ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তানভির আহমেদ

ভ্রমণ বদলে দেবে আপনাকে

প্রকাশিত: ০৮:৫১, ৮ জুলাই ২০১৯

 ভ্রমণ বদলে দেবে আপনাকে

ভ্রমণ, মানুষকে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। যখন আপনি বিশ্ব এবং তার মধ্যে মানুষ সম্পর্কে আরও জানবেন, যখন নিজের সীমাবদ্ধতাকে জয় করবেন এবং নতুন কিছু চেষ্টা করবেন তখন আপনি নিজেকে আরও খোলা-মেলা মনের অধিকারী, বহির্মুখী, এবং আত্মবিশ্বাসী মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করবেন। আমি যত ভ্রমণপিপাসী দেখেছি, বিশেষ করে যারা ভ্রমণ করেছেন তাদের আমি ভাল মানুষ হিসেবেই জানি। আমি মনে করি ভ্রমণ মানুষকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। আমার মতে ভ্রমণের শুরুর থেকে শেষটাই বেশি সুন্দর হয়। আমি আত্মভিমানী কিংবা আত্মম্ভরি হয়ে বলছি না, আমি বলছি কারণ আমি বিশ্বাস করি যে ভ্রমণ এমন একটা বিষয় যা আপনাকে কেবল একজন ভাল মানুষই নয় বরং একজন প্রশান্তচিত্তের মানুষও করে। ভ্রমণ মানুষকে এমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে যার সান্নিধ্য সবাই পেতে চায়, সবাই তার প্রতি এক রকম আকর্ষণ অনুভব করে। ভ্রমণ আপনাকে বানাতে পারে ডস ইকুইস গের মতো। ভ্রমণ কিভাবে এবং কেন আপনাকে অসাধারণ করে? সামাজিকভাবে হয় এপার না হয় ওপার হতে হবে। হয় আপনি বন্ধু তৈরিতে আরও দক্ষ হবেন নয়ত একাকী আপনার যাত্রার শেষ হবে, বালিশ জড়িয়ে প্রতি রাতে কাঁদতে হবে। নয়ত আপনি অচেনা মানুষদের বন্ধু বানাতে শিখবেন এবং স্বাচ্ছন্দ্যে নতুন মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করবেন। আমি যখন প্রথম প্রথম ভ্রমণ শুরু করি তখন আমি বেশ লাজুক ছিলাম, যাদের চিনতাম না তাদের সঙ্গে কথা বলতে বেশ ইতস্তত বোধ করতাম। এখন আমি স্বাচ্ছন্দ্যে সবার সঙ্গে কথা বলি যেন আমাদের পরিচয় বহু বছরের। কথোপকথনে পটু ভ্রমণ শুধু আপনাকে অপরিচিতদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কথা বলতেই শেখায় না বরং আপনাকে এ বিষয়ে আরও আন্তরিকও করে বটে। তবে সব সময়ের আলোচনায় একই প্রশ্ন বিরক্তিকর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। কিছুক্ষণ পর দেখবেন কে কোথা থেকে এসেছে, কোথায় যাচ্ছে কিংবা কতদিন ধরে ভ্রমণ করছে যেখানে মানুষ থেকে আছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কতদিন ধরে ভ্রমণ করছে ইত্যাদি বিষয়ে আর কোন আকর্ষণ থাকবে না। এমন প্রশ্নের মাধ্যমে আসলে সেই ব্যক্তির সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। আপনি সংক্ষিপ্ত আলাপেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন এবং সংক্ষিপ্ত পরিসরেই আকর্ষণীয় প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করবেন যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং তা আপনাকে সামনের ব্যক্তিটি সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে। আত্মবিশ্বাসী আপনি বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন, মাউন্ট এভারেস্টে হাইকিং করেছেন। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে ডুব দিয়ে সমুদ্ররাজ্যের সৌন্দর্য দেখেছেন। প্যারিসে সুন্দরী ফরাসী ললনার সঙ্গে নৈশভোজ শেষে ওয়াইনে চুমুক দিয়েছেন, অজানা শহর ভেজে খেয়েছেন, এবং উচ্চতায় আপনার ভয়কেও জয় করেছেন। এক কথায় বলা যায় আপনি মহাভারত জয় করে ফেলেছেন! তাই আরও আত্মবিশ্বাসী না হয়ে আপনি পারবেনই না! এরপরও কিভাবে আপনি আপনার ক্ষমতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না? অনেক কাজ সম্পন্ন করার পর, আপনি আপনার যে কোন কিছু করার ক্ষমতা নিয়ে আরও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হতে বাধ্য। খাপ খাওয়ানো ভ্রমণে আপনাকে ফ্লাইট মিস করা, ধীর গতির বাস, বিলম্ব, রাস্তার বাজে খাবার, এবং আরও বহু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এতে আপনি পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার পরিকল্পনা কিভাবে পরিবর্তন করে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে তা শিখেছেন। আপনি রাগ না করে, ক্ষেপে উন্মাদ না হয়ে শুধু আপনার পরিকল্পনার পরিবর্তন করে এগিয়ে গিয়েছেন। জীবনের বক্র বলের আঘাত পরিবর্তন করে আপনি আপনার গতিতে ছুটেছেন। কারণ আপনি দুর্দান্ত, অপ্রতিরোধ্য। আরও সাহসী আপনি যখন যে কোন কিছু করায় আপনার ক্ষমতার ওপর আস্থা রাখেন তখন আপনি আসলেও সবকিছুই করতে পারবেন। গত সপ্তাহে অস্টিন, টেক্সাসে, মসলাদার খাবার পছন্দ না করা সত্ত্বেও, আমি বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচ এবং কিছু ক্যাপসিকাম খেয়েছি। কেন? কারণ আমি চেয়েছি আমার পুরনো অভ্যাসের শেকল ভাঙতে। আমার মুখ জনমের ন্যায় জ্বলেছিল কিন্তু আমি আবার ওই ঝাল খাবার খেতে চাই। আরও ইতিবাচক ভ্রমণপাগল হিসেবে সব পাগলামিগুলো আপনার জীবনে আরও অনেক পরিবর্তন এনেছে। আপনাকে আরও সহজ এবং প্রাণবন্ত করেছে। কেন? যেহেতু আপনি সেই সকল বাধার মোকাবেলা করেছেন এবং কোনকিছুরই তোয়াক্কা করেননি। আপনি স্রোতের সঙ্গে চলতে শিখেছেন, কারণ ভ্রমণ আপনাকে যে কোন কিছু করার মন্ত্র শিখিয়েছে, তাই সব কিছুর শেষে অপূর্ণতার দরুন মানসিক চাপের কোন স্থানই থাকে না। আকর্ষণীয় মানসিক চাপ মানুষের বয়স সময়ের আগেই বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। ভ্রমণের সময় নিশ্চিন্ত, প্রশান্তি দানকারী রাস্তায় কাটানো দিনগুলো আপনাকে আত্মবিশ্বাসী এবং উদীপ্ত করে! এর দ্বারা আপনার অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার গতি কমে যায় এবং আপনাকে দেখতে আরও তরুণ এবং আকর্ষণীয় লাগে। হয়ে যেতে পারেন জর্জ ক্লুনির মতো। চটপটে ও বুদ্ধিমান ভ্রমণ যদি শুধু আপনার জন্য হোটেলে বসে কোমল পানীয়র ঠান্ডা চুমুকে নিজের মস্তিষ্ক হিমায়িত করার প্রক্রিয়ার নামমাত্র প্রচেষ্টা না হয় তবে আপনি গোটা বিশ্বকে জানার অপার সুযোগ পাবেন। ভ্রমণ আপনাকে জানাবে বিশ্বের সকল অজানা কথা। আপনি জানতে পারবেন মানুষ, ইতিহাস, এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে, এবং এমন কিছু রহস্যঘন জায়গা সম্পর্কে যা কিছু মানুষের নিকট কেবলমাত্র স্বপ্ন। সংক্ষেপে, আপনি জানতে পারবেন মানুষের আচরণ সম্পর্কে এবং কোথাকার কি আচার। যা কিছু বই থেকে শেখা যায় না তা আপনি শুধুমাত্র দেশ-বিদেশের রাস্তায় ঘুরেই শিখতে পারেন। বস্তুবাদ থেকে পরিত্রাণ ভ্রমণে, আপনি আপনার প্রয়োজনীয়তা কি এবং তা কত নগণ্য তা জানতে পারবেন। আপনি বুঝতে পারবেন বড় বড় নামী-দামী দোকানে যা বিক্রি হয়, সুখী ভাবে জীবনযাপনের জন্য তার প্রয়োজনীয়তা কতটাই নগণ্য। বাড়ি ফিরে আপনি নিজেকে মিতব্যয়ী রূপে আবিষ্কার করবেন কারণ আপনি আপনার জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সবকিছুর সঠিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানবেন। তাছাড়া আপনি যতই পাবেন ততই চাইবেন। সুখী ভ্রমণ আপনাকে সুখী হতে শেখায়। প্রতিটা ভ্রমণ শেষে আপনি আরও নিখুঁত, আরও আত্মবিশ্বাসী হবেন, এবং পৃথিবীকে আরও অনন্যসাপেক্ষ জায়গা হিসেবে দেখতে শিখবেন। এরপরও আপনি খুশি না হয়ে পারবেন কি? বিশ্বের সব বিখ্যাত, সফল ব্যক্তিদের সম্পর্কে চিন্তা করুন। এসব গুণাবলীর কতগুলো তাদের মধ্যে আছে ভাবুন? অনেক! কেন? কারণ সামাজিকতা, সাহসিকতা, রসবোধ, পরিতৃপ্ততা এবং আত্মবিশ্বাস হচ্ছে এমন সব গুণ যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মানুষকে সফল বানায়।
×