ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রবিবার ফাইনালে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়াকে সহজেই হারিয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১২ জুলাই ২০১৯

 অস্ট্রেলিয়াকে সহজেই হারিয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দীর্ঘ ২৭ বছরের অপেক্ষার শেষ হলো। দুর্দান্ত এক জয়ে আবারও ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড। বৃহস্পতিবার বার্মিংহামের এজবাস্টনে হওয়া দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে তারা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অসিদের কোন পাত্তাই দেয়নি ইংলিশরা। রবিন লীগ পর্বে ৬৪ রানে হারের প্রতিশোধ নিয়ে তাদের দুঃখে ভাসাল ইয়ন মরগানের দল। আগে ব্যাট করে ইংলিশ পেসারদের তোপে ৪৯ ওভারে মাত্র ২২৩ রানেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ৩২.১ ওভারে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ২২৬ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম আবার ফাইনালে পা রাখল তারা। ১৯৭৯ ও ১৯৮৭ সালের পর সর্বশেষ ২৭ বছর আগে ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল তারা। আর গত বিশ্বকাপসহ ৫ বার শিরোপা জেতা অসিদের বিদায় ঘটল সেমি থেকে। আগামী রবিবার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। প্রথম সেমিতে কিউইরা ১৮ রানে হারিয়েছিল ভারতকে। এর আগে কিউই-ইংলিশদের কেউ শিরোপা জিততে পারেনি। অর্থাৎ প্রথমবারের মতো নতুন চ্যাম্পিয়ন পেতে যাচ্ছে মর্যাদার বিশ্বকাপ। কারণ, নিউজিল্যান্ডও এর আগে শিরোপা জিততে পারেনি। মাত্র ২২৪ রানের লক্ষ্যে নিজেদের প্রিয় মাঠ এজবাস্টনে নামে ইংল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতেই জেসন রয় আর জনি বেয়ারস্টো অসি বোলারদের ওপর চড়াও হন। প্রথম পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারেই তারা ৫০ রান তোলেন। এই জুটি ১২৪ রান যোগ করে। বেয়ারস্টো কিছুটা ধীরস্থির হলেও অসি বোলারদের নাজেহাল করে এগিয়ে যান রয়। তিনি মাত্র ৫০ বলেই ফিফটি তুলে নেন। চলতি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক তার প্রথম ৩ ওভারে ২৩ এবং দ্বিতীয় স্পেলে ১৫তম ওভারে এসেই ১৫ রান দেন। সেই ওভারে দলীয় রান ১০০ ছুঁয়ে ফেলে ইংলিশরা। স্টার্ক- জেসন বেহরেনডর্ফ আর প্যাট কামিন্সের দুর্দশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে স্টিভেন স্মিথকে আক্রমণে আনেন অসি অধিনায়ক ফিঞ্চ। তিনি ১৬তম ওভারে ২১ রান দেন। ওই ওভারের শেষ তিন বলেই ছক্কা হাঁকান রয়। তবে পরের ওভারেই স্টার্ক প্রথম সাফল্য এনে দেন অস্ট্রেলিয়াকে। ৪৩ বলে ৫ চারে ৩৪ রান করা বেয়ারস্টোকে এলবিডব্লিউ করে দেন তিনি। ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গে যায়। স্টার্ক এই উইকেট নেয়ার মাধ্যমে এক আসরে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বাধিক ২৭ উইকেট শিকারের নতুন রেকর্ড গড়েন। এর আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে তার স্বদেশী কিংবদন্তি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা ১১ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে পূর্বের রেকর্ডটির মালিক ছিলেন। স্টার্কের ওই আঘাত হানার পর যেন কিছুটা জেগে ওঠে অসিরা। দুই ওভার পরেই কামিন্স সাফল্য পান। মাত্র ৬৫ বলে ৯ চার, ৫ ছক্কায় ৮৫ রান করে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সাজঘরে ফেরেন রয়। কিন্তু এতে করে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি ইংলিশরা। রুট আর মরগান সাবলীল ভঙ্গিতে খেলেছেন পুরোপুরি চাপমুক্ত হয়ে। তারা অবিচ্ছিন্ন থেকে আরও ৭৯ রান যোগ করেন মাত্র ৭৫ বল থেকে। ফলে ১০৭ বল হাতে রেখেই ফাইনালে পা রাখে ইংল্যান্ড। ৩২.১ ওভারে তারা ২ উইকেট হারিয়ে ২২৬ রান তুলে টপকে যায় অস্ট্রেলিয়ার মামুলী সংগ্রহ। রুট ৪৬ বলে ৮ চারে ৪৯ ও মরগান ৩৯ বলে ৮ চারে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন। স্টার্ক পুরো আসরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে বোলিং করে ৯ ওভারে ৭০ রান দিয়ে ১টি ও কামিন্স ৭ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন। ফাইনালে ওঠার উচ্ছ্বাসে ভাসে অন্যতম ফেবারিট ইংল্যান্ড। অথচ রবিন লীগ পর্বে এই অসিদের কাছেই ৬৪ রানে হেরে সেমিতে ওঠা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল মরগানদের। প্রতিশোধটা একেবারে মোক্ষম জায়গায় এসেই নিয়ে নিল তারা। যার কারণে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিদায় ঘটল। দুর্বার অসিরা লীগ পর্বে ৯ ম্যাচে ৭ জয়ে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে সেমিতে উঠেছিল। কিন্তু ক্রিকেট মাঠের চিরশত্রু ইংলিশদের কাছেই বড় রকমের ধরা খেয়ে গেল দুরন্ত দলটি। এর আগে টস জিতে টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ৪৯ ওভারে ২২৩ রানেই গুটিয়ে যায়। এজবাস্টনের মাঠটি আকৃতিতে ছোট। আর শুকনো, খটখটে উইকেটে টস জিতেই অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক এ্যারন ফিঞ্চ ব্যাটিং নিয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই তিনি নিজে আর্চারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন। অথচ প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ওকসকে চার হাঁকিয়ে দারুণ শুরু করেছিলেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। অধিনায়ক ফিঞ্চকে হারানোর কষ্ট ভোলার আগেই দ্বিতীয় আঘাতে কেঁপে ওঠে অসিরা। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ওকসকে হাঁকাতে গিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো জনি বেয়ারস্টোকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ওয়ার্নার (৯)। দলীয় ১৪ রানে পিটার হ্যান্ডস হঠাৎ পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে না পেরে সাজঘরে ফেরেন (৪)। দুরন্ত ওকস বোল্ড করে দেন তাকে। ১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা অসিদের হয়ে হাল ধরেন স্মিথ ও ক্যারে। কিন্তু অষ্টম ওভারে ক্যারে ব্যক্তিগত ৪ রানের সময় আর্চারের বলে আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হলে শিউরে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়ার তাঁবু। তবে শুশ্রƒষা নিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যান ক্যারে। আহত চিবুক নিয়েও চতুর্থ উইকেটে ১০৩ রানের বড় জুটি গড়েন তিনি স্মিথের সঙ্গে। তখন ভাল কিছুর আশা করছিল অসিরা। ইনিংসের ২৮তম ওভারে দারুণ খেলতে থাকা ক্যারে লেগস্পিনার আদিল রশিদকে ফ্লিক করতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড উইকেটে দাঁড়ানো বদলি ফিল্ডার জেমস ভিন্সের হাতে। ক্যারে ৭০ বলে ৪ চারে ৪৬ রানে বিদায় নেয়ার পর মার্কাস স্টয়নিসও (০) সেই ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন। রশিদের বলটি তার থাই প্যাডে আঘাত হানলেও আম্পায়ার আউট দেন, কিন্তু রিভিউ না থাকায় সাজঘরের পথেই হাঁটতে হয় স্টয়নিসকে। ষষ্ঠ উইকেটে স্মিথের সঙ্গে দারুণ খেলছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু তিনিও ২৩ বলে ২ চার, ১ ছক্কায় ২২ রান করে ফিরতি স্পেলে আসা আর্চারের শিকার হন। এর ৩ ওভার পরেই প্যাট কামিন্স (৬) তৃতীয় শিকার হন রশিদের। একাই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন স্মিথ। তিনি অর্ধশতক হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যেতে থাকেন, দলকেও টেনে নিতে থাকেন। মিচেল স্টার্ক তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে অষ্টম উইকেটে ৫১ রান যোগ করেন। তবে লেগ বাই নিতে গিয়ে উইকেটরক্ষক জস বাটলারের সরাসরি থ্রোতে রানআউট হয়ে যান স্মিথ। তিনি ১১৯ বলে ৬ চারে ৮৫ রান করেছিলেন। ওকসের করা পরের বলেই স্টার্ক ৩৬ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ২৯ রান তুলে সাজঘরে ফেরেন। শেষ পর্যন্ত ১ ওভার বাকি থাকতেই মাত্র ২২৩ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। রশিদ ও ওকস ৩টি করে এবং আর্চার ২টি উইকেট নেন। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া ইনিংস- ২২৩/১০; ৪৯ ওভার (স্মিথ ৮৫, ক্যারে ৪৬, স্টার্ক ২৯, ম্যাক্সওয়েল ২২; ওকস ৩/২০, রশিদ ৩/৫৪, আর্চার ২/৩২)। ইংল্যান্ড ইনিংস- ২২৬/২; ৩২.১ ওভার (রয় ৮৫, রুট ৪৯*, মরগান ৪৫*, বেয়ারস্টো ৩৪; কামিন্স ১/৩৪, স্টার্ক ১/৭০)। ফল ॥ ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ ক্রিস ওকস (ইংল্যান্ড)।
×