নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া ॥ দীর্ঘ দুই বছর ধরে শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সংকট ও জনবল সংকটের ইস্যুতে দুই বছর ধরে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। ফলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী সরকারিভাবে চালু রয়েছে ২২৫ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখনো ৪৫ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একশ্রেণীর কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাবে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিট দুই টাকার কম।
সরকার ব্যক্তি মালিকানাধীন কেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনছে, কিন্তু কার স্বার্থে এ কেন্দ্রটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে তা কারো বোধগম্য নয়। শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মরত কর্মচারীরা তাদের পুরনো কর্মস্থল ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ফিরে আসতে চান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রেই ধরে রাখতে চায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকরা ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে এখান শ্রমিকরা আন্দোলনে নামতে পারেন।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সরকার ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেন্দ্রটি হস্তান্তর করা হয় ২০১৭ সালের মে মাসে। এর পর থেকে এখনো পর্যন্ত ওই কেন্দ্র পরিচালনার জন্য পুরোপুরি জনবল নিয়োগ প্রদান করা হয়নি। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রায় ১৫০ জন শ্রমিক ও কর্মচারীকে তাৎক্ষণিক ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের পরিচালনার জন্য স্থানান্তর করা হয়। জনবল নিয়োগের পর এসব কর্মচারীকে ৬০ মেগাওয়াটে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু দুই বছরে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি এবং ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র সচলে তালবাহানা শুরু করে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রে কর্মরত ৬০ মেগাওয়াটের সকল কর্মচারি কর্মবিতরতির হুমকী দেয়। শ্রমিকদের দাবি তাদের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি মানা হয়নি। এদিকে ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে সক্ষম হলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জনবলের অভাবে এ দুই বছর ধরে বন্ধ আছে ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সিবিএ এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, আন্তরিকতা থাকলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এসব কর্মচারীকে বসিয়ে বেতন না দিয়ে ২২৫ ও ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্র সমন্বয় করে পরিচালনা করা যায়।
কিন্তু শুধুমাত্র আন্তরিকতার অভাবে এ কেন্দ্রটি উৎপান সক্ষম হয়েও পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত জনবল রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে তথাযথ তথ্য দেয়া হচ্ছে না এবং এ কেন্দ্রটি চালুর উদ্যোগের অভাব রয়েছে। ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের কর্মচারিরা ২২৫ মেগাওয়াটে আর কাজ করতে রাজি নয়। তারা যেকোন সময় ওই কেন্দ্র থেকে একযোগে ফিরে আসতে পারে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এবং শ্রমিকরা আন্দোলনে নামতে পারে।
শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী (উৎপাদন) ভূবন বিজয় দত্ত বলেন, ৬০ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে ২২৫ মেগাওয়াটে নেয়ার ঘটনা সত্য। তবে এখনো প্রয়োজনীয় জনবল না পাওয়ায় ৬০ মেগাওয়াটের শ্রমিকদের ফেরানো যায়নি। এ কারণে সক্ষমতা সত্ত্বেও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এরই মাঝে দু’বার কেন্দ্রটি চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিল। একবার মিঠা পানি ও অন্যবার সামান্য দ্রুটি দেখা দেয়ায় আর চালু করা যায়নি। এরপর এ কেন্দ্রের প্রতি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়। ৬০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রে এখনো ৪০ মেগাওয়াটের উপরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত এবং খরচ তেল নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক কম।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: