ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রিকেটে নাটকীয় রোমাঞ্চ

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ১৭ জুলাই ২০১৯

ক্রিকেটে নাটকীয় রোমাঞ্চ

ক্রিকেটকে বলা হয়ে থাকে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এবারের বিশ্বকাপেও এমন উদাহরণ কম নয়। তবে সব নাটক ও রোমাঞ্চ যেন জমা ছিল চূড়ান্ত ম্যাচটির জন্য। রবিবার ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ডের ভেতর যে ফাইনাল ম্যাচটি হয়েছে তাতে পেন্ডুলামের মতো ক্ষণে ক্ষণে দুলেছে ফল। একবার ঝুঁকেছে ইংল্যান্ডের দিকে তো পরক্ষণেই ঝুঁকেছে নিউজিল্যান্ডের দিকে। ফলে ফাইনাল ম্যাচটা সত্যিকারেরই ফাইনাল হয়ে উঠেছে। উভয় দলই ৫০ ওভার করে খেলেছে এবং বিস্ময়ের ব্যাপার হলো দু’দলেরই স্কোর সমান সমান। নিউজিল্যান্ড তাদের সমর্থকদের মনে জয়ের আশাটি জাগিয়ে রেখেছিল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। অবশেষে ভাগ্যের ফেরে চার চারটি মূল্যবান অতিরিক্ত রান পেয়ে যাওয়াতেই জয়ের পাল্লা ঝুঁকে পড়ে ইংলান্ডের দিকে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য প্রত্যাশিত রানটি না করায় ম্যাচ টাই হয়ে যায়। অর্থাৎ দুই দলেই সমান সমান রান। কিন্তু এটি হচ্ছে ফাইনাল ম্যাচ। তাই ম্যাচটি গড়ায় সুপার ওভারে। প্রত্যেক দলই নির্দিষ্ট নিয়মের আওতায় ৬টি করে বল খেলবে। সেখানেও নাটকীয়তা ছিল! দুই দলেরই স্কোর হয়ে যায় সমান। উভয় দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫ রান। রুদ্ধশ্বাস সুপার ওভার শেষ, স্কোর সমান; কিন্তু বাউন্ডারি হাঁকানোর দৌড়ে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকার কারণে জিতে যায় ট্রফি। অর্থাৎ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ৪৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড। এ এক অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অবর্ণনীয় লড়াই, যেখানে নেপথ্যে ভাগ্যদেবীই কলকাঠি নেড়ে গেছে। ইংল্যান্ড জিতেছে বটে; কিন্তু নিউজিল্যান্ড কি হেরেছে? হিসাবমতো তারা রানার আপ। কিন্তু সত্যিকারের ক্রিকেটপ্রেমীরা জানেন দুই দলের কেউই হারেনি, বরং জিতেছে ক্রিকেট। ক্রিকেটের সৌন্দর্য, অনিশ্চয়তা এবং ৩০০ বলের পারাবার পেরিয়ে ৬টি চূড়ান্ত অনিশ্চিত বলÑ সব মিলিয়ে ক্রিকেট মেলে ধরেছিল তার সব সৌন্দর্য ও শক্তি। এমন ফাইনাল এর আগে কেউ দেখেনি। এক অর্থে দর্শকদের পয়সা উশুল তো বটেই, টিভি সেটের সামনে বসে থাকা কোটি কোটি দর্শকের বাড়তি বিনোদনের আনন্দ প্রাপ্তি। আমরা বিশ্বকাপ ম্যাচের শুরুতে সম্পাদকীয়তে অনেক আশাবাদ প্রকাশ করেছিলাম, যা বিফলে যায়নি। বাংলাদেশ ফাইনাল বা সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাক বা না যাক, তারা যেন তীব্র লড়াই করে যায়, প্রতিটি বলেই যেন নিজেদের সেরাটুকু উজাড় করে দেয়ার চেষ্টা করে এমন আশাও সফল হয়েছে। ক্রিকেটামোদী বিশ্ববাসীর অন্তরে ঠাঁই করে নিতে হলে বিশেষ কিছু করে দেখাতেই হবে। টাইগাররা তা দেখিয়েছে। বিশেষ করে সাকিব আল হাসানের অর্জন ছিল বিস্ময় জাগানো। তাই ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারটি সাকিবই পাবে এমন প্রত্যাশার পেছনেও ছিল যুক্তি। শেষ পর্যন্ত সাকিব সেটি না পেলেও তার মাধ্যমে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে বাংলাদেশ একটি সমীহ জাগানো দেশের পরিচিতি পেয়েছে- এটি ভাবলেও দেশবাসী সান্ত¡না পাবেন। ভবিষ্যতের সম্ভাবনার অগ্নিশিখাটিও দেখা যাবে। জয় হোক ক্রিকেটের।
×