ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ জাহাজকে নাস্তানাবুদ করার জের ॥ ইরানী জাহাজ না ছাড়লে মারাত্মক পরিণতি- তেহরান

নিরাপত্তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র ॥ উপসাগরে তেলবাহী ট্যাঙ্কার

প্রকাশিত: ০৯:১২, ১৩ জুলাই ২০১৯

নিরাপত্তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র ॥ উপসাগরে তেলবাহী ট্যাঙ্কার

পারস্য উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী তেলবাহী জাহাজগুলোকে নিরাপত্তা দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। পারস্য উপসাগরে সম্প্রতি ইরানের তিনটি নৌযান একটি ব্রিটিশ ট্যাঙ্কারকে নাস্তানাবুদ করার পর ওয়াশিংটন এই চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর জানায়, পারস্য উপসাগর দিয়ে চলাচলকারী সকল তেলবাহী জাহাজকে সামরিক নিরাপত্তা দেয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মার্কিন জয়েন্ট চীফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলে দেশটির সিনেট আর্মড সার্ভিস কমিটিকে বলেন, পারস্য উপসাগর দিয়ে চলাচলরত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে সামরিক ও নৌবাহিনী নিরাপত্তা প্রদান করবে। আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খবর এএফপি, গার্ডিয়ান ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। সম্প্রতি পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ইরানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ইরান সর্বশেষ ব্রিটেনের তেলবাহী জাহাজকে নাস্তানাবুদ করলে নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়। ব্রিটিশ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, তাদের তেলবাহী জাহাজ ‘ব্রিটিশ হেরিটেজকে ইরানের তিনটি নৌযান এক প্রকার নাস্তানাবুদ করে। পরে ইরানের জাহাজগুলোকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। এই ব্রিটিশ কর্মকর্তা ইরানের এ ধরনের কর্মকান্ডকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’ বলে বর্ণনা করেন। ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজ আটকানোর চেষ্টার বিষয়টি অস্বীকার করে ইরান। গত সপ্তাহে জিব্রাল্টারের কাছে ইরানের একটি তেলবাহী জাহাজ আটকের পাল্টা জবাব দেয়ার হুমকি দিয়েছিল তেহরান। খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের হেরিটেজ নামক জাহাজটি পারস্য উপসাগর থেকে হরমুজ প্রণালীর দিকে যাওয়ার সময় সেটিকে আটকানোর চেষ্টা করা হয়। ব্রিটিশ ফ্রিগেট এইচএমএস মন্ট্রুুজ তেলবাহী জাহাজটিকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় জাহাজটির কামান ও বন্দুক ইরানের জাহাজগুলোর দিকে তাক করা হয়। এর আগে তারা ইরানের জাহাজগুলোকে ফিরে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে সতর্ক করে। ইরানের জাহাজগুলো মৌখিক সতর্কতায় পিছু হটলে কোন গোলাগুলির প্রয়োজন পড়েনি। গত সপ্তাহে ইরানের একটি তেলবাহী জাহাজ আটক করতে জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করে ব্রিটিশ নৌবাহিনী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানের জাহাজটি সিরিয়ার দিকে যাচ্ছিল বলে তথ্য-প্রমাণ থাকায় সেটি আটক করা হয় বলে দাবি করে তারা। এর জবাবে ইরানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইরানের আটক তেলবাহী জাহাজটি ছেড়ে দেয়া না হলে ব্রিটেনের একটি তেলবাহী জাহাজ আটক করা উচিত। এ ঘটনায় তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ইরান। তারা এ ঘটনাকে ‘এক ধরনের দস্যুতা’ বলে অভিযোগ করে। এদিকে জিব্রাল্টার প্রণালীতে আটক ইরানের তেলবাহী জাহাজ গ্রেস-ওয়ানকে ছেড়ে না দিলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি বলেন, এটা খুবই বিপজ্জনক খেলা, এর প্রতিক্রিয়াও আছে। পারস্য উপসাগরে বুধবার তিনটি ইরানী নৌযান একটি ব্রিটিশ তেলবাহী জাহাজকে আটকানোর চেষ্টা করেছিল- যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের এমন দাবির মধ্যেই তেহরান তাদের জব্দ ট্যাঙ্কার ছেড়ে দেয়ার এ আহ্বান জানাল। ইরানী ট্যাঙ্কার আটকের পাল্টায় পারস্য উপসাগরে এ ‘হয়রানির’ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অনুমান পর্যবেক্ষকদের। ব্রিটিশ রাজকীয় যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস মন্ট্রুজের তাড়া খেয়ে পরে ওই ইরানী নৌযানগুলো পিছু হটে। গত সপ্তাহে জিব্রাল্টার উপকূলে ইরানী সুপার-ট্যাঙ্কার গ্রেস ১ ও এর সব কার্গো জব্দ করে ব্রিটিশ রাজকীয় মেরিন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ওই ট্যাঙ্কারটি ইরান থেকে সিরিয়ায় অশোধিত তেল নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহে এটিকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে তারা। এ ঘটনার জন্য ব্রিটেনকে ‘পরিণতি’ ভোগ করতে হতে পারে বলে বুধবার সকালেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করে দেশটির ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ তৈরির চেষ্টায় তাদের তেল রফতানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ওয়াশিংটনের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র রাষ্ট্রগুলোর উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে। এসব নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ২০১৫ সালের চুক্তিতে বেঁধে দেয়া পারমাণবিক তৎপরতার সীমা লঙ্ঘন করতে শুরু করে ইরান। চলতি বছরের মে ও জুন মাসে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় জলসীমায় বেশ কয়েকটি তেল ট্যাঙ্কারে হামলা হয়। এসব হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে দায়ী করলেও তেহরান তা অস্বীকার করে আসছে। ইরান গত মাসে হরমুজ প্রণালীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নজরদারি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিতও করে। এর জবাবে ইরানে বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত থেকে সরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ হরমুজ প্রণালী ও ইয়েমেন উপকূলের বাব আল মান্দেব প্রণালীতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোর জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য সামরিক জোট গঠনের উদ্যোগ নেয় ওয়াশিংটন।
×