ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা, ব্যাপক প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১২ জুলাই ২০১৯

১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা, ব্যাপক প্রস্তুতি

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ভারী বর্ষণে ও উজান থেকে আসা ঢলে ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। দুর্গত জেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিকটন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং দুই কোটি ৯৩ লাখ নগদ টাকা। দুয়েক দিনের মধ্যে এসব জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু এবং মেডিকেল টিমের পৌঁছে যাবে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান। সচিবালয়ে শুক্রবার আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিমন্ত্রী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এবং নীলফামারী জেলায় বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে। ভারতে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশে যমুনা নদীতে পানি আরও বাড়বে। পাশাপাশি বিহারে গঙ্গার পানি বাড়ায় বালাদেশে পদ্মা অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের নদনদীগুলোর ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যে ২৬টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সেসব পয়েন্টে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ৫৫১টি সেন্টারকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জামালপুরে ভাঙনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে এবং লালমনিহাটে তিস্তা নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, এগুলো মোকাবেলায় কাজ শুরু হয়েছে। ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, যেসব জেলা দুর্গত হতে পারে সেগুলোর পাশাপাশি অন্য জেলাগুলোতেও সমান প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। “প্রতিটি জেলায় দুই হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। একটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, তেল, আটা, মসুরের ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের সাত দিনের খাবার রয়েছে।” এখন পর্যন্ত দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং দুই দফায় সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিক টন চাল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে জানিয়ে শাহ কামাল বলেন, কোনো জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেওয়া হবে। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল টিম গঠন করেছে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রেখেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি দপ্তর বন্যা মোকাবেলায় যেসব প্রস্তুতি নিয়েছে সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এনামুর। তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সব ধরনের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে যাতে পানিবাহিত রোগ বিস্তার রোধ করা যায়। খাদ্যগুদামের কর্মরতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। “আমরা আশা করি, এই বন্যায় আমরা মানুষের জীবন রক্ষা করতে তো পারবই, গবাদিপশু এবং খাদ্যশষ্যেরও নিরাপত্তা দিতে পারব।“ প্রতিমন্ত্রী জানান, রবিবার থেকে ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে সব ডিসি ঢাকায় থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত ডিসি হিসেবে যারা দায়িত্বে থাকবেন তাদের কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। “আমরা আশা করি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিবারের মত বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সফল হব।” প্রতিমন্ত্রী জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জায়গার অভাব হলে ব্যবহারের জন্য দুর্গত এলাকাগুলোতে ৫০০টি করে তাঁবু পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক তাবুতে ২০ জন করে থাকতে পারবে। প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান ছাড়াও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তারা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
×