ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন প্রজন্মের প্রকৌশলী অহনা

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১২ জুলাই ২০১৯

 নতুন প্রজন্মের প্রকৌশলী অহনা

নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আজ সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০১৭ ও ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের মেয়েদের পাসের হারই শুধু নয় মেধা ও মনন বিকাশেও তারা অনেকখানি এগিয়ে। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষার মেয়েদের অভিগমন সময়ের যৌক্তিক চাহিদা। কিন্তু এক সময় শিক্ষক এবং চিকিৎসক হওয়ার অদম্য আকাক্সক্ষায় নারীরা নিজেদের উচ্চ শিক্ষায় সম্পৃক্ত করত। গত ৪ দশক আগেও প্রকৌশলী হিসেবে মেয়েদের স্বচ্ছন্দ বিচরণ সেভাবে ছিল না বলাই যায়। তবে গত শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্ন এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তথ্যপ্রযুক্তির সফল অভিযাত্রায় মেয়েরা প্রকৌশল আঙিনায়ও তাদের অংশীদারিত্বকে জোরালো করে যাচ্ছে। সময়ের মিছিলে অদম্য গতিতে নিজেকে তৈরি করা অহনা আরেফিন বর্তমান প্রজন্মের একজন প্রকৌশলী। ভেতরের উদ্দীপ্ত মনোবল আর সাহস শিক্ষার এই বিশেষ বিষয়ের প্রতি গভীর আগ্রহে সে প্রকৌশলী হতে প্রত্যয়ী হয়। আর সেভাবে নিজেকে এগিয়েও নেয়। এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারের কন্যা অহনা বিশুদ্ধ আবহে নিজের শৈশব-কৈশোর অতিক্রম করে পিতা-মাতার স্নেহবন্ধনে। বাবা ড. সাদেকুল আরেফিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক। মা ড. ইসরাত জাহান রুপা কুষ্টিয়ার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। শিক্ষক ও উচ্চ শিক্ষিত পিতামাতার একমাত্র সন্তান অহনা জীবনটাকে দেখেছে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ সূচকে কিভাবে নিবেদিত হওয়া যায়। বাবা-মাকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনায় এনে শিক্ষা কার্যক্রমকে সেই উদ্দীপনায় নিয়ত শাণিত করতে হয়েছে। পারিবারিক সাংস্কৃতিক বলয় তাকে নান্দনিক কর্মযোগেও আগ্রহী করে তোলে। সঙ্গত কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চাকেও জীবনের অনুষঙ্গ করতে হয়। একদম ছোট বয়সে নানা-নানির স্নেহাতিশয্যে বড় হওয়া অহনার শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয় কুষ্টিয়াতে। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এ্যান্ড কলেজে ভর্তি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। বাবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার কারণে অহনার শিক্ষা জীবনের প্রয়োজনীয় সময়গুলো কাটে ক্যাম্পাসে। ২০১২ সালে সর্বোচ্চ গোল্ডেন ডিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজ থেকে গোল্ডেন-৫ পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। এর পরে উচ্চ শিক্ষায় নিজেকে শুধু সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া। সেই লক্ষ্যে শিক্ষা কার্যক্রমের গন্তব্য নির্ধারিত হয় প্রকৌশলী হিসেবে নিজের ভবিষ্যত জীবনকে গড়ে তোলা। ভর্তি হয় নতুন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজিতে ২০১৫ সালে প্রথম ব্যাচ হিসেবে পুরাকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত ফলাফলে বোর্ড কর্তৃক বৃত্তি পাওয়া এই মেধাবী শিক্ষার্থী প্রকৌশলী হওয়ার দীপ্ত পথপরিক্রমায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বৃত্তি লাভ করে। যা প্রতি সেমিস্টারের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রদান করা হয়। এখানেও অহনা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে। ২০১৫ সালে উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করা অহনা ২০১৯ সালে চূড়ান্ত সেমিস্টারে আশাতীত রেজাল্ট করে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করে। লেখাপড়ার পাশাপাশি চলে তার শৈল্পিক মনন চর্চা। নাটক মঞ্চস্থ করা, গল্প লেখা, কবিতা লেখা ও আবৃত্তিই শুধু নয় উপস্থাপকের যে কোন আনুষ্ঠানিক আয়োজন মুগ্ধতায় ভরে উঠত। বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ওপর রচনামূলক প্রবন্ধ লিখে শীর্ষ স্থানে চলে আসা অহনা সামনের দিনগুলোকেও বিভিন্ন কর্মযোগে পরিপূর্ণ করতে চায়। মেয়েরা আজ যেভাবে নতুন সময়কে অতিক্রম করে যাচ্ছে যা আধুনিকতার সম্প্রসারিত বলয়কেও আয়ত্তের মধ্যে নিয়ে আসছে। যুগ ও কালের বলিষ্ঠ পথিক হিসেবে মেয়েরাও আজ নিজেদের যোগ্যতমভাবে প্রমাণ করে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে, নির্দ্বিধায়। পেছনে তাকানোর সুযোগ আর নেই। অহনার মতো এই প্রজন্মের অন্যরাও দৃঢ়চিত্ত, অসম সাহস আর উদ্দীপ্ত চেতনায় নিজেকে তৈরি করে সমাজ-সংস্কারের আঙিনায় যুগান্তকারী অবদান রাখবে এমন প্রত্যাশা আজ সকলের। উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত সূচকে নারীদের জোরালো অংশগ্রহণ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রার নিয়ামক শক্তি। কারণ অর্ধাংশ এই গোষ্ঠীকে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আঙিনায় সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হলে সমাজ সভ্যতার গতি থেমে যেতেও সময় নেবে না। গতিশীল ও নতুনভাব সম্পদে তৈরি আধুনিক সময়ের সম্প্রসারিত জগতকে পরিপূর্ণভাবে আয়ত্তে নিয়ে আসতে সবাইকে সম্মিলিত হয়ে সামনের দিকে এগুতে হবে।
×