ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুগোপযোগী ভূমি আইন

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ১১ জুলাই ২০১৯

 যুগোপযোগী ভূমি আইন

আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হচ্ছে সেই সুদূর ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ভূমি সংক্রান্ত আইন ও বিধি। নতুন আইন তৈরির পাশাপাশি পুরনো আইন সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আরও গতিশীল ভূমিসেবা প্রদানই এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। উল্লেখ্য, দেশে ভূমিসংক্রান্ত আইন, বিধি, জটিলতা, বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, খাজনা প্রদানে নানা সমস্যা-সঙ্কট তদুপরি দেওয়ানি মামলার পাহাড় ও দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রায় সর্বস্তরের মানুষের অভিযোগের অন্ত নেই। এর পাশাপাশি উৎকোচ প্রদান, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তো আছেই। এসব অবসানের লক্ষ্যেই ভূমি আইন আধুনিক ও সময়োপযোগী করা হচ্ছে। ইতোপূর্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অঙ্গ হিসেবে ভূমি মন্ত্রণালয় অনলাইনে জমির খাজনা ও নামজারি ফি জমা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রাথমিকভাবে যশোরের মনিরামপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে আপাতত এটি চালু করা হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। পরে পর্যায়ক্রমে রাজধানীসহ সারাদেশে চালু হবে এই প্রক্রিয়া। অবশ্য তা কার্যকর হয়নি অদ্যাবধি। এর পাশাপাশি ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কাজও ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা এতদিন ছিল আইন মন্ত্রণালয়ের আওতায়। সে কাজটি সম্পন্ন হলে জমি রেজিস্ট্রেশন ফিও প্রদান করা যাবে অনলাইনে। উল্লেখ্য, দেশের প্রায় সব এসিল্যান্ড অফিসের বিরুদ্ধে অন্তহীন দুর্নীতির অভিযোগটি এক রকম ওপেনসিক্রেট। দেওয়ানি মামলা জটের মধ্যেও অন্যতম ভূমির মালিকানাস্বত্ব। সে অবস্থায় এই প্রধান খাতটি ডিজিটাল করা হলে ঘুষ-দুর্নীতি কমে আসবে নিশ্চয়ই। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনে গ্রামাঞ্চলে ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমতির বিধান থাকলেও সেটি প্রতিপালিত হয় না কোথাও। ফলে কৃষিজমিসহ ভূমির যথেচ্ছ ব্যবহার এমনকি অপব্যবহার বেড়েছে ক্রমশ। যে যেখানে খুশি মর্জিমাফিক গড়ে তুলেছে বসতবাড়ি কিংবা অন্যবিধ স্থাপনা। বাগানবাড়ি, পার্ক এমনকি শিল্প কারখানা। ফলে দিন দিন ভূমি বিশেষ করে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। অনেক স্থানে এমনও দেখা যায় যে, ধানের জমির মাঝখানে অথবা জলাশয় ভরাট করে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন বাড়িঘর। অনেক ক্ষেত্রে নদ-নদীসহ অবৈধ দখলের অভিযোগও আছে। বেদখলে বনভূমিও উজাড় হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, অন্যদিকে ভরাট হয়ে যাচ্ছে জলাশয়, লোপাট হচ্ছে খাসজমি ও বনভূমি। এ রকম একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তা মানার বাধ্যবাধকতা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। সত্য বটে, বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে এবং শহর-বন্দরসহ নানা স্থানে শিল্প কারখানাসহ নানা স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। তবে এসবের অধিকাংশই অপরিকল্পিত, ভূমির ব্যবহার যথেচ্ছ এবং কোথাও বা অবৈধ। সরকারী খাসজমি এমনকি জলাশয়, নদ-নদী দখল করেও চলছে নির্মাণ পর্বের দক্ষযজ্ঞ। তবে ভূমির পরিমাণ যেহেতু সীমাবদ্ধ ও সীমিত, সেহেতু তা অবশ্যই পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহারের দাবি রাখে। সেটাও হতে হবে সুষ্ঠু, সমন্বিত, সর্বোপরি পরিবেশবান্ধব। নতুন ভূমি আইনে তা নিশ্চিত করা গেলে একদিকে যেমন জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার রোধ হবে, অন্যদিকে সুনিশ্চিত হবে উন্নয়নের গতি। অব্যাহত থাকবে খাদ্য নিরাপত্তা। অনলাইনে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে জমির খাজনা, নামজারিসহ রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা সম্পন্ন করা গেলে এসব কাজ অত্যন্ত সহজে হয়রানি ব্যতিরেকে করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কমবে অযথা হয়রানি, সময়ক্ষেপণ ও দুর্নীতি।
×