ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দুই বছর ধরে বন্ধ বাগাতিপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন

প্রকাশিত: ০০:৩৬, ২৭ জুন ২০১৯

দুই বছর ধরে বন্ধ বাগাতিপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ ২০১৬ সালে ৫ সেপ্টেম্বর নাটোরের বাগাতিপাড়ায় উদ্বোধন করা হয় তিন তলা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি। আর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন কমান্ডার রশীদুন্নবী বেফিনের মরদেহ এই ভবনটি থেকে উদ্ধারের পর থেকে অদ্যবধি বন্ধ রয়েছে কমপ্লেক্স ভবনটি। কমান্ডার রশীদুন্নবীর মরদেহ উদ্ধারের পর প্রশাসনের নির্দেশে প্রায় ছয় মাস বন্ধের পরে পুনরায় প্রশাসন ভবনটি ব্যবহারের নির্দেশ দিলেও বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ায় ভবনটিতে তালা ঝুলছেই। এছাড়া ভবনটির প্রথম দুটি তলায় দোকান ঘর ভাড়ায় বরাদ্ধ দেওয়ার কথা থাকলেও কার্যকর হয়নি গৃহীত সেই সিদ্ধান্তটি। ফলে প্রায় দুই বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্টরা বঞ্চিত হচ্ছেন এখানকার প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা থেকে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত কমপ্লেক্স ভবনটি এভাবে বন্ধ থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সাধারন মানুষও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ভবনটির রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদির কোন ব্যবস্থা না থাকায় কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করেন বাগাতিপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজাদ হোসেন। এদিকে সমস্যাটি নিরসনে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে দুই কোটি ৭৩ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মাণ শেষ হয়। ২০১৬ সালে ৫ সেপ্টেম্বর তিন তলা বিশিষ্ট কমপ্লেক্স ভবনটি উদ্বোধন করেন সাবেক স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম আজাদ। কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল ভবনটি। প্রায় আট মাস ব্যবহারের পর ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল কমপ্লেক্স ভবন থেকে তৎকালীন কমান্ডার রশীদুন্নবী বেফিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর থেকেই তদন্তের স্বার্থে পুলিশ কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর ওই বছরই ১২ অক্টোবর বাগাতিপাড়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মনিরুল ইসলাম ওই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি ব্যবহারের অনুমতি দেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের চিঠি অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হলে ওই বছরের ২৪ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভবনটি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান। বর্তমানে নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ না থাকায় ভবনটিও আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। প্রায় ২৬ মাস ধরে কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও ভবনটির প্রথম এবং দ্বিতীয় তলার ১২ টি কক্ষ ভাড়ায় বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় কমপ্লেক্স ভবনটিতে এক ধরণের ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বাগাতিপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজাদ হোসেন জানান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ না থাকা এবং ভবনটির রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদিও ব্যবস্থা না থাকায় কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রয়েছে। কমপ্লেক্সটি বন্ধ থাকার ফলে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে উপজেলায় আগত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জন্য নির্মিত ভবনে একত্রিত হতে পারছেন না। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় দাপ্তরিক অনেক বিষয়ই মুক্তিযোদ্ধাদের জানতে বিলম্ব হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শ্যামল কুমার রায় জানান, কেন্দ্রীয় কমান্ড সহ সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ড ভেঙ্গে দেওয়ার পর জেলা পর্যায়ে ডিসি ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অফিস খোলা মেলার বিষয় তারাই নিয়ন্ত্রণ করবেন। তিনি এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান। কমপ্লেক্স ভবনটির ভাড়া বরাদ্দ প্রদান কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, মুলতঃ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ না থাকায় কমপ্লেক্স ভবনটি ব্যবহার হয় না। তাছাড়া স্থানীয়রা দোকান ঘর ভাড়া নেওয়ার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখান না।
×