ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ

যোশীর আত্মবিশ্বাসে অনুপ্রাণিত টাইগাররা

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ২৭ জুন ২০১৯

যোশীর আত্মবিশ্বাসে অনুপ্রাণিত টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ ‘আমরা (বাংলাদেশ) কিন্তু এখন আর কোন ফেলনা দল নই।’ বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে ২ জুলাই ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামার আগে প্রচ্ছন্ন হুমকিই দিয়ে বসলেন বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশী। তার এ হুমকিতেতো টাইগাররাও অনুপ্রেরণা পেয়ে যাচ্ছেন। যোশী যে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার। যোশী ২০০১ সালের পর আর ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। ২০১১ সালের পর আর কোন ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলেননি। ২০১২ সালে অবসর নেয়ার পর থেকে কোচিং ক্যারিয়ারের সঙ্গে যুক্ত হন এ সাবেক স্পিনার। শুরুতে ভারতের হায়দরাবাদ ক্রিকেট দল, এরপর জম্মু-কাশ্মীর ক্রিকেট দলের হয়ে সাফল্য পান। ২০১৫ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ওমান ক্রিকেট দলের কোচ থাকেন। ২০১৬ সালে আসাম ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। সবখানেই সাফল্য কুড়ান। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের স্পিন বোলিং পরামর্শক হিসেবে যোশী যুক্ত হন। এখন তিনি স্পিন বোলিং কোচ। তার তত্ত্বাবধানে বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ স্পিনাররা অসাধারণ বোলিং করছেন। আর বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানতো অবিস্মরণীয় সাফল্য দেখাচ্ছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করে নেন। এবার বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সবচেয়ে সেরা নৈপুণ্য সাকিবেরই (৫/২৯)। ভারত ব্যাটসম্যানরা যদিও স্পিনটা ভাল খেলেন। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে স্পিনের বিপক্ষে ভারত ব্যাটসম্যানদের নড়বড়ে দেখা গেছে। তাতে বাংলাদেশ দল সাহসও পাচ্ছে। কারণ দলে সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মতো স্পিনাররা আছেন। যারা টুর্নামেন্টজুড়ে নিজেদের মেলে ধরছেন। এখন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটিতে তা করা গেলেই হলো। যোশীর বিশ্বাস তার দলের স্পিনাররা কাঁপিয়ে দেবেন। তিনি মনে করেন, ‘সাদা বলের ক্রিকেটে আমরা কতটা ভাল তা ইতোমধ্যেই দেখিয়ে দিয়েছি। আমরা আয়ারল্যান্ডে জিতেছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিজেদের মাঠের পাশাপাশি তাদের মাঠে গিয়েও হারিয়েছি। গত তিন বছরে তিনবার আমরা ভারতকে হারানোর খুব কাছে চলে গিয়েছিলাম।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘প্রতিটি দলের শক্তি ও দুর্বলতার জায়গা থাকে। ভারতেরও দুর্বল জায়গা আছে। যে কোন ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য একটি বলই যথেষ্ট। আবার বলছি, আমরা কিন্তু তিনবার ভারতকে হারানোর খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমরা কিন্তু এখন আর কোন ফেলনা দল নই।’ গত বিশ্বকাপে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ভারতের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হারের পর থেকেই বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই অন্যরকম উত্তেজনা তৈরি হয়। যা এখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেও দেখা যায় না। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচেতো উত্তেজনাই থাকে না। একতরফা ভারত শুধু খেলে যায়। আর জিতে। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে খুব সহজে ভারত জিতে যায়, এমন নয়। চরম উত্তেজনা, উত্তাপ থাকে ম্যাচে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে এক ‘নো’ বিতর্কের পরই এ দুই দলের ম্যাচে সবসময়ই উত্তাপ ছড়ায়। এমনই উত্তাপ ছড়িয়েছে যে ২০১৫ বিশ্বকাপের পর যখনই বাংলাদেশ-ভারত খেলা হয়েছে মাঠের বাইরেই যেন বেশি মুখের লড়াই জমেছে। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সফরে এসে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল ভারত। এরপরতো দুই দলের লড়াই আরও জমে উঠেছে। এরপর ভারতের বিপক্ষে আর কোন ফরমেটেই জয় ধরা দেয়নি। তবে ২০১৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের মাটিতে জয়ের একেবারে কাছে গিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে হারে। গত বছর দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। কলম্বোয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও দুঃস্মৃতি মিলে। ভারতের সঙ্গে যখনই খেলা হয়েছে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এবারও তাই থাকছে। সাকিব আগেই বলেছেন ভারতকে হারানো সম্ভব। সাকিব জানান, ‘ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওরা চ্যাম্পিয়ন হতেই এসেছে। ওদের হারাতে আমাদের অনেক ভাল খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস, আমাদের সেই সামর্থ্য আছে। আমাদের কাজটি সহজ হবে না। অভিজ্ঞতা সাহায্য করে বটে তবে অভিজ্ঞতাই শেষ কথা নয়। ভারতকে হারাতে হলে নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে আমাদের। তাদের এমন সব ক্রিকেটার আছেন যারা একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন। যেটা বললাম, নিজেদের সেরাটা দিতে হবে আমাদের এবং আমাদের সামর্থ্য আছে জয়ের।’ সাকিব সাহস দেখান। যোশী তাতে প্রেরণাদায়ী হয়ে হাজির হন। এখন এই প্রেরণা নিয়ে সামনের পথে কাঁটা হয়ে ধরা দেয়া ভারতকে নাস্তানাবুদ করা গেলেই হলো। ভারত ব্যাটসম্যানরা স্পিন যতই ভাল খেলুক, দিনটি যদি বাংলাদেশের হয়ে যায় তাহলে ভারতের ঘাড়ে বিপদ আছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশ যখন প্রথম টেস্ট খেলে, প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সেই ভারত দলে যোশী ছিলেন। তিনি বামহাতি স্পিনের ফাঁদে ফেলেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৩ উইকেট নেন। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন পাঁচ বছর ভারতের হয়ে টেস্ট খেলা এ স্পিনার। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ডুবানো সেই স্পিনার এখন বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ। তার ভাল করেই জানা, কিভাবে ভারত ব্যাটসম্যানদের ঠেকাতে হয়। যতই ভারত ব্যাটসম্যানরা স্পিনে ভাল ব্যাটিং করুক, সেই স্পিন দিয়েই তাদের ঠেকানোর পথও যোশীর জানা। তাইতো যোশী বলেছেন, ‘আমরা সবাই জানি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা স্পিন খেলতে পারে খুব ভাল। আমরা যখন ভারতের বিপক্ষে (প্রস্তুতি ম্যাচে) খেলেছিলাম, আমি ভারতকে নিবিড়ভাবে দেখেছি। আমরা জানি ওদের কোথায় বল করতে হবে। আমরাও কিন্তু স্পিন যথেষ্ট ভাল খেলি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওদের তিন স্পিনারের বিপক্ষে আমরা দুর্দান্ত খেলেছি। ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও কিন্তু আমরা স্পিন ভাল খেলেছি। এখন আমাদের ধারাবাহিক হতে হবে। প্রতিটি ম্যাচেই ভাল করতে হবে। আমরা জানি, ভারতীয় স্পিনারদের খেলার সময় কোন কোন বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে।’ ভারতের সাবেক স্পিনার এখন বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ। সাকিব, মিরাজ, মোসাদ্দেকদের দিয়ে কোন ক্যারিশমা হয়ে গেলেইতো হয়। পাঁচদিনের ছুটি মিলেছে ক্রিকেটারদের। শনিবার থেকে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য অনুশীলন শুরু হবে। এর আগে যোশীর হুমকিতে যে অনুপ্রেরণা মিলছে, সেই প্রেরণা নিয়ে টাইগাররা ২ জুলাই দিনটি নিজেদের করে নিতে পারলেই হয়।
×