ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গৃহকর্মীকে গরম ইস্ত্রি ও লোহার রড দিয়ে ছ্যাঁকা

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ১২ জুলাই ২০১৯

 গৃহকর্মীকে গরম ইস্ত্রি ও লোহার রড দিয়ে  ছ্যাঁকা

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন কচুক্ষেত এলাকার এক বাসায় পাষন্ড গৃহকত্রীর নির্দয় নির্যাতনের শিকার হয়েছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গৃহকর্মী লিমা আক্তার (১৭)। গৃহকত্রীর গরম ইস্ত্রি ও লোহার রডের ছ্যাঁকায় মারাত্মক দগ্ধ ও ক্ষত-বিক্ষত লিমাকে বুধবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লিমা ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের কচুক্ষেত এলাকার চৈতালি ভবনের ১/ডি নম্বর বাসায় কাজ করত বলে জানায়। নির্যাতনের শিকার লিমার অবস্থা খারাপ দেখে গত ৯ জুলাই বুধবার ময়মনসিংহের বাসে তুলে দেয় গৃহকত্রী। লিমা জানায়, গ্রামের প্রতিবেশী আছিয়া বেগমের মাধ্যমে গত রমজান মাসের এক তারিখে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনের কথা বলে এক বছরের জন্য কাজে দেয় ওই বাসায়। কাজে যোগদানের পর থেকেই তার ওপর নির্যাতন শুরু করে গৃহকত্রী। ময়মনসিংহ মেডিক্যালের কর্তব্যরত চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ এম কে এ আজাদ জানান, নির্যাতনের চেয়ে মানসিকভাবেই বেশি ভেঙ্গে পড়েছে লিমা। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে হালুয়াঘাট উপজেলার দর্শা গ্রামের হাবিবুর রহমানের কন্যা লিমা আক্তারকে বাসায় ভাল কাজ ও বেতনের প্রলোভন দিয়ে পাশের বাড়ির আছিয়া আক্তার ঢাকায় নিয়ে যায়। এর ২০ দিন পর পরিবারের লোকজন জানতে পারে লিমা ঢাকায় এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করছে। পরবর্তীতে আছিয়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে লিমাকে আরও বেশি বেতনে ঢাকায় কচুক্ষেতের ‘মাহা’ নামে এক গৃহিণীর বাসায় কাজে দেয়। গৃহকর্তা বেঁচে নেই। তার নাম বলতে না পারলেও লিমা জানায়, গৃহকত্রী মাহার দুই পুত্র সন্তান ইফাজ ও ওয়াদা রয়েছে। লিমা কাজে ধীর গতি হওয়ায় গত প্রথম রমজানের দিন থেকে তার ওপর নির্যাতন শুরু করে ওই গৃহকত্রী। এরপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। এসময়ে তালা দিয়ে আঘাত করে লিমার একটি দাঁত ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। পুরো শরীর গরম খুন্তি ও রডের ছ্যাঁকায় ক্ষত-বিক্ষত। এখনও দগদগে দাগ আর কাঁচা ক্ষতের চিহ্ন দৃশ্যমান লিমার শরীরজুড়ে। এমতাবস্থায় গত মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে হালুয়াঘাটের একটি বাসে লিমাকে তুলে দেয় গৃহকত্রী। বাড়িতে পৌঁছার পর পরিারের সদস্যরা বুধবার বিকেলে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। লিমার মা লিপি আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানায়, তিনি এই নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। হালুয়াঘাট থানার পুলিশ স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, এই ঘটনায় লিমার বাবা হাবিবুর রহমান অভিযোগ জমা দিয়েছেন। অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি।
×