অনলাইন ডেস্ক ॥ হংকংয়ের বেশ কয়েকটি ‘লেনন ওয়ালের’ কাছে সরকার সমর্থকরা বিতর্কিত বহিঃসমর্পণ বিলটির বিরোধীদের সঙ্গে মারামারিতে জড়িয়েছেন।
বুধবার রাতে শহরটির কৌলুন বে এলাকার একটি ‘লেনন ওয়ালের’ সামনে এক যুবককে একের পর এক ঘুষি মারার দায়ে পুলিশ ৪৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।
ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়ে যায় বলে বিবিসি জানিয়েছে।
একই রাতে ইয়াউ তোং মেট্রো স্টেশনের কাছে অন্য আরেকটি ‘লেনন ওয়ালের’ কাছে বহিঃসমর্পণ বিলের পক্ষে-বিপক্ষে থাকা গোষ্ঠীর মধ্যে মারামারির পর ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিচারের জন্য বাসিন্দাদের চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে আইনের সংশোধনী আনা ওই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে হংকংজুড়ে অসংখ্য ‘লেনন ওয়াল’ তৈরি হয়েছে।
চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগে শিল্পী জন লেননের গ্রাফিতি আঁকা একটি দেয়ালের আদলে হংকংজুড়ে বানানো এসব ‘লেনন ওয়ালে’ রংবেরংয়ের কাগজে প্রতিবাদকারীরা তাদের ক্ষোভ ও দাবির কথা তুলে ধরেছেন।
হংকংয়ের সরকার বিতর্কিত ওই বহিঃসমর্পণ বিলটি স্থগিত ও একে ‘মৃত’ ঘোষণা করলেও আন্দোলনকারীরা বিলটির চিরস্থায়ী প্রত্যাহার চান।
২০১৪ সালের ‘আমব্রেলা মুভমেন্টের’ সময় হংকংয়ে প্রথম ‘লেনন ওয়ালের’ দেখা মেলে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এ দেয়ালগুলোকে ঘিরে সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনা দেখা যাচ্ছিল।
বুধবার রাতে কৌলুন বে’র ওই ‘লেনন ওয়াল’ থেকে ৪৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভের বার্তাগুলো সরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকেই পরে এক যুবককে উপর্যপুরি ঘুষি মারতে দেখা যায়। আক্রান্ত যুবক বার্তা সরাতে হামলাকারীকে বাধা দিয়েছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইয়াউ তোং মেট্রো স্টেশনের কাছে আরেকটি ‘লেনন ওয়ালে’ বহিঃসমর্পণ বিলের বিরোধীরা বার্তা সাঁটতে গেলে বিলের সমর্থকরা তাদের বাধা দেয়। পরে দুই পক্ষই মারামারিতে জড়িয়ে যায়।
পুলিশ পরে ১৮ বছর বয়সী এক তরুণকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়ার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে পুলিশ সদস্যদেরও অন্য এক ‘লেনন ওয়ালের’ বার্তা মুছতে দেখা গেছে। দেয়ালটিতে থাকা বার্তার কয়েকটিতে আন্দোলনকারীরা এক পুলিশ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত তথ্য জুড়ে দিয়েছিলেন; এরপরই পুলিশ বার্তাগুলো মুছে দেয় বলে জানিয়েছে বিবিসি।
১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হস্তান্তরের সময় যুক্তরাজ্য হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল।
এ শহরটির কারণেই চীনকে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থাপনার’ নীতিতে চলতে হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যকে প্রতিশ্রুতি দিলেও নিজেদের ভূখণ্ডভুক্ত হওয়ার পর থেকেই বেইজিং হংকংয়ের গণতান্ত্রিক সংস্কারে বাধা, স্থানীয় নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ও বিরোধীদের ওপর তুমুল দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সমালোচকদের।
চীন শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।