ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিষ্টি মধুর গন্ধে ভরা লটকন বাগান

প্রকাশিত: ১০:২০, ১২ জুলাই ২০১৯

 মিষ্টি মধুর গন্ধে ভরা  লটকন বাগান

বছর ঘুরে আবারও গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু টক মিষ্টি ফল লটকন। সেই লটকনের স্বাদ আর সৌন্দর্য দেখতে দে-ছুট ভ্রমণ সংঘর প্রিয় শুভাকাক্সক্ষী চরউজিলাব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মানিত সভাপতি হুমায়ুন কবির ভাইর আমন্ত্রণে গত শুক্রবার বন্ধুরা ছুটি ঢাকার পাশেই নরসিংদী। গিলাবের গ্রামের বাসিন্দা, ভাঙ্গারটেক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা মনির ভাই আগে ভাগেই কোন কোন বাগানে ঘুরব তা ঠিক করে রেখেছিলেন। কারণ সব বাগানের ফলন একরকম না। আদি ঢাকা থেকে শিবপুর উপজেলার গিলাবের গ্রামে পেঁৗঁছতে সময় লাগলো প্রায় তিন ঘণ্টা। অবশ্য মাঝে ভেলানগর গরুর দুধের সুস্বাদু মালাই চা’য়ের জন্য ছিল বিরতি। ওদিকে বেচারা মনির ভাই, সকাল থেকে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে পুরাই অস্থির। আমাদের পেয়ে তিনি এবার বেজায় খুশী। কুশল বিনিময় শেষে যেতে চাইলাম বাগানে। কিন্তু কার কথা কে শুনে! একরকম জোর করেই নিয়ে চললেন তার বাড়ি। মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হলাম। কারণ ঘুরবাজ মানুষ আমরা- কারো বাসায় বেড়াতে তো আর আসিনি। তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হলো। বাড়িতে ঢুকতেই চোখ সবার কপালে। আরে এটা তো বসত বাড়ি নয় যেন বাগানবাড়ি। বাড়ির আঙ্গিনায় হরেক পদের ফল ও ফুল গাছ। কাচা পাকা লটকন আর বিশাল বিশাল সাইজের কাঁঠাল ঝুলছে গাছে গাছে। কমরে-বুকে হাত দিয়ে ছবি তুলতে পছন্দ করা বন্ধুরাও এবার পুরানা অভ্যাস ভুলে গিয়ে লটকন-কাঁঠালে হাত বুলিয়ে ফটোসেশনে মহা ব্যস্ত। যাই এবার জুমা আদায়ে। নামাজ শেষে জম্পেশ খানাদানা। বেলা প্রায় তিনটা। আর দেরি নয়, বের হয়ে গেলাম বাগান দেখতে। বাড়ি হতে বাগান প্রায় ২ কিলোমিটার। গাড়ি চলছে, অবারিত সবুজের মাঝে পিচ করা সরু পথে। চারপাশ সবুজ আর সবুজ। প্রকৃতি যেন তার সবটুকুন উজাড় করে দিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই পেঁৗঁছাই নির্ধারিত বাগানে। সেখানেও অপেক্ষায় ছিলেন তরুণ শিক্ষক ও লটকন বাগান মালিক ছালাম ভাই। বাগানে ঢুকতেই চোখে ধরা দেয় এক অন্যরকম প্রকৃতি। যতই এগিয়ে যাই ততোই যেন মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। ধীরে ধীরে ডুবে যাই আমরা, শত শত গাছে ঝুলে থাকা লটকনের স্তূপে। যতদূর চোখ যায়, শুধু লটকন আর লটকন। অনুমতি থাকায় আমরা যে যার ইচ্ছে মতো, গাছ থেকে পেরে খাই। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। গোলাকৃতির এই ফল মাত্র এক দশক আগেও অনেক জেলার মানুষের নিকট জঙ্গলি ফল হিসেবে পরিচিত ছিল। থোকায় থোকায় এই ফল একেবারে গাছের গোড়ার প্রায় মাটি স্পর্শ হতে মগডাল পর্যন্ত ধরে থাকে। পাকা ফল হলদে ও অনেকটা জাফরান আর কাচা অবস্থায় প্রায় সবুজ রঙা থাকে। লটকন ফল নানান জেলায় ভিন্ন ভিন্ন নামে ডেকে থাকে। যেমন লটকা, ডুবি, বুবিসহ আরও হরেক নামে। নেত্রকোনা জেলার স্থানীয় মানুষ জনত এক সময় লটকন ফলকে পাগলা গোটা হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। এখন সেই পাগলা গোটা ডুবি বিক্রি করে অনেকেই সংসার চালান। সময়ের আবর্তনে লটকন এখন দেশের অর্থকরী ফসল। দিন শেষে আমরাও নানান গাছের লটকন চেখে, পছন্দ মতো গাছের উৎকৃষ্ট মানের সুস্বাদু লটকন নিয়ে- হুমায়ুন ভাইর বাড়ি চরউজিলাব গ্রমের পথ ধরি। তার বাসায় খাবারদাবারের আরেক এলাহী কা-। খাদ্য তালিকায় আমার পছন্দের নরসিংদীর প্রসিদ্ধ পিঠা ঝিনুক, ফুল পাতা, কাঁঠালিসহ নানান পিঠা থাকায় বেশ পুলকিত হই। ব্যক্তিগতভাবে আমি, এসব পিঠার একজন প্রিয় খাদক। ফলে আনন্দের মাত্রা বেড়ে হয় দ্বিগুণ। ভর সন্ধ্যায় যখন তার আড্ডাস্থল বাড়ির ছাদে উঠি, তখন মনে হলো অতিরিক্ত খাবারে যতটুকুন ক্লান্তি ছিল তা যেন নিমিষেই হলো উধাও। চার পাশে শুধু নানান গাছ গাছালি আর সবজির ক্ষেত। পুরো গ্রামটিই যেন নানান শষ্যের ভান্ডার। বিশাল সবুজ ভূখন্ডের মাঝে আমরা অতিকায় ক্ষুদ্র প্রাণী। মাগরিবের নামাজ শেষে নানান পদের সবজি, কাচা-পাকা কাঁঠাল, ঢেঁউয়া ফলের ঘ্রাণ শুকতে শুকতে গাড়ি ছুটল ঢাকামুখী। যাবেন কী ভাবে : ঢাকার সায়েদাবাদ বা উত্তরা হতে নরসিংদীর মরজাল বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পরিবহন ভেদে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৮০ হতে ১১০ টাকা। কমলাপুর হতে ট্রেনেও মরজাল রেল স্টেশনে নামা যাবে। মরজাল হতে অটো বা রিক্সায় ঘুরে বেড়ান লটকন বাগান।
×