ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুর যেন এক ইউরোপ...

প্রকাশিত: ১০:২১, ১২ জুলাই ২০১৯

 লক্ষ্মীপুর যেন এক ইউরোপ...

ভাবুন তো সাদামাটা একটি গ্রাম যেখানে সকাল থেকেই জীবন যুদ্ধ শুরু হয় খেটে খাওয়া মানুষদের। মা- মাটির গন্ধ যেখানে মিশে থাকে অবিরত। মনে হবে যেন আপনি ফিনল্যান্ড কিংবা জাপানের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু আসলে আপনি আছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক অজোপাড়া গাঁয়ে। যেখানে আধুনিকার ছোঁয়া লেগেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সেখানে আধুনিক পরিবেশে শিক্ষা লাভ করছে শিক্ষার্থীরা। ভোরে আলো ফোটার পর সেখানে পাখির কিচির-মিচিরের শব্দে ঘুম ভাঙে। শিক্ষার জন্য প্রয়োজন একটি সুন্দর এবং মনোরম পরিবেশ। আর তার জন্যই হয়তো মনের মাধুরী মিশিয়ে নির্মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে এমন দৃষ্টিনন্দন বিদ্যাপিঠ কমই আছে যেখানে রয়েছে প্রকৃতির কাছ থেকে বিদ্যা লাভ আর ব্যতিক্রম পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। তবে সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এক বিদ্যাপিঠ চাঁদপুরে অসাধারণ স্থাপনায় নির্মিত ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল এ্যান্ড কলেজ’। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের আধুনিক পদ্ধতিতে পাঠদান করানো হয়। বিদ্যালয় ভবনের চারপাশ খোলামেলা। শুধু শ্রেণীকক্ষগুলোর অর্ধেক উঁচু পর্যন্ত রঙিন টিনসেডে ঢাকা। দিনে সূর্য আর রাতে চাঁদের আলোতে জ্বলজ্বল করে ভবনটি। রয়েছে বাঁশের তৈরি ল্যাম্পশেডও। আছে দুটি আলাদা ওয়াশরুম। খেলাধুলার জন্য শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা সরঞ্জাম। শিশুরা মনের আনন্দে খেলা করে। সবুজ দূর্বাঘাস আর সবুজ পাতার ফাঁকে তারা যেন শৈশবটাকে হাসি, ঠাট্টা আর আনন্দ উপভোগে কাটিয়ে দিচ্ছে। বিদ্যালয়টি এতটাই আধুনিকতার পরশ পেয়েছে যে এর ভেতরের দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে স্থানটিতে। বিদ্যালয় ভবনের পাশেই রয়েছে কারুকার্যখচিত, সুসজ্জিত নান্দনিক জামে মসজিদ। চাঁদপুর জেলা সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে অবস্থিত ব্যতিক্রম এই বিদ্যাপীঠ। দ্বিতল এ ভবনে ছাদে দেওয়া হয়েছে কারুকাজে সজ্জিত সিমেন্ট শীটের ছাউনি। ভবনের মাঝখানে এবং পূর্বপাশে রয়েছে দুটি প্রশস্ত সিঁড়ি। দুই অংশেই আছে প্রশস্ত বারান্দা। নান্দনিক এই স্কুল এবং মসজিদ দেখে বিস্মিত ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে চাঁদপুরের কৃতী সন্তান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ শাহাবুদ্দিন, লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ স্কুল এবং মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ওই বছরই ১১৬ শতাংশ জমি ক্রয় করে নান্দনিক স্কুল ও মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন তিনি। শাহাবুদ্দিন ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পায় ‘শাহাবুদ্দিন স্কুল এ্যান্ড কলেজ’। দু’বছর থেকে স্কুলের কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। এখানে প্লে থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানে প্রায় ১৬৮ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। শাহাবুদ্দিন স্কুল এ্যান্ড কলেজ এর প্রধান শিক্ষক শংকর কুমার সাহা বলেন, ‘আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেন ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করতে পারে, সেই জন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে। দেশের কোথাও এত সুন্দর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখেননি বলে জানালেন এই প্রধান শিক্ষক।’ ‘এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে আগ্রহী। এছাড়া সকল শিক্ষার্থীদের আধুনিক পদ্ধতিতে পাঠদান করানো হয়’, জানালেন শিক্ষকরা। চাঁদপুর শহর থেকে দূরে এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে নান্দনিক স্কুল এবং মসজিদ দেখে সকলেই বিস্মিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ আলোচিত হয়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে ওঠা বিদ্যালয়টির সৌন্দর্য। শিক্ষা গ্রহণের এমন সুন্দর পরিবেশ দেখে দর্শনাথীরা। দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নান্দনিক কারুকাজে সজ্জিত করা হয়, এমনটাই দাবি আগত দর্শনার্থীদের। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে শত শত দর্শনার্থী এখানে আসেন নান্দনিক এই বিদ্যাপীঠ দেখতে। সুন্দর এই পরিবেশে স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরে আনন্দিত বলে জানায় শিশু শিক্ষার্থীরা।
×