ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ইংল্যান্ডের এখন বেহাল দশা!

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ২৭ জুন ২০১৯

  সেই ইংল্যান্ডের এখন বেহাল দশা!

জাহিদুল আলম জয় ॥ হট ফেবারিট হিসেবে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল স্বাগতিক ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের আগে তাক লাগানো ধারাবাহিক সাফল্যই ইংলিশদের ফেবারিটের তকমা দিয়েছিল। শুরুটাও দাপুটে হয়েছিল ক্রিকেটের জনকদের। কিন্তু সাত ম্যাচ খেলার পথে টানা দু’টিতে হেরে সেই ইংল্যান্ডই এখন মহাবিপাকে। এখন অবস্থা এমন যে, অনেক যদি-কিন্তু সামনে চলে এসেছে। নিজেদের বাকি দু’টি ম্যাচে জিততে না পারলে সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিতে হতে পারে ইয়ন মরগানের দলকে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে মিশন শুরু করা ইংলিশরা নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচেই হেরে বসে আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তানের কাছে। অথচ এই পাকিদেরই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে নাকানি-চুবানি খাইয়েছিল মরগানের দল। এরপর টানা তিন ম্যাচে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেমিতে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে স্বাগতিকরা। কিন্তু এরপর থেকেই ছন্দপতনের শুরু। বাজে ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে বসে ইংলিশরা। মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার কাছেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরেছে মরগানের দল। এই দুই ম্যাচে টানা হেরেই এখন মহাবিপদে ইংল্যান্ড। সেমিফাইনাল খেলতে হলে নিজেদের বাকি দুুই ম্যাচে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে তাদের। দু’টি ম্যাচেই ইংলিশদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন প্রতিপক্ষ। আগামী রবিবার খেলবে অন্যতম ফেবারিট ভারত ও ৩ জুলাই নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। টানা দুই ম্যাচে হারের পরও অবশ্য এখনও পয়েন্ট তালিকায় চার নম্বর স্থান ধরে রেখেছে ইংল্যান্ড। সাত ম্যাচে চার জয় ও তিন হারে তাদের ভা-ারে জমা ৮ পয়েন্ট। কিন্তু নিজেদের পরবর্তী দুই ম্যাচে ব্যর্থ হলে ইংল্যান্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের। ৭ পয়েন্ট নিয়ে ইংলিশদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। ৬ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে লঙ্কানরা এবং ৫ পয়েন্ট নিয়ে সাতে পাকিরা। অবশ্য বুধবার রাতে যদি নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাকিস্তান জিতে যায় তাহলে পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে যাবে ১৯৯২ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। কঠিন এমন সমীকরণের মধ্যেও নিজেদের পরের দুই ম্যাচ জিতলে সহজেই সেমিফাইনালের টিকেট পাবে ইংল্যান্ড। এমনকি এক ম্যাচ জিতলেও সম্ভাবনা থাকবে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য ম্যাচের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। জটিল এই সমীকরণ ভালমতোই জানা আছে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগানের। যে কারণে সাবেক ক্রিকেটার ও ইংলিশ মিডিয়ার কড়া সমালোচনার মধ্যেও আশা দেখছেন তিনি। তার মতে, এখনও বিশ্বকাপ ভাগ্য তাদের নিজেদের হাতেই আছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬৪ রানে হারের পর মরগান বলেন, এই ম্যাচ হেরে অনেকদিক থেকেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি। বোলিংয়ে কিছু ভাল দিক ছিল, তবে ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল না। অস্ট্রেলিয়াও অনেক ভুল করেছে। উইকেট বেশ ভাল ছিল, তারপরও মাঝে মাঝে সেটা দুই দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছিল। এই ধরনের বড় ম্যাচে শুরুতেই উইকেট হারানো কখনই কাম্য নয়। কোন জুটিই ব্যাটিংয়ে অবদান রাখতে পারেনি। ম্যাচের আগে উইকেটের যে ধরন ছিল তাতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া ভুল হতো। প্রথম ২৫ ওভার অস্ট্রেলিয়া আধিপত্য দেখালেও আমাদের বোলাররা দারুণভাবে ফিরে এসেছিল। তা না হলে এক সময় মনে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ৩৪০-৩৫০ রানে পৌঁছাবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই হারে সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। এখনও বিশ্বকাপের ভাগ্য আমাদের হাতেই আছে। আশা করছি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। ইংলিশ অধিনায়ক আরও বলেন, ফেবারিট হয়ে ওঠার চাপ আমরা কখনই অনুভব করিনি। এই অবস্থা থেকে আমরা নিজেদের কোথায় নিয়ে যেতে পারি সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ। বাকি দুটি ম্যাচ জিততে পারলে আমাদেরও সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নিজেদের মেলে ধরা। তিন ম্যাচ হেরে যে আত্মবিশ্বাসে বেশ খানিকটা চিড় ধরেছে সেটাও মানছেন মরগান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টুর্নামেন্টের শুরুতে আত্মবিশ্বাস যেখানে ছিল এখন দল সেই পরিস্থিতিতে নেই। শুরুটা দারুণ হলেও আমরা তা ধরে রাখতে পারিনি। তবে এখনও আমাদের সুযোগ আছে। আর তা কাজে লাগাতে সবাই মরিয়া। এদিকে অব্যাহত হারের পর ইংল্যান্ডের সাবেকদের তোপের মুখে পড়েছেন মরগান। বাজে এই অবস্থার জন্য ইংলিশ অধিনায়কেই দায়ী করছেন নাসের হুসেইন, কেভিন পিটারসেন থেকে শুরু করে সাবেক তারকারা। পিটারসেন তো সরাসরি মরগানের দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন। পিটারসেন মনে করেন, ব্যাট হাতে মরগানের কাছ থেকে যে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করা হয়েছিল, তার ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়নি। আর নাসের হুসেইন এক কলামের শিরোনামই দিয়েছেন, ‘স্যরি ইয়ন, ইউ আর রং..., দ্যাট বোলিং ডিসপ্লে ওয়াজ জাস্ট নট গুড এনাফ’।
×