মুজিব উর রহমানের এলবির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। তবে আউট হয়ে গেলেও এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছেন সাকিব। ৬ ম্যাচ থেকে তার সংগ্রহ ৪৭৬ রান। শীর্ষে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার (৪৪৭) নেমে যান দুইয়ে। ৪২৪ রান নিয়ে এই তালিকার তিনে অবস্থান জো রুটের। সাকিবের পর মাঠে নামেন সৌম্য সরকার। কিন্তু এদিনও ব্যাট হাতে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। ওপেনিং থেকে পাঁচে নামিয়ে আনা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুজিবের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ফিরে যান সাজঘরে। যদিও রিভিও নিয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু রিপ্লে দেখে অবশ্য আউটের ঘোষণাই আসে। তবে মাঠের আম্পায়ার আউট না দিলেও পারতেন। সৌম্য আউট হলে বাংলাদেশের স্কোরকার্ড দাঁড়ায় ১৫১ রানে ৪ উইকেট। এরপর মুশফিককে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দেড় শ’ থেকে বাংলাদেশের রানটাকে দুই শ’র কোটা ছাড়িয়ে দেন তারা। দলীয় ২০৭ রানে মোহাম্মদ নবীর হাতে ক্যাচ বানিয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উইকেট তুলে নেন গুলবাদিন নাইব। আউট হওয়ার আগে দুই চারের সৌজন্যে ৩৮ বলে ২৭ রান করে যান মাহমুদুল্লাহ। দৌলত জাদরানের বলে মোহাম্মদ নবীর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান মুশফিকুর রহীমও। ততক্ষণে ৮৭ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৮৩ রান করেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক। আফগানদের বিপক্ষে এদিন সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল মুশফিকের সেঞ্চুরি। কেননা, তার আগে মাহমুদুল্লাহ-সাকিব দুজনেই যে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করেছিলেন। এবার অবশ্য সেই কীর্তি গড়তে ব্যর্থ হলেন মুশফিক। তবে বাংলাদেশের স্কোরকার্ডে ২৬২ রান জমা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। এক ম্যাচ পর মাঠে নেমে ২৪ বলে ৩৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে যান তিনি। যদিওবা গুলবাদিন নাইবের ইনিংশের শেষ বলে আউট যান সৈকত। তবে ২ বলে ২ রান করে অপরাজিত থাকেন চোট কাটিয়ে দলে ফেরা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। আফগানিস্তানের সফল বোলার মুজিব উর রহমান। ১০ ওভারে ৩৯ রানের বিনিময়ে বাংলাদেশের মূল্যবান ৩ উইকেট তুলে নেন তিনি। ১০ ওভারে ৫৬ রান খরচায় ২ উইকেট লাভ করেন গুলবাদিন নাইব। এছাড়া দৌলত জাদরান এবং মোহাম্মদ নবী উভয়ই ১টি করে উইকেট পান।
×