ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১৬ জুলাই ২০১৯

 রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটি হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাবার পরও প্রায় ১০ বছর ধরে কারাবন্দী জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পাখিমারা গ্রামের স্কুল শিক্ষক আজমত আলীকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। অন্যদিকে তিন হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে জামিন নেয়ায় খুলনার রানা বেপারিসহ তিন জনের জামিন বাতিল করেছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আপীল বিভাগের রায়টি রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি জামিন জালিয়াতির বিষয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ আদেশটি প্রদান করেছে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাবার পরও ১০ বছর ধরে কারাবন্দী স্কুল শিক্ষক আজমত আলীকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে আপীল বিভাগ। আপীল বিভাগের যাবজ্জীবন সাজার রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আজমত আলীর করা রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে এ আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। আদালত বলেছে, রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেয়ার পরও তাকে পুনরায় কারাগারে পাঠানো অন্যায্য ও দুর্ভাগ্যজনক। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যবিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ গত ২৭ জুন এক রায়ে এ নির্দেশ দিলেও সোমবার সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে এই রায়ের কপি প্রকাশিত হয়েছে। এই রায়ের কপি জামালপুর কারা কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আজমত আলী দুর্বলের শিকার। তিনি গরিব মানুষ হওয়ায় দীর্ঘদিন পর তার মামলাটি ঝুলেছিল। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল কমিটির পক্ষে আমি রিভিউ আবেদনটি করি। রিভিউ রায়ে আমি খুশি। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি সাধারণ ক্ষমার প্রজ্ঞাপন জারি করেন। সেখানে বলা হয়েছিল, যারা শাস্তির অর্ধেক সাজা খেটেছে তাদেরকে মুক্তি দেয়া যাবে। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের সমন্বয়ক রিপন পৌ স্কু বলেন, আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন তার বাবার বিষয়ে আইনী সহায়তার জন্য আবেদন করেছেন। পর্যালোচনা সাপেক্ষে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নির্দেশে আপীল বিভাগে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর লিগ্যাল এইড তার পক্ষে রিভিউ আবেদন করে। আবেদনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন। ২৭ জুন আপীল বিভাগ রিভিউ নিষ্পত্তি করে রায় দেন। আপীল বিভাগের রায়ে লিগ্যাল এইড খুশি। গবির বিচারপ্রার্থীরা এই সেবা গ্রহণ করে ন্যায়বিচার পাচ্ছে। গরিববান্ধব এ সরকার অসহায়-গরিবদের সেবা দিয়ে তাদের ন্যায়বিচার পেতে সহায়তা করছে। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এতে লাভবান হচ্ছে। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমার পরও ৯ বছর কারাগারে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক আজমত আলী। উচ্চ আদালতের রায়েও তিনি খালাস পান। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার ১৩ বছর পর আবার সে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সেই থেকে ৯ বছর ধরে কারাগারে এই বৃদ্ধ। মামলার বিবরণে জানা যায়, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দির পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্লা সর্দারের ছেলে আজমত আলী। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঘোড়ামারার ভেঙ্গুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। এই ঘটনায় আজমত আলীকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এ মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল করেন আজমত আলী। একই সময় তিনি রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার জন্যও আবেদন করেন। আপীল বহাল থাকার সময় রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। আবার ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টের রায়েও তিনি খালাস পান। এর আগে ২১ আগস্ট, ১৯৯১ সালের ১৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত সাধারণ ক্ষমায় আজমত আলীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা সত্ত্বেও আজমত জেলে আছেন। জামিনে জালিয়াতি, তিনজনকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ ॥ তিন হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে জামিন নেয়ায় খুলনার রানা বেপারিসহ তিন জনের জামিন বাতিল করেছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বিচারিক আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রানা বেপারি ছাড়া অপর দুই আসামি হলেন রানু বেগম ও তন্বী বেগম। এছাড়া এই তিন আসামি, মামলার তদবিরকারকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার জন্য সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জামিন জালিয়াতির ঘটনা নজরে আসার পর সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
×