ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছক্কা বৃষ্টিতে মরগানের রেকর্ড

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২৬ জুন ২০১৯

ছক্কা বৃষ্টিতে মরগানের রেকর্ড

ছক্কা, রেকর্ড শব্দগুলো দেখলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ক্রিস গেইল, রোহিত শর্মা, শহীদ আফ্রিদি, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের ছবি। অথচ ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড এখন ইয়ন মরগানের দখলে। ইংল্যান্ড ওয়ানডে অধিনায়ক ভাল ব্যাটসম্যান কিন্তু রোহিত-গেইলদের মতো ছক্কা-ম্যান নন। সেই মরগান বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৭১ বলে ১৪৮ রানের ঝড়ের পথে মাত্র ৪ চারের বিপরীতে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১৭টি! বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেই এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড এটি। এতদিন রেকর্ডটা যৌথভাবে ছিল রোহিত শর্মা, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ক্রিস গেইলের। তিনজনই মেরেছিলেন সমান ১৬টি করে ছক্কা। ২০১৩ সালের নবেম্বরে ব্যাঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে ২০৯ রান করার পথে ১৬ ছক্কা হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন রোহিত। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১৪৯ রান করার পথে রোহিতকে ছুঁয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। পরের মাসে বিশ্বকাপে ক্যানবেরায় জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২১৫ রান করার পথে ১৬ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন গেইল। মরগান এদিন ফিফটি ছুঁয়েছিলেন ৩৬ বলে। পরের পঞ্চাশ করতে লেগেছে মাত্র ২১টি বল। দুটি মাইলফলকই ছুঁয়েছেন ছক্কা মেরে। ১৭ ছক্কার ৭টি মেরেছেন লেগ স্পিনার রশিদ খানকে। গুলবাদিন নাইবকে ৫টি, মোহাম্মদ নবীকে ৩টি, দৌলত জাদরান ও মুজিব উর রহমানকে মেরেছেন একটি করে ছক্কা। রশিদ খান ৯ ওভার বল করেছেন। তার ওভারগুলোতে ১১টি ছক্কা মেরেছেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে ইয়ান মরগান। চার মেরেছেন ৩টি। তাতে মাত্র ৫৪ বলে রেকর্ড ১১০ দিয়েছেন রশিদ খান। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোন বোলারের দেয়া সর্বোচ্চ রান। এর আগে ১৯৮৩ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন স্নেডেন ১২ ওভার বল করে ১০৫ রান দিয়েছিলেন। সেবারও ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা চড়াও হয়েছিলেন স্নেডেনের উপর। এবার রশিদ খানের ওপরও চড়াও হলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। তাতে ৩৬ বছরের লজ্জার রেকর্ড ভেঙে সেটার পাশে নিজের নামে লেখিয়েছেন রশিদ। অবশ্য ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ১১০ রান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরুচে বোলিং। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বোলার মাইক লিউইস দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে ১০ ওভারে ১১৩ রান দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নটিংহ্যামশায়ারে পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ ১০ ওভার বল করে দিয়েছিলেন ১১০ রান। রশিদ খান ৯ ওভারেই দিয়েছেন ১১০ রান। ভাগ্যিশ দশম ওভারটি করতে হয়নি! তা না হলে কোথায় গিয়ে যে থামত তার লজ্জার রেকর্ড সেটা কল্পনা করা মুশকিল। ৩৯৭/৬Ñ চলতি বিশ্বকাপে এটাই দলীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে কার্ডিফে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৩৮৬ রান করেছিল ইয়ন মরগানের দল। তবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ ৪১৭/৬ রানের রেকর্ডটা অস্ট্রেলিয়ার দখলে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে এই আফগানিস্তানের বিপক্ষেই এই রেকর্ড গড়েছিল মাইকেল ক্লার্কের দল। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সেদিন আফগান বোলারদের ওপর দিয়ে কী ঝড়টাই না বয়ে গেছে! রশীদ-নবীদের নাকের জল-চোখের জল এক করে দিয়ে মরগান হাঁকিয়েছেন বিধ্বংসী সেঞ্চুরি। মাত্র ৫৭ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন। বিশ্বকাপে যা চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫০ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটার কেভিন ওব্রায়েন। ৫১ বলে সেঞ্চুরি আছে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান তারকা এ্যাডাম গিলক্রিস্টের। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৯৭ রানের পাহাড় গড়ার পর আফগানদের ২৪৭/৮Ñএ থামিয়ে দিয়ে জয় ১৫০ রানের। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় মরগানের ওই ব্যাটিং। ওল্ড ট্রাফোর্ডে রশীদ খান- মোহাম্মদ নবীদের নিয়ে কী খেলাটাই না খেলেছেন! মাত্র ৪ চারের বিপরীতে রেকর্ড ১৭ ছক্কা দেখলেই সেটি বোঝা যায়। মজার বিষয়, এমন কীর্তিতে মরগান নিজেই অবাক,‘কখনও ভাবিনি এমন একটি ইনিংস খেলব। আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। শেষ চার বছর নিজের ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এটি সেসবেরই প্রতিফলন।’ বলেন ইংলিশ ক্যাপ্টেন। মরগান আরও যোগ করেন, ‘শেষ চার বছরে আমি আমার ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচগুলো খেলেছি। তবে কোনটিই ৫০-৬০ বলে সেঞ্চুরি করার মতো ছিল না। এই সেঞ্চুরি তাই বিশেষ কিছু। কিন্তু খুব বেশি আবেগাপ্লুত হতে চাই না। কারণ বিশ্বকাপের এ পর্যায়ে সামনে অনেক ম্যাচ রয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে সেখানেও আমাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’ মরগান ধুরন্ধর কিন্তু এই ইংল্যান্ড দলে জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো বেন স্টোকসদের মতো খ্যাপাটে-বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান রয়েছেন। অধিনায়কের ছক্কা-বন্যা দেখে ম্যাচ শেষে সতীর্থরা নাকি মজা করেছেন। মরগান নিজেই সেটি জানিয়েছেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আমাকে উদ্দেশ্য করে বদলে যাওয়া ড্রেসিং রুমে সবাই মজা করছে। আমি যে সেঞ্চুরি করেছি, সেটিকে খুব ধীরগতির হিসেবে বিবেচনা করছে তারা। সব সময় এটা নিয়ে মজা করছে ওরা। এটা দারুণ ব্যাপার।’ পিঠের ব্যথা, সেদিন শতভাগ ফিট না হয়েও ইংল্যান্ড অধিনায়ক গড়লেন নতুন বিশ্ব রেকর্ড, ‘পিঠের চোট ভোগাচ্ছিল। তাই ভাবতে পারিনি, আমি এ রকম একটা ইনিংস খেলতে পারব। তবে এমন ইনিংস খেলে বেশ ভালই লাগছে, কারণ এতে করে আমি তরুণ তারকাদের সঙ্গে লড়াই করতে পারলাম। এই অনুভূতিটা সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি দিচ্ছে।’ আফগানদের বিপক্ষে এদিন নতুন আরও একটি কীর্তি গড়েন মরগান। বিশ্বকাপে ইংলিশ ‘অধিনায়ক’ হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন তিনি। ২০১১ সালে ভারতের বিপক্ষে ব্যাঙ্গালুরুতে ‘অধিনায়ক’ হিসেবে এ্যান্ড্রু স্ট্রস ১৫৮ রান করেছিলেন। ইংল্যান্ডের জার্সিতে মরগানের এটি ১২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। মার্কাস ট্রেসকোথিকের সমান তিনিও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি পেলেন ইংল্যান্ডের হয়ে। সেঞ্চুরির তালিকায় ইংলিশদের মধ্যে মরগানের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল সতীর্থ জো রুটের। রুট ক্যারিয়ারে ১৬টি সেঞ্চুরি হাঁকান। তবে আয়ারল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করা ৩২ বছর বয়সী মরগান ইংল্যান্ডে পাড়ি জামনোর আগে সেখানেও করেছিলেন একটি সেঞ্চুরি! ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আফগান বোলারদের ওপর দিয়ে কী ঝড়টাই না বয়ে গেছে সেদিন! রশীদ-নবীদের নাকের জল-চোখের জল এক করে দিয়ে মরগান হাঁকিয়েছেন বিধ্বংসী সেঞ্চুরি। মাত্র ৫৭ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন। বিশ্বকাপে যা চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫০ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটার কেভিন ওব্রায়েন। ৫১ বলে সেঞ্চুরি আছে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান তারকা এ্যাডাম গিলক্রিস্টের। যেন ছক্কার বৃষ্টি বয়ে যায়। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা মোট ছক্কা হাঁকিয়েছেন ২৫টি, এটিও নতুন রেকর্ড!
×