ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সব বিদ্রোহীর পদ স্থগিত, মন্ত্রী এমপিদের শোকজ করা হবে

প্রকাশিত: ১২:২৫, ১৩ জুলাই ২০১৯

সব বিদ্রোহীর পদ স্থগিত, মন্ত্রী এমপিদের শোকজ করা হবে

আওয়ামী লীগের বৈঠকে বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সদ্য অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের দলীয় পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে যেসব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতা দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন ও মদদ দিয়েছিলেন তারাও রেহাই পাচ্ছেন না। তাদের কাছেও শোকজ নোটিস পাঠানো হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করার পর শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের শীঘ্রই দলীয় পদ স্থগিত করে কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী হওয়ার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠানো হবে। ১৫ দিনের মধ্যে নোটিসের জবাব দিতে বলা হবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে বহিষ্কার করা হবে। আর সারাদেশে নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সহায়তাকারীদের শনাক্তে কাজ করবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর গঠিত ৮টি সাংগঠনিক টিম। এসব টিমের সমন্বয়কারীদের দ্রুত অভিযুক্তদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, দলীয় নেতাদের সাংগঠনিক রিপোর্টের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের শোকজ করা দরকার তাদের শোকজ করুন, যাদের সাসপেন্ড (বহিষ্কার) করা দরকার তাদের সাসপেন্ড করুন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তদন্ত যেন নিরপেক্ষ হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। বৈঠকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্য শেষে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এসব নেতাদের সাংগঠনিক প্রতিবেদনে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের নাম ও তাদের অপরাধের মাত্রার বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচন ছাড়াও দলের ও বিভিন্ন কর্মসূচীতে যারা শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে তাদের বিষয়েও উল্লেখ ছিল প্রতিবেদনে। নেতাদের বক্তব্য শেষে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সম্মেলনের আগেই দলের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ নিরসন করার পাশাপাশি দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে দলকে আরও বেগবান করার জন্য বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে সংসদ প্রাণবন্ত হয়েছে। বিএনপিসহ সবাই পার্লামেন্টে এসেছে। এটা শেখ হাসিনার কৌশলের বিজয়। ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত সংগঠনকে আরও গতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নইলে দলে শৃঙ্খলা থাকবে না। এ বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারসহ কঠোর শাস্তি দাবি করে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। যারা দলীয় পদবি ধারণ করে বিদ্রোহীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন এমন মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদেরও কঠোর শাস্তি দাবি করেন তিনি। আব্দুর রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক দলীয় সভাপতির উদ্দেশে বলেন, এসব বিদ্রোহী ও তাদের সহায়তাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে অন্যরা উৎসাহিত হতে পারে। বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দেন। একই সঙ্গে যারা এসব বিদ্রোহীদের সহায়তা করেছেন এমন পদধারী নেতাদের কেন বহিষ্কার করা হবে না তা জানতে চেয়ে শোকজ নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্তও দেন তিনি। বৈঠকে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- নিয়ে জোরালো আলোচনা করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে জানান। এ ছাড়া বৈঠকে ৫ আগস্ট শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন, ৭ আগস্ট কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা দিবস, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনা হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা দিবস, ২৪ আগস্ট আইভী রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী ও ২৭ আগস্ট কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচী যথাযথভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ।
×