ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্যার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৯:০১, ১৫ জুলাই ২০১৯

বন্যার প্রস্তুতি

বাংলাদেশের মানুষ আবহমানকাল ধরেই বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে জীবনধারণ করছে। ফলে সহজাত প্রবৃত্তি ও অভিজ্ঞতালব্ধ দক্ষতা দিয়ে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে জয় করার দৃষ্টান্ত প্রচুর। বর্ষায় প্রতিবছর উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে নদ-নদীতে পানি বাড়ছে। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে নদীভাঙ্গন। বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। পানিবন্দী মানুষ দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের ১৩ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে পানি বাড়ছে প্রতি মুহূর্তে। তিস্তা নদী তীরবর্তী চার জেলার নিম্নাঞ্চলও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটির কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এবার বন্যা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। এটা আমাদের জন্য শঙ্কার ব্যাপার বৈকি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। সেখানকার ঘরবাড়ি পানির নিচে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা না গেলেও অচিরেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বছর বছর ভেঙ্গে যাওয়া নদীতীর রক্ষা বাঁধগুলোর সংস্কার করা কিংবা স্থায়ীভাবে বাঁধের কাজ না করায় তাদের এই চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। অবশ্য ইতিবাচক খবরও রয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্যা মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। বন্যাদুর্গত জেলাগুলোয় ২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, সাড়ে ১৭ হাজার টন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় দু-একদিনের মধ্যে ৫০০টি করে তাঁবু পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে যথার্থই বলেছেন, পাহাড় বা হাওড় এলাকা বা দেশের উঁচু জায়গার বন্যার পানি ধীরে ধীরে নিচু এলাকায় নেমে আসবে। আগস্টের শেষের দিকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে মধ্যম এবং দেশের নিম্ন অংশে নেমে আসবে। যার ফলে ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি হবে। এটিকে বন্যার প্রাকৃতিক নিয়ম হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা কিছু আশীর্বাদও নিয়ে আসে। এটি প্রাকৃতিকভাবে জমির উর্বরতা এবং ভূগর্ভস্থ পানি রিচার্জ করতেও সাহায্য করে।’ জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দেশে অকাল বন্যা, ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাত বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যতই দিন যাবে আবহাওয়ার এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেশে পড়তে থাকবে। প্রতি বছর বন্যাসহ অন্যান্য দুর্যোগ দেখা দিতে পারে। তাই প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা সমীচীন। এছাড়াও বন্যানিয়ন্ত্রণে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আরও কার্যকর নতুন উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে।
×