ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাস ধরে অচেতন শিশু সিয়াম

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১১ জুলাই ২০১৯

তিন মাস ধরে অচেতন শিশু সিয়াম

সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ ॥ শিশু সিয়ামের বয়স আট। সবে মাত্র তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। এই অল্প বয়সেই তার মাথায় করা হয়েছে পরপর দুইবার অস্ত্রোপচার। এতেও যেন তার দুর্যোগ কাটছে না। অন্ত্রোপচারের তিন মাস কেটে গেলেও এখনো তার জ্ঞান ফিরেনি। তিনমাসের মধ্যে একবারের জন্যও খোলেনি তার চোখ। চিকিৎসক জানিয়েছে আরেকটি অপারেশন করতে হবে। কিন্তু এতেও তার সুস্থ হবার সম্ভাবনা খুবই কম। এদিকে কখন জেগে উঠবে বুকের ধন এই প্রতীক্ষায় দিন-রাত শিয়রের পাশে বসে আছে মা। ছেলের দু‘চোখ বন্ধ থাকায় ভিজে গেছে মায়ের চোখ। আর বাবা অর্থ যোগাতে না পেরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সিয়ামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের মেরাকোনা গ্রামে। পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মেরাকোনা গ্রামের দরিদ্র সবজি বিক্রেতা গিয়াস উদ্দিন ও গৃহবধু হাদিসা বেগমের শিশু পুত্র সিয়াম। সে স্থানীয় মেরাকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এ বছরের শুরুতেই সিয়াম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তীব্র মাথা ব্যথায় অস্থির হওয়ার পাশাপাশি বমি করা শুরু করে। স্থানীয় চিকিৎসকদের ঔষুধ খেয়ে কিছুটা ভালো হলেও পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে মমেক চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ১২ ফেব্রুয়ারী নিউরোসার্জারী বিভাগের ২০৪ নং ওয়ার্ডের ৪২নং বেডে তাকে ভর্তি করা হয়। ভর্তির সাত দিন পর নিউরোসার্জারী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ইউনিট চিফ ডাঃ সুকৃতি দাস এবং সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ এলিনা শাহনাজের তত্বাবধানে সিয়ামের মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ৪ মার্চ পরিবারের লোকজন তাকে সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু এক মাস পর সিয়ামের মাথায় আবার তীব্র যন্ত্রনা দেখা দেয়। এতে সে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। সিয়ামের বাবা গিয়াস উদ্দিন জানান, ৬ এপ্রিল ছেলেকে নিয়ে তিনি আবারো ঢাকায় যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা সিয়ামের মাথায় টিউমার হওয়ার কথা জানায়। তখন বাড়ি এসে শেষ সম্বল ১০ শতক জমি বিক্রি করে সিয়ামের মাথায় দ্বিতীয় বারের মত অস্ত্রোপচার করান। দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচারের পর থেকে সিয়ামের জ্ঞান ফিরেনি। ২৪ দিন আইসিইউ থাকার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অচেতন সিয়ামকে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করে। অর্থ ফুরিয়ে গেলে এক সময় বাধ্য হয়ে তিনি অজ্ঞান ছেলেকে নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। এ অবস্থায় ২৮ জুন সিয়ামকে ময়মনসিংহের পপুলার ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারে নিউরো ও স্পাইন সার্জন ডাঃ সৌমিত্র সরকারকে দেখানো হলে তিনি পূর্বের চিকিৎসাপত্র দেখে সিয়ামের আরো একটি অপারেশন করার পরামর্শ দেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিয়ামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু সিয়ামকে ঘরের বিছানায় বালিশের উপর ভর করে শুয়ে রাখা হয়েছে। নাকে ও পশ্রাব-পায়খানার রাস্তায় লাগানো রয়েছে নল। পাশেই বসে আছে মা হাদিছা। এসময় কান্নাজরিত কণ্ঠে হাদিছা জানায়, তিনি আশায় আছেন। যে কোনো সময় চোখ খোলবে ছেলে। তাই তিনি সারাক্ষণ ছেলের পাশেই বসে থাকেন। সিয়ামের এ অবস্থায় ব্যতিত প্রতিবেশিরাও। তারা জানায়, মেরাকোনা গ্রামে সিয়ামের মত এত সুন্দর ও সুঠাম চেহারার অধিকারী ছেলে পাওয়া কঠিন। এমন একটি ছেলে তিন মাস ধরে চোখ খোলছে না এটা কেউই মেনে নিতে পারছে না। সিয়ামের চিকিৎসার বিষয়ে নিউরো ও স্পাইন সার্জন ডাঃ সৌমিত্র সরকার বলেন, সিয়ামকে বাচাতে হলে আরেকটি অপারেশন করতে হবে। কিন্তু এতেও তার সুস্থ হবার সম্ভাবনা খুবই কম। জীবন হানি ঘটতে পারে।
×