ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

প্লাস্টিক দূষণ

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ১৪ জুলাই ২০১৯

 প্লাস্টিক দূষণ

শুক্রবার জনকণ্ঠের শেষ পাতায় বক্স নিউজের শিরোনাম ছিল- উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীর পাশাপাশি মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি। প্লাস্টিক দূষণের ফলেই এই ক্ষতি। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আশপাশের দেশের তুলনায় বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ বেশি। গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক প্রয়োজনে অহরহ ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক। প্রসাধন সামগ্রী শিল্পেও এর ব্যবহার বেড়েছে। ফলে মৎস্য উৎপাদন ও পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। প্লাস্টিকের পরিবেশগত সমস্যা হচ্ছে সাগরদূষণ এবং এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রতিবছর অন্তত ১২.৭ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সাগরে প্রবেশ করে। ২০১৫ সালের Proceedings of the National Academy of Science-এ প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, শঙ্খচিলসহ সামুদ্রিক পাখির ৯০ শতাংশের পাকস্থলীতে প্লাস্টিক রয়েছে। সমুদ্রে যে প্লাস্টিক পাওয়া গেছে তার ৮০ শতাংশই ভূমি থেকে সমুদ্রে প্রবেশ করেছে। ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক তথ্য থেকে জানা যায় প্রতিবছর যে পরিমাণ প্লাস্টিক ভূমি থেকে সাগরে প্রবেশ করে তাতে বাংলাদেশ দশম স্থানে রয়েছে। এলেন ম্যাক আর্থার ফাউন্ডেশন ২০১৭ সালে এক হিসাব কষে জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে আমরা দেখব, সাগরে মাছের চেয়ে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি। এখানে উল্লেখ্য, ২০০২ সালে বাংলাদেশই প্রথম দেশ, যে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যাগ বন্যার সময় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এরপর পৃথিবীর অনেক দেশ প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ, মরক্কো ২০১৬ সালে ও কেনিয়া ২০১৭ সালে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। নিরাপদে ও শান্তিতে জীবন যাপন করতে আমাদের নিঃশ্বাসের জন্য বাতাস, পান করার জন্য জল, খাওয়ার জন্য খাবার, সেই সঙ্গে ওষুধ ও নিরাপদ একটি জলবায়ুর দরকার। আমরা যাদের লালন পালন করে বড় করছি সেইসব সন্তান-সন্ততির জন্য আমরা নিরাপদ একটি ভবিষ্যত চাই। বেঁচে থাকা ও উন্নতির জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকর সমুদ্র দরকার। সাগর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাস্তুতন্ত্র। সাগর আমাদের আবহমন্ডল থেকে পঞ্চাশ গুণ বেশি হারে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাস করে থাকে। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে তাপ পরিবহন করে সাগর জলবায়ু এবং আবহাওয়ার ধরন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সাগরের এই বৈচিত্র্য এবং উৎপাদনশীলতা সমগ্র মানবজাতির জন্য অপরিহার্য। আমাদের নিরাপত্তা, আমাদের অর্থনীতি, আমাদের টিকে থাকা, সবকিছুর জন্যই দরকার স্বাস্থ্যকর সমুদ্র। অথচ প্লাস্টিক দূষণে সাগর-মহাসাগর আজ বিপন্ন। অর্থাৎ মানবজাতিই বিপন্ন। যুক্তরাজ্যের গ্রিন পিস প্রতিষ্ঠানের এক হিসাবে দেখা যায়, কোকা-কোলা কোম্পানি প্রতিবছর ১২০ মিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল তৈরি করে। গড় হিসাবে প্রতিবছর ২৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়। তন্মধ্যে ২০১৬ সালে ইউরোপে ২৭ মিলিয়ন টন ও যুক্তরাষ্ট্রে ৩৩.৩ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। সুতরাং এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি তথা জলবায়ু পরিবর্তনে প্লাস্টিকের বিরূপ ভূমিকা অপরিসীম। প্লাস্টিক দূষণ থেকে বাঁচতে কেবল আমাদের সচেতন হলেই চলবে না, বৈশ্বিকভাবেই এই সচেতনতা গড়ে তোলা জরুরী। তা না হলে এই দূষণে মানবজাতিরই হবে অনিবার্য ক্ষতি।
×