ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ১৩ জুলাই ২০১৯

জলবায়ু সচেতনতা

জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠ শিক্ষক- এমন অভিমত জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের। বুধবার ঢাকায় এ কথা বলেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দু’দিনব্যাপী জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়ে গেল রাজধানীতে। সেখানে একজন আন্তর্জাতিক নেত্রী হিসেবেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। সঙ্গত কারণেই তিনি বিশ্বনেতৃবৃন্দের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বান জলবায়ু পরিবর্তনের বিস্তৃতি এবং এর বিরূপ প্রভাব প্রশমনে নিজেদের সক্রিয় উদ্যোগ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান। আমরা আশা করতে পারি বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ঢাকার এই সময়োপোগী আহ্বানকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানবসমাজ যে সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে, সেকথা বারবার আলোচিত হচ্ছে। মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণেই প্রকৃতি এখন তার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত এই পৃথিবী কোনদিকে যায়, সেটা হলফ করে কেউই বলতে পারেন না। তবে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং মৃত্যুও আগে-আগে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই ধরিত্রী মনুষ্য বসবাসের উপযুক্ত থাকবে বড়জোর আর কয়েকশ’ বছর। তাই মানবসমাজ যদি নিজেদের মহাবিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে চায় তাহলে তাদের সামনে একটা পথই খোলা। গ্যালাক্সিতে নতুন আবাসের সন্ধান করে সেখানে উড়ে যেতে হবে। বর্তমান সময়ে আমরা দেখছি তুষারে তুষারে ঢেকে যাচ্ছে ইউরোপ। হিমঝড় ও তীব্র তুষারপাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। আবার উচ্চ তাপমাত্রার কবলে পড়ে মানুষ হাঁসফাঁসও করছে, ছড়িয়ে পড়ছে দাবানল। বিজ্ঞানীদের মতে, ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। পৃথিবী হলো মানুষসহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবীই একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত। তবে বর্তমানে জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি, বনভূমি হ্রাস, দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিবিধ কারণে চির চেনা বসবাসযোগ্য পৃথিবী নামক এই গ্রহটি তার প্রাণ ধারণের ক্ষমতা ক্রমেই হারাতে বসেছে। ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ক্রমেই উষ্ণতা বাড়ছে, বিগত ২০১৬ সাল ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই আশঙ্কা জলবায়ু বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর ২০১০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, এ্যাসেসমেন্ট অফ সি লেভেল রাইজ অন বাংলাদেশ কোস্ট থ্রু ট্রেন্ড এ্যানালাইসিস অনুযায়ী বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতিবছর ২১ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল এবং নিম্নাঞ্চলসহ প্রায় এক পঞ্চমাংশ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯ জেলার ৭০ উপজেলার প্রায় চার কোটি লোক প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবু মানুষ আশা নিয়ে বাঁচে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষকে নতুন করে অভিযোজনের পরীক্ষা দিতে হবে। তাতে উত্তীর্ণ হওয়ার পথ খুঁজে বের করতেই হবে। পরিবেশ আন্দোলন এ মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী একটি সাধারণ বিষয়। তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশের নেতিবাচক পরিবর্তন মানুষের অনুভূত হয় না বলে অনেকে বিষয়টি উপেক্ষা করে যান। জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে এটির মোকাবেলা করতে হবে আন্তর্জাতিকভাবেই। তবে স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু ট্রাস্ট তহবিল আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে।
×