ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ১৩ জুলাই ২০১৯

রংপুরে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ অবিরাম বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুর জেলার তিস্তা, ঘাঘট,করতোয়া নদীর পানি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ওইসব নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের গ্রাম গুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে তিন উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের ৪৪টি দুর্গম চরাঞ্চলের ৪০টি গ্রাম হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি বৃদ্ধির গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তি¯তা নদীতে ভয়াবহ বন্যায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সার্বক্ষনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যা দুর্গত মানুষের জন্য সাড়ে পনের টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নোহালী ইউনিয়নে ৩ টন, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে ৪ টন, কোলকোন্দ ইউনিয়নে ৪ টন, গজঘন্টা ইউনিয়নে আড়াই টন, এবং আলমবিদিতর ইউনিয়নে ২ টন। এ ছাড়া ২ হাজার প্যাকেট ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতি প্যাকেটে থাকছে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি আলু ৫০০ গ্রাম ডাল, সোয়াবিন তেল অর্ধ লিটার, লবন ৫০০ গ্রাম, ওর স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। এর আগে বিভিন্ন ইউনিয়নে ৮৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়। এদিকে প্রতিষ্ঠানে পানি উঠার কারনে চর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাউথপাড়া আলিম মাদ্রাসা অনিদিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে শনিবার উপজেলার বন্যাকবলিত কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কোন বাড়িতে হাটু পরিমান,কোথাও কোমরঅবদি পানি রয়েছে। অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র বাস করছে। চিলাখাল এলাকার আব্দুর রহমান(৬৫) বলেন, “রাইত হইতে না হইতে ঘরোত চকির উপর পানি উঠিল বাহে। এলা কোটে যাই। ফোন করিয়া নৌকা আনিয়া ছাওয়া পোয়া,গরু বাছুর সহ উচাত গেছি। উতর কোলকোন্দ এলাকার রাবেয়া বেগম বললেন, খুব কষ্টে আছি বাহে । হামার গুলার একনা ব্যবস্থা কর। বন্যার কারনে ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। পানি বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু বলেন, তি¯তার সব চর তলিয়ে গেছে। তার ইউনিয়নে ১ হাজার ৬শ পরিবার পানিবন্দি। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা বেগম জানিয়েছেন, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পূর্ব ইছলিগ্রামে তিস্তা নদীর পানির তোড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। ফলে চারটি গ্রামের ১৫ হাজার মানুষ সড়ক পথে উপজেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেতে পারছেন না। গ্রামগুলো হচ্ছে পূর্ব ইছলী, পশ্চিম ইছলি, শংকরদাহ এবং বাগেরহাট। তিনি আরও জানান, বেশকিছু এলাকায় পানিবন্দি মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সালাম জানান, তিস্ত নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে ১০ একর জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বিভিন্ন এলাকায় শত শত পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে। তাদের উদ্ধার করার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। কাউনিয়া উপজেলা ৪টি ইউনিয়নে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । এর মধ্যে হারাগাছ ইউনিয়ন, শহীদবাগ ,বানাপাড়া টেপামধুপুর ইউনয়ন । টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, তিস্তা পানিতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান বলা সম্ভব নয় ।এতে ইউপির বিশ্বনাথ, চরগনাই, হয়বৎখা ও বালাপাড়া ইউপির ঢুষমারা গ্রামের প্রায় হাজারো পরিবার বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়ে। পীরগাছা উপজেলার ছাওলা, তাম্বুলপুর ,পাওটানা উইনিয়নের চলগুলোতে ৯শ মানুষ পান্দিবন্দি হয়ে পড়েছে । পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, অবিরাম বৃষ্টি আর ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি গত চার দিন ধরে বাড়ছে। তবে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে শুক্রবার দুপুর থেকে। তিনি জানান, শনিবার দুপুর ৩ টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
×