ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আফগান অলরাউন্ডার মোর্তেজা আলির বাবা মাকে হত্যা করে জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৭ জুলাই ২০১৯

আফগান অলরাউন্ডার মোর্তেজা আলির বাবা মাকে হত্যা করে জঙ্গীরা

অনলাইন ডেস্ক ॥ ক্রিকেটের ‘কপিবুক’ মানেন না। অথচ বাইশ গজে তিনি বেপরোয়া। ব্যাট হাতে এখন শুধু বাউন্ডারি লাইন দেখেন। আর বল হাতে মাঝখানের উইকেটটা। নাম, মোর্তেজা আলি। বত্রিশ ছুঁইছুঁই এই ‘আফগান’ অলরাউন্ডার এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বাইশ গজে। অথচ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই মোর্তেজাই কিশোর বয়সে তালিবান জঙ্গীদের হাতে খুন হতে দেখেছেন নিজের গোটা পরিবারকে। তখন সবে চোদ্দ। প্রাণের ভয়ে শুধু জিন্স আর টি-শার্ট পরে রাতারাতি আফগানিস্তান থেকে পালাতে হয়েছিল মোর্তেজাকে। পালাতে পালাতে ইউক্রেনের একটা শরণার্থী দলের সঙ্গে ভিড়ে গিয়েছিলেন। বমি করতে করতে বরফ-ঢাকা পাহাড় পেরিয়েছেন। তার পর হেঁচড়ে কোনও মতে শরণার্থী শিবির হয়ে ট্রাকের পিছনে চেপে পৌঁছে যান ইংল্যান্ডে। এক সময় ক্রিকেট মাঠেও। কী ভাবে? মোর্তেজা যাঁকে ‘দ্বিতীয় বাবা’ বলেন, সেই রজার মিটি আগাগোড়া গল্পটা শোনালেন। অক্সফোর্ড শহরতলির কামনর ক্রিকেট ক্লাবের তখনও তিনি হেড কোচ। পুরনো দিনের কথা টেনে মিটি বললেন, ‘‘প্রথম বার ওকে যখন ক্রিকেট কিট তুলে দিলাম, মনে হল ও যেন লটারি জিতেছে। ওর ওই আনন্দ কোনও দিন ভুলব না।’’ আর মোর্তেজা নিজে বলছেন, ‘‘কত দূর যাব, জানি না। তবে যখন ক্রিকেট খেলি, অন্ধকার অতীতের কথা মনে রাখতে চাই না।’’ শেষ চারে পৌঁছতে না-পারলেও তাঁর দেশ এ বারের বিশ্বকাপে অনেককেই চমকে দিয়েছে। তা হোক, আফগান জার্সি পরে সেই মঞ্চে যাওয়ার কোনও ইচ্ছেই নেই তাঁর। মোর্তেজার কাছে এখন ঘরবাড়ি ভিন্ দেশের ক্লাবই। ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেট ভালবাসেন তিনি। যে পাড়ায় জন্ম, সেখানেও বল পেটাতেন। তবে ভিন্দেশে আশ্রয় পেয়ে যে ক্রিকেটটাও খেলতে পারবেন, মোর্তেজা ভাবেননি কখনও। ২০০২-এ ইংল্যান্ডে পৌঁছনোর পরে, তাঁকে প্রাথমিক ভাবে ২ বছরের জরুরি ভিসা দেওয়া হয়। কিন্তু বয়স ১৮ ছুঁতেই তাঁকে বলে দেওয়া হয়— এ বার ফেরত যাও। আবার আফগানিস্তান! মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে মোর্তেজার। কিন্তু সে বারও অভিভাবকের মতো দেওয়াল হয়ে দাঁড়ান মিটি। মোর্তেজাকে ইংল্যান্ডেই রেখে দিতে প্রচারের দায়িত্ব নেন তিনি। বাইশ গজে ঢুকে পড়ে রাজনীতিও। বার্তা যায় কাবুলে। সেখান থেকেই ফ্যাক্সে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়— স্বদেশে ফিরলে জীবন শেষ মোর্তেজার। সেই স্বীকারোক্তিতে সই ছিল আলির গ্রামের মোড়ল স্থানীয়দেরও। ঠাঁই নিয়ে এই টানাপড়েনের মধ্যেই মোর্তেজা কিন্তু তখন ইংরেজি শিখছেন। একই সঙ্গে চলতে থাকে ব্যাট-বলের দাদাগিরিও। এক সময়ে তৃতীয় আফগান ক্রিকেটার হিসেবে খেলেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও। তার পর ২০১৩-য় অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে খেলতে গিয়ে সেখানকার কিছু ক্লাবকর্তার নজরে পড়ে যান মোর্তেজা। প্রস্তাব ফেরাতেও পারেননি। পাক্কা ১১ বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে, এখন পাকাপাকি ভাবে অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানেই এক আফগান তরুণীকে বিয়ে করে এখন দুই সন্তানের পিতা। নিজের অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা অতীত নিয়ে বই লিখেছেন ক্রিকেটার— ‘স্টেয়ারিং অ্যাট ডেথ’। আফগান মুলুকে ফেরার ইচ্ছে হয়? উত্তর দিতে গিয়ে একটু যেন উদাস হয়ে যান মোর্তেজা। ইচ্ছে হয়, আবার ভয়ও। কিন্তু ইংল্যান্ডের কথা উঠতেই সেই কৈশোরের উচ্ছলতায় ফিরে যান। বলেন, ‘‘যেখানেই থাকি, অক্সফোর্ডের ওই ক্লাবই আমার আসল বাড়ি। আর কোচ রজার মিটিই আমার দ্বিতীয় বাবা।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×