ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আত্মঘাতী ৩২ জঙ্গীর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান ॥ নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি

প্রকাশিত: ১০:১৩, ২৭ জুন ২০১৯

 আত্মঘাতী ৩২ জঙ্গীর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান ॥ নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি

গাফফার খান চৌধুরী ॥ আত্মঘাতী ৩২ বাংলাদেশী জঙ্গী ধরতে মরিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী এসব জঙ্গীর খোঁজে চলছে সর্বাত্মক চেষ্টা। এরা সবাই আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের অনুসারী। এই বত্রিশ জঙ্গীকেই নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে নিখোঁজ এরা। মোস্টওয়ান্টেড এই বত্রিশ জঙ্গীর অন্তত ১৮ জনই বিদেশে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাকি ১৪ জনের মধ্যে অধিকাংশই দেশে ছদ্মবেশে বেনামে আত্মগোপনে আছে। তাদের সম্পর্কে দেশের সব বিমানবন্দর ও সীমান্ত পয়েন্টগুলোতে ছবিসহ তালিকা দেয়া আছে। এছাড়া বিদেশে পলাতক জঙ্গীদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এদের গ্রেফতার করতে পারলে বাংলাদেশে বড় ধরনের জঙ্গী হামলার আশঙ্কা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। সেই সঙ্গে দেশে জঙ্গীবাদের হুজি যুগের মতো নব্য জেএমবির আইএস যুগের অবসান হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক জঙ্গীদের বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে এবং তাদের গ্রেফতার করতে সর্বাত্মক সাঁড়াশি অভিযান চালাতে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে জঙ্গীদের তৎপরতা আছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তা ব্যাপকহারে বিস্তার লাভ করেছিল। পরবর্তীতে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গী হামলায় বনানী থানার ওসি সালাহ উদ্দিন আহমেদ খান ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম ছাড়াও ১৭ বিদেশী ও তিন বাংলাদেশীসহ মোট ২২ জন নিহত হন। সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী পাঁচ জঙ্গীর মৃত্যু হয়। কমান্ডো ছাড়াও সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব জীবিত অবস্থায় ৩৩ জনকে উদ্ধার করে। হামলার দায় স্বীকার করে আইএসের নামে বিবৃতি প্রকাশিত হয়। এমন ঘটনার পর সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশে আইএস জঙ্গীদের তৎপরতা আছে বলে অভিযোগ ওঠে। সরকার বাংলাদেশে যে আইএসের কোন তৎপরতা নেই, তা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীদের অনেকেই, তারা আইএসের অনুসারী বলে দাবি করেছে। সূত্রটি বলছে, দেশের সব গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি বিশেষ তালিকা করা হয়েছে। তালিকা মোতাবেক তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তারা সবাই উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী। দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষে তাদের অবস্থান। আত্মঘাতী জঙ্গী হওয়াদের অধিকাংশই এক সময় জেএমবি এবং পরে নব্য জেএমবি হিসেবে তৎপর। তালিকাভুক্তরা সবাই আত্মঘাতী জঙ্গী। তবে তারা আত্মঘাতী জঙ্গী প্রশিক্ষণ দেশে না বিদেশে নিয়েছে, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য মেলেনি। অধিকাংশই বিদেশে থাকাকালে ইন্টারনেটে নানা উগ্রবাদী বইপুস্তক পড়ে এবং সমমনাদের মাধ্যমে উগ্রবাদী হওয়ার তথ্য মিলেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ওই সূত্রে জানা গেছে, তালিকাভুক্ত মোস্টওয়ান্টেড জঙ্গীদের তালিকায় আছে মোঃ রিদওয়ান ইসলাম তুহিন। তার পাসপোর্ট নম্বর এএফ ৬১৯৮৪২৫। পিতার নাম মৃত তৌহিদুল ইসলাম। মাতার নাম কুলসুম আক্তার কুসুম। বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন কেওয়াবাজার পশ্চিম পাড়ায়। বিদেশে বলে জানা গেছে। আব্দুর রহমান মাসুদ। তার পাসপোর্ট নম্বর এএ ৯৩৯৯৮০৬। পিতার নাম আব্দুল মালেক। বাড়ি ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন টুঙ্গাবাড়ির ২নং সড়কের ৩ নম্বর বাড়িতে। দেশেই আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। ডাঃ আরাফাত-আল-আজাদ ওরফে আবু খালিদ আল বাঙ্গালী ওরফে ডাঃ তুষার। দেশেই বলে জানা গেছে। তিনিই বাংলাদেশে আইএসের হয়ে কর্মকা- চালাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তার পিতার নাম মরহুম ওয়াসিকুর আজাদ। বাড়ি ঢাকার বারিধারা, ডিওএইচএসে। তাহমিদ রহমান সাফি ওরফে আবু ইছা আল বাঙ্গালী। পিতা সাবেক নির্বাচন কমিশনার মৃত সাইফুর রহমান। মায়ের নাম নাসিতা রহমান। বাড়ি ঢাকার নিকুঞ্জ-১ আবাসিক এলাকার ৮/এ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িতে। তার প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাইমুন হাসিব মোনাজ। তার পিতা অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসা। মায়ের নাম হোসনে আরা জয়েস। মোনাসের স্ত্রীর নাম মিশু। বাড়ি বনানী থানাধীন ২৩ নম্বর সড়কের ২২ নম্বর বাড়ির এ/৩ নম্বর ফ্ল্যাটে। তিনি মালয়েশিয়ায় থাকাকালে জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। তার বিষয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। পরিবারের দাবি, তাদের ছেলে মালয়েশিয়ায়ই আছে। তাকে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশে দূতাবাসে তার অবস্থান সম্পর্কে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর কোন রিপোর্ট করেননি। তার অবস্থান বিদেশে। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আরাফাত হাসান খান ২০১৫ সালের আগস্টে ইরাকে আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হন। এ কে এম তুরকিউর রহমান। তার পাসপোর্ট নম্বর এএ ৪৩৬৯৭৮৩। স্ত্রীর নাম মিসেস রিদিতা রাহিলা ইকবালা। তার পাসপোর্ট নম্বর এবি ৬৫৫৫৮০০। মেয়ে রুমাইসা বিনত তাকি (১)। তার পাসপোর্ট নম্বর বিসি ০৭১৯১৮২। শ্বশুর কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ইকবাল। অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করার সময় তুরকিউর জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ার পর অস্ট্রেলিয়া থেকে দেশে ফিরে বিয়ে করেন। এরপর স্ত্রী ও কন্যাসহ ওমরা হজ পালন করার পর ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল সপরিবারে তুরস্কে চলে যায়। শেখ নুরুল্লাহ কাশেমী নামের তুরকিউরের এক ঘনিষ্ঠ ২০১৮ সালে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর তিনিও এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি ও তার পরিবারের কেউ আর দেশে ফেরেননি। দুই বোন সায়মা আক্তার মুক্তা। তার পাসপোর্ট নম্বর এক্স ০১৪৮২০০। তার স্বামীর নাম সিফুল হক সুজন। তারা পরিবার নিয়ে খুলনার ইকবালনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণপার্শ্বে ইকবালনগর রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করত। তার তিন ছেলে আমান শেখ (৬), মোঃ রোমান (৪) ও ওসমান (১)। ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট গর্ভবতী অবস্থায় দুই ছেলেকে নিয়ে মুক্তা ঢাকা থেকে সিরিয়ায় চলে যায়। সিরিয়ায় যাওয়ার কিছু দিন পর তৃতীয় ছেলে ওসমানের জন্ম হয়। মুক্তা যাওয়ার আগেই তার স্বামী সুজন সিরিয়ায় যায়। সিরিয়ায় গিয়ে স্বামীর কাছে ওঠে। মুক্তার সহোদর বোন রাবেয়া আক্তার টুম্পা। তার পাসপোর্ট নম্বর এ ডি ২৯২২৮৪৬। স্বামীর নাম শরিফুল হক ইমন। ইমনের পিতার নাম আব্দুর রব। তারা পরিবারের সঙ্গে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ১ নম্বর গেটের কাছের একটি বাড়িতে থাকত। মুক্তা ও টুম্পার পিতার নাম মৃত সোলায়মান শেখ। বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া থানাধীন বাশবাড়িয়ার পাকুড়তিয়া গ্রামে। মুক্তার স্বামী সুজন আর টুম্পার স্বামী ইমন পরস্পর সহোদর ভাই। সুজন ও ইমনের বড় ভাই ডাঃ আতাউল হক সবুজও জঙ্গী। দুই বোনের পরিবারই বিদেশে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। এ নিয়ে কয়েক বছর ধরেই রীতিমতো শোরগোল চলছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তারা দেশে প্রবেশ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটিএম তাজ উদ্দিন। তার পাসপোর্ট নম্বর এফ ০৫৮৫৫৬৮। পিতার নাম মোঃ আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া। মায়ের নাম তারা বেগম। বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের জসিন বাজারে। তিনিও পলাতক। নজিবুল্লাহ আনসারী। পিতার নাম রফিকুল আনসারী। মায়ের নাম জেসমিন বেগম। স্থায়ী ঠিকানা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানাধীন চকৃতি এলাকার চকমান্দ্রা গ্রামে। আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম। ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। তার পাসপোর্ট নম্বর ৫২৫৮৪১৬২৫। পিতার নাম আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি ঢাকার পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতালের উল্টোদিকে ১৪/এ নম্বর কনকর্ড রিজেন্সিতে বসবাস করতেন। দুই সহোদর ভাই ইব্রাহিম হাসান খান। তার পাসপোর্ট নম্বর এ এফ ৭৪৯৩৩৭৮। অপর সহোদর ভাই জুনায়েদ খান। তাদের পিতার নাম মুনির হাসান খান। বাড়ি ঢাকার বাড্ডাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর লেনের ৬ নম্বর সড়কের অর্সিড গ্যালারির এফ-৩ নম্বর ফ্ল্যাটে। জুন্নুন শিকদার। পাসপোর্ট নম্বর বি ই ০৯৪৯১৭২। পিতার নাম ওয়াহিদুর রহমান। মায়ের নাম রিনা রহমান। বাড়ি ঢাকার ঝিগাতলার মনেশ্বর রোডের ১/৬/সি নম্বর বাড়িতে। জুবায়েদুর রহিম। পাসপোর্ট নম্বর ই ১০৪৭৭১৯। পিতার নাম বজলুর রহিম। মায়ের নাম মৃত ফৌজিয়া ইয়াসমিন। ঢাকার ধানম-ি আবাসিক এলাকার ৯/এ নম্বর সড়কের ৮০ নম্বর বাড়ি। মোহাম্মদ বাসারুজ্জামান। পিতার নাম সিরাজ উদ্দিন। মায়ের নাম বানেছা বেগম। স্ত্রীর নাম শায়লা আফরিন (শশী)। জন্ম ১৯৮৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। বাড়ি ঢাকার তেজগাঁও থানাধীন ৪/সি নম্বর মনিপুরীপাড়ায়। তাওসীফ হোসেন। পাসপোর্ট নম্বর বিই ০৩৫২৭৬১ ও ডব্লিউ ০৫৫৯২২৭। পিতার নাম ডাঃ মোহাম্মদ আজমল। বাড়ি ঢাকার বনানীতে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডাক্তার রোকনুদ্দীন খন্দকার। পাসপোর্ট নম্বর এ এফ ১০১৩০৮৮। পিতার নাম তোহফাতুল ইসলাম। মায়ের নাম হাফিজা খাতুন। স্ত্রী নাইমা আক্তার। পাসপোর্ট নম্বর বিসি ০০০৬৯৩৭। মেয়ে রেজোয়ানা রোকন। পাসপোর্ট নম্বর বিসি ০০৩৫১৯৮। আরেক মেয়ে রামিতা রোকন। পাসপোর্ট নম্বর বিসি ০০৪৫৩৩৯। একমাত্র ছেলে সাদ কায়েস। পাসপোর্ট নম্বর বিএফ ০৪৮৬৬৪২। পরিবারটি খিলগাঁওয়ের বি ব্লকের চৌধুরীপাড়ার ৪১১/বি নম্বর বাড়ির বাসিন্দা ছিল। তারা ঢাকার বাড়ি বিক্রি করে পুরো পরিবার নিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেয়। সূত্রটি জানিয়েছে, আত্মগোপনে থাকা তালিকাভুক্ত জঙ্গীদের মধ্যে জুবায়ের রহিম আশরাফ মোহাম্মদ ইসলামের ঘনিষ্ঠ। এ দুজনই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা যায়। কারণ তারা দু’জনই ধানম-ির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র ছিল। স্কুলটি পরিচালনা করছিলেন জেনিফার আহমেদ নামের হিযবুত তাহরীরের নারী শাখার প্রধান। আর জেনিফারের স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম মাওলা। এই শিক্ষক বাংলাদেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ (পরবর্তীতে বাংলাদেশেও নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের গোড়াপত্তনকারী। সম্প্রতি অনুসন্ধানে জাবের মোহাম্মদ নামের এক যুবকের প্রসঙ্গ এসেছে। তিনি বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের নানাভাবে আর্থিক সহায়তা করেন বলে অভিযোগ আছে। জাবের মোহাম্মদ খ্যাতিমান ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান জাবের জুবায়ের ফেব্রিকসের মালিক। জঙ্গীবাদে জড়িত হওয়ার কারণে তার সঙ্গে তার পরিবারের বিশেষ করে তার পিতার সম্পর্ক নেই। তাদের মূল আস্তানা বনানী ডিওএইচএস মসজিদ বলে জানা গেছে। এছাড়াও তালিকাভুক্ত পলাতক থাকা আরও সাত জঙ্গী হচ্ছে, তৌসিফ (২৪), সাবাব সালাউদ্দিন ওরফে হক ওরফে ইনু (২৫), সালভি আলী ওরফে মালাভি (২৫), রিফাত (২৩), তুরাজ (২৪), ইয়াসিন তালুকদার (২৫) ও গালিব (২৭)। এই সাত জনসহ মোট ১২ জঙ্গী ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শিশু পার্ক ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে হামলার জন্য রেকি করেছিল। ওই সময় পুলিশের হাতে তিন জঙ্গী গ্রেফতার হয়। পালিয়ে যায় নয় জন। পরবর্তীতে হলি আর্টিজানে হামলার পর সেনা কমান্ডোদের অভিযানে পলাতক নিবরাজ ইসলাম নিহত হয়। আর পুলিশের হাতে কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় নিহত হয় পলাতক থাকা সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক। গ্রেফতারকৃত তিন জন রাইয়ান মিনহাজ ওরফে রাইমু ওরফে আরমি (২৪), আহম্মেদ শাম্মুর রাইহান ওরফে চিলার (২৩) ও তৌহিদ বিন আহম্মেদ ওরফে রিয়াজ ওরফে কাচ্চি (২৪)। পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পলাতক থাকা জঙ্গীদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত আছে। অনেক দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হলেও ইরাক, সিরিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে জঙ্গী ইস্যুতে যোগাযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কারাগারে থাকা জঙ্গীদের বিশেষ তালিকা করে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা অব্যাহত আছে। সম্প্রতি জঙ্গীদের তৎপর হওয়ার নানা তথ্য আসছে তাদের কাছে। সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিদেশে পলাতক থাকা জঙ্গীদের দেশে প্রবেশ করা মাত্র গ্রেফতারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর দেশে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে তথ্য আদান প্রদান বাড়ানো হয়েছে। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই যার যার দেশে সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
×