ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিক

প্রকাশিত: ১২:২৮, ২৬ জুন ২০১৯

নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিক

মোঃ মামুন রশীদ ॥ তিনি যেন নীরব ঘাতক হয়ে উঠেছেন। দলের হয়ে সাকিব আল হাসান রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন, কমবেশি রেকর্ড গড়ছেন তামিম ইকবালও। সে তুলনায় যেন এ দু’জনের ছায়ায় অনেকটাই আড়াল মুশফিকুর রহীম। বিপদের কা-ারি হয়ে তিনি যতবার বাংলাদেশ দলকে রক্ষা করেছেন, সেটা পারেননি আর কেউ। তাই মিডলঅর্ডারের ‘দেয়াল’ এবং ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ খ্যাতিটা অনেক আগেই জুুটেছে। চলতি বিশ্বকাপে আরেকবার নিজেকে সে ভূমিকায় মঞ্চায়ন করলেন মুশফিক। আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতেই হবে তেমন একটি ম্যাচে দলের ওপর প্রায় আছড়ে পড়তে থাকা বিপদ কাটিয়েছেন ৮৭ বলে ৮৩ রানের কার্যকর ইনিংস খেলে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম ও সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ১১ হাজার রান পূর্ণ করেছেন এদিন। এ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচেই ৩২৭ রান করে ছাড়িয়ে গেছেন নিজের পূর্ববর্তী ৩ বিশ্বকাপের ব্যাটিং পারফর্মেন্সকে। তবে তাকে নিয়ে আলোচনাটা সেভাবে হওয়ার সুযোগ ছিল না সাকিবের চোখ ঝলসানো নৈপুণ্যে। কিন্তু এ আসরেও দলকে রক্ষা করে যাচ্ছেন তিনি। বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়Ñ দলের টপঅর্ডাররা ব্যর্থ হলেও মুশফিককে দেখে তাই ভয় বারবার দূর হয় টাইগারদের। মুশফিক বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান নিজের ২৬তম ম্যাচে এসে। সেই ম্যাচে ৯৭ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ানদের। প্রথম ব্যাট করে ৩৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ নিয়েও শঙ্কিত ছিল মহাপরাক্রমশালী অসিরা। তাই ম্যাচশেষে স্বস্তি পেয়ে তারপর সবাই ছুটে এসেছিলেন এবং মুশফিককে ঘিরে ধরেছিলেন। অনেকে তার ব্যাট নিয়ে কাড়াকাড়িও করেছেন। আকৃতিতে অসি ক্রিকেটারদের চেয়ে ছোট হলেও অনেক বড় ইনিংস খেলেছিলেন এবং টলিয়ে দিয়েছিলেন তাদের আত্মবিশ্বাসের ভিত। চলমান বিশ্বকাপেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মুশফিক ৭৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে বড় একটি সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন। তবে মুশফিক যতটা আলোচিত হয়েছেন তারচেয়ে বেশি আলো কেড়েছেন সাকিব। প্রতিটি ম্যাচেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন তিন নম্বরে নেমে। তাই মুশফিক আড়ালে। কিন্তু নীরবেই নিজের কাজটি করে গেছেন। চলতি আসরে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৬৫.৪০ গড়ে ৩২৭ রান সংগ্রহ করে ফেলেছেন। ক্যারিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলছেন ৩২ বছর বয়সী এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। আগের তিন বিশ্বকাপের কোনটিতেই এত রান করতে পারেননি তিনি। ২০০৭ বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ২৬.২০ গড়ে ১৩১, ২০১১ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ১৬.২০ গড়ে ৮১, ২০১৫ বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ৪৯.৬৬ গড়ে ২৯৮ রান করেছিলেন। এবার নিজের নৈপুণ্যকেই ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। সেদিক থেকে ক্যারিয়ারের সেরা বিশ্বকাপ খেলছেন মুশফিক। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ২৭ ম্যাচ খেলে ৩৯.৮৫ গড়ে রান ৮৩৭। তিনি দুই নম্বরে। আর সাকিব সমান ম্যাচে ৪৪.১৭ গড়ে ১০১৬ রান করে এক নম্বরে। এক আসরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান সাকিবের। চলতি আসরেই তিনি ৬ ম্যাচে ৪৭৬ রান করেছেন। গত বিশ্বকাপে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৩৬৫ রান করে দুইয়ে। ঠিক তার পেছনেই এখন মুশফিক। আফগানদের বিপক্ষে ৮৩ রানের ইনিংস খেলার সুবাদে ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র ৭৪তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক অনন্য মাইলফলক ছুঁয়েছেন। তিন ফরমেটের ক্রিকেট মিলিয়ে (ওয়ানডে, টেস্ট ও টি২০) তার রান এখন সবমিলিয়ে ৩৫৪ ম্যাচে ১১ হাজার ২৯। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম এই মাইলফলক পেরোনো ব্যাটসম্যান তামিম এখন সবার ওপরে। সার্বিক তালিকায় ৫১ নম্বরে থাকা তামিমের রান ৩৩২ ম্যাচ থেকে ১২ হাজার ৭৮১। আর সাকিব ৬৫তম অবস্থানে ৩৩১ ম্যাচে ১১ হাজার ৪৭১ রান করে। উইকেটরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ব্যাটিং করেছেন এমন ম্যাচে অবশ্য এখন পর্যন্ত তিন ফরমেটে ১০ হাজার ছুঁতে পারেননি মুশফিক। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে সবমিলিয়ে ৩২৫ ম্যাচে তিনি করেছেন ৯ হাজার ৯৩৫ রান। অর্থাৎ আর ৬৫ রান করতে পারলেই ক্রিকেট ইতিহাসে মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রান হবে তার। এদিক থেকে সবার ওপরে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা। তিনি উইকেটরক্ষক হিসেবে তিন ফরমেট মিলিয়ে ৪৬৪ ম্যাচে করেছেন সর্বাধিক ১৭ হাজার ৮৪০ রান। এছাড়া ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি (৫৩৩ ম্যাচে ১৭ হাজার ৮৩), অস্ট্রেলিয়ার এ্যাডাম গিলক্রিস্ট (৩৯১ ম্যাচে ১৫ হাজার ২৫২), দক্ষিণ আফ্রিকার মার্ক বাউচার (৪৬৬ ম্যাচে ১০ হাজার ৪৬৩) ও জিম্বাবুইয়ের এ্যান্ডি ফ্লাওায়ার (২৪১ ম্যাচে ১০ হাজার ২৪৯) ওপরে আছেন মুশফিকের। উইকেটরক্ষকদের মধ্যে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বাধিক ৫৪১ রান করেছিলেন সাঙ্গাকারা ২০১৫ বিশ্বকাপে। সে তালিকায় মুশফিক আছেন ৮ নম্বরে। তবে বাকি দুই ম্যাচে আর ১৩৯ রান করতে পারলেই দুই নম্বরে উঠবেন তিনি। এই মুহূর্তে সাঙ্গাকারাই দুইয়ে আছেন ২০১১ বিশ্বকাপে ৪৬৫ রান করে। বাকি ৫টি অবস্থানে গিলক্রিস্ট ২০০৭ সালে ৪৫৩, জিম্বাবুইয়ের ব্রেন্ডন টেইলর ২০১৫ সালে ৪৩৩, গিলক্রিস্ট ২০০৩ সালে ৪০৮, সাঙ্গাকারা ২০০৭ সালে ৩৫০ ও অস্ট্রেলিয়ার ব্র্যাড হ্যাডিন ২০১১ সালে ৩৩২ রান নিয়ে আছেন। সার্বিকভাবে বিশ্বকাপেও উইকেটরক্ষক হিসেবে সাঙ্গাকারা ৩৭ ম্যাচে ১৫৩২ রান করে সবার ওপরে। এ তালিকায় অবশ্য মুশফিক তিন নম্বরে এখন ৮৩৭ রান নিয়ে। দুইয়ে আছেন গিলক্রিস্ট ৩১ ম্যাচে ১০৮৫ রান করে। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে তাই মুশফিকের সামনে আরও সুযোগ আছে দারুণ কিছু অর্জনের।
×