ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১২ জুলাই ২০১৯

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

কিছুকাল আগেও ঢাকা ছিল রিক্সার শহর। এই বাহনটি ছাড়া প্রতিদিনের জীবন যেন কল্পনাই করা যেত না। অথচ আজ সব কিছু কেমন বদলে গেছে। বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বর্তমানে রাজধানী ভর্তি বড় লোকে। বাড়িওয়ালা গাড়িওয়ালার অভাব নেই। বহুগুণে বেড়েছে গণপরিহনের সংখ্যা। নতুন এই বাস্তবতায় রিক্সার টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। সড়কে বিশৃঙ্খলা, যানজট ইত্যাদির জন্য অযান্ত্রিক বাহনটিকে ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়। ক্রমে ঢাকাকে রিক্সামুক্ত করা হবে। সে লক্ষ্যে অনেকদিন ধরেই কাজ হচ্ছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে নতুন তিনটি রুটে রিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন আদেশ জারি করে- খিলক্ষেত থেকে রামপুরা হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত আসা-যাওয়ার রাস্তাটিতে আর রিক্সা চলবে না। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তার বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। রিক্সা নিষিদ্ধ করা হয় মিরপুর রোডেও। গত রবিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু যত সহজে কার্যকর করা যাবে ভাবা হয়েছিল, ততটা সহজ হয়নি। বরং রিক্সা বন্ধের প্রতিবাদে ওইসব রাস্তায় বড় প্রতিবাদ গড়ে উঠতে দেখা যায়। সোম ও মঙ্গলবার খিলগাঁও, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রিক্সাচালক ও মালিকরা। সকাল থেকেই সড়কে অবস্থান নিতে শুরু করেন তারা। ফলে খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হন। আন্দোলনের প্রভাব পড়ে রাজধানীর অন্যান্য সড়কেও। রিক্সা চালকরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রেণী। অসংগঠিত। এর পরও এমন প্রতিবাদ গড়ে তোলার ঘটনায় অনেকে অবাক হয়েছেন। চোখ বড় করে তাকিয়েছেন টেলিভিশনের দিকে। অবশ্য টানা দুই দিন বিক্ষোভ দেখানোর পরও কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মালিবাগ পর্যন্ত রিক্সা চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অনড় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। বুধবার রিক্সা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে সভার পর মেয়র আতিকুল ইসলাম এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক যানবাহন একসঙ্গে চলাচল করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ কারণেই রিক্সা বন্ধের সিদ্ধান্ত। উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার সড়কের মাত্র ১৫ কিলোমিটার এলাকায় রিক্সা বন্ধ করা হয়েছে বলে তথ্য দেন তিনি। অন্য রাস্তাগুলোর নিষেধাজ্ঞাও সরছে না বলেই জানা গেছে। এদিকে, রিক্সা বন্ধে তৎপরতা চললেও, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে কোন উদ্যোগ নেই। ব্যস্ত রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে চালক বা মালিক উধাও হয়ে যাচ্ছেন। ফুটপাথে গাড়ি রেখে দিব্যি অফিস করছেন কোট টাই পরা ভদ্রলোক। শপিং করছেন। এ নিয়ে আগে অন্তত কিছু কথা হতো। এখন তাও হয় না। সবাই মেনে নিয়েছেন ধরে নেয়া যায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশ মোটারসাইকেল চালকদের মাথায় হেলমেট পরাতে পেরেছে। রিক্সাচালকদের উড়ুতে বেতের বাড়ি বসিয়ে দিচ্ছেন যখন তখন। কিন্তু গাড়ির বেলায় মুখে রা নেই। যত্রতত্র পার্কিং বন্ধে এমনকি হাইকোর্টকে কথা বলতে হয়েছে। তাতেও কোন উন্নতি চোখে পড়ছে না। যে যেখানে খুশি গাড়ি ফেলে রেখে অন্যের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন। কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের কাওরান বাজার অংশে মেট্রোরেলের পিলার বসানোর কাজ চলছে এখন। রাস্তাটি সঙ্গত কারণেই সরু হয়ে গেছে। অথচ সরু রাস্তার ওপর একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়ি। এমনভাবে ফেলে রাখা হচ্ছে যে দেখে মনে হতে পারে ব্যক্তিগত গ্যারেজ। কাঁঠালবাগান ঢাল সংলগ্ন রাস্তার ওপরও দুটি টেলিভিশনের গাড়ি সারাদিন ফেলে রাখা হয়। যানজটের মানুষ যখন হেঁটে পার হতে পারে না তখন মাইক্রোবাস ফেলে রাস্তা আটকে রাখা হচ্ছে। দেখার কেউ নেই। আর নিউ ইস্কাটন এলাকার বেলায় তো মোটরপার্টসের ব্যবসাই শেষ কথা। বাংলামোটর থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত ফুটপাথ তাদের দখলে। এসব নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপ নেই। তাহলে আর শুধু রিক্সা ঠেলে কী হবে? হরতাল প্রসঙ্গ। অনেকদিন পর হরতাল ডাকা হলো। রাজধানীবাসী এই কর্মসূচীটির কথা নিশ্চিত ভুলে গিয়েছিলেন। মনে করিয়ে দিল বাম রাজনৈতিক দলগুলো। গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে রবিবার অর্ধদিবস হরতাল ডাকে বাম গণতান্ত্রিক জোট। হরতালের পক্ষে সকালে পিকেটিংয়েরও চেষ্টা করেছে তারা। সজাগ ছিল পুলিশও। ফলে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।
×