ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভবিষ্যতে দলে মনোনয়ন বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না : জিএম কাদের

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৬ জুন ২০১৯

ভবিষ্যতে দলে মনোনয়ন বাণিজ্য করতে দেয়া হবে না :  জিএম কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আর বেচাকেনা চলবেনা। ভবিষতে দলে মনোনয়ন বাণিজ্য করতেও দেয়া হবে না। কেউ এ অপচেষ্টা করতে চাইলে সবাইকে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। বুধবার রাজধানীর এজিবি কলোনী কমিউনিটি সেন্টারে দলের চারদিনব্যাপী বিভাগীয় সাংগঠনিক সভার তৃতীয় দিনে (চট্টগ্রাম ও সিলেট) সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় তৃনমূলের নেতারা দলের বিভিন্ন দুর্বল দিক তুলে ধরে কঠোর সমালোচনা করেন। বিশেষ করে বারবার দলীয় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, কমিটির নেতৃত্ব বদলানো, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে অনড় না থাকতে পারা, নিজ দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন না করা, হাইব্রিড নেতাদের মনোনয়ন দেয়া সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন জেলা-উপজেলা নেতারা। সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের বলেন, বিগত নির্বাচনে পার্টির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমার মনে হয় নির্বাচনকালীন সময় যারা ছিলেন তাদের কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল না পরিস্থিতির কারণে। মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে এই সুযোগ থাকবে না। আমরা সবাইকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাব। সামনে বিভিন্ন দল থেকে লোকজন আসবে, তাদের জায়গা দিতে হবে। তবে ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হবে না। আপনারা মতামত দিলে এক নেতার একপদ নীতি ফলো করতে পারি। আমি পারিবারিক পরিচয়ে দলের নেতৃত্ব দিতে চাই না একথা উল্লেখ করে কাদের বলেন, আপনারা না চাইলে আমি নেতৃত্ব দেব না। আমি চাই এই পার্টির মালিক হবেন আপনারা সকলে। আমি পার্টির সকল কার্যক্রমে আপনাদের সম্পৃক্ত করতে চাই। আমি ক্ষমতার লোভী নই, অর্থলোভী নই। দলকে কাউকে বিক্রি করতে দেয়া যাবে না। কেউ করার চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে। সভার শুরুতে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙা বলেন, শৃঙ্খলার অভাবে আমরা ৯৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। এরশাদের সমর্থন না থাকলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার চেহারা দেখতে পারতনা। আমাদের সহযোগিতায় ক্ষমতায় এসে তারাই আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। তিনি বলেন, কোনো জেলা বা উপজেলার নেতাদের গায়ে যদি আওয়ামী লীগের কেউা হাত তুলে তাহলে আমাদের জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তিনি বলেন, ছিয়ানব্বই সালে রাতে ষড়যন্ত্র করে দলের বারোটা বাজিয়ে নিজে মন্ত্রী হয়েছেন। আমরা আগামীতে আর কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হবো না। বক্তব্য শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শ্লোগান দেন " দুই নাগনীর একই বিষ-নৌকা আর ধানের শীষ"। সভায় কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও জাপা ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুল আলম মাস্টার বক্তব্য দিতে দাড়ালে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন দেয়ার সভাস্থল থেকে জাপার কেন্দ্রীয় নেতা মাখন সরকারকে সভা থেকে বের করে দেন পার্টির মহাসচিব। পরে শাসমুল আলম মাস্টারকে বক্তব্য সংক্ষেপ করতে নির্দেশ দেন রাঙা। সভায় চাটখিল উপজেলার সহসভাপতি আবু জাফর খান বলেন, সকালে কমিটি দিয়ে বিকালে বিলুপ্তি করা হবে তা হবেনা। কমিটমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। জাপার ভাইস-চেয়ারম্যান সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, গতবার আমি এমপি ছিলাম। এবার আমার বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমার আসনে কেন ভরাডুবি হলো তা তদন্ত করা হোক। কক্সবাজার জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, এ ঘরোয়া সভায় সরকার বিরোধী বক্তব্য ও শ্লোগান দিলে হবেনা, সংসদে বলুন। জাপাকে সত্যিকারের বিরোধীদল হিসেবে গড়ে তুলেন। নোয়াখালী জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক বোরহান উদ্দিন মিন্টু বলেন, যাদের পুরো পরিবার অন্যদল করে তাদের কাউকে জেলা বা উপজেলার দায়িত্ব দেয়া যাবেনা। হবিগঞ্জ সভাপতি আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে উড়ে এসে জুড়ে বসে এমপি ও দলের বড় বড় পদ পেয়ে যান। তা থেকে পার্টির সিনিয়র নেতাদের সতর্ক থাকতে হবে। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, পীর ফজলুর রহমান মেজবাহ, জহিরুল আলম রুবেল, নজরুল ইসলাম বাবর প্রমুখ।
×