ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পিপলস লিজিংয়ের হাতে নগদ মাত্র ১ লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১৭ জুলাই ২০১৯

পিপলস লিজিংয়ের হাতে নগদ মাত্র ১ লাখ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ন্যায় পিপলস লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবসায়ও অর্থের কারবার। কিন্তু অবসায়নের পথে থাকা এ কোম্পানিটির হাতে আছে মাত্র নগদ ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। যাতে এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া সম্ভব না, যদি প্রদত্ত ঋণ আদায় না হয়। এছাড়া নামমাত্র অর্থের কারণে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পিপলস লিজিংয়ের চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ ’১৯) সমন্বিত আর্থিক হিসাব বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। কোম্পানিটিতে চলতি বছরের ৩১ মার্চ শেষে ১ হাজার ২৯৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। এর বিপরীতের কোম্পানিটিতে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে থেকে সংগৃহীত আমানত ও ঋণসহ দায় রয়েছে ৩ হাজার ২৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকার। এ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটিতে সম্পদের চেয়ে ১ হাজার ৯৬১ কোটি ৫১ লাখ টাকার দায় বেশি রয়েছে। দেখা গেছে, পিপলস লিজিংয়ের হাতে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক ও এজেন্ট ব্যাংকে ৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকে ৮১ কোটি ৫ লাখ টাকা জমা রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে কোম্পানিটির নগদ ও নগদ সমতুল্য ৮১ কোটি ৯ লাখ টাকা রয়েছে। এদিকে কোম্পানিটির নগদের পাশাপাশি বিনিয়োগ হিসাবে ৩৭ কোটি ৫২ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। এছাড়া ৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকার স্থায়ী সম্পদ, ৭০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার অন্যান্য সম্পদ ও ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকার নন-ব্যাংকিং সম্পদ রয়েছে। আর কোম্পানিটির প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ রয়েছে ১ হাজার ৯৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। পিপলস লিজিংয়ে আমানতের পরিমাণ রয়েছে ১ হাজার ৯৯৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণের পরিমাণ ৪২৮ কোটি ২ লাখ টাকা, ৮০২ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বিবিধ দায় ও ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকার লেটার অব গ্যারান্টি বাবদ দায় রয়েছে। সব মিলিয়ে দায়ের পরিমাণ রয়েছে ৩ হাজার ২৫৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পিপলস লিজিংয়ে ২৮৫ কোটি ৪৪ লাখ ৫ হাজার ৯৭০ টাকার পরিশোধিত মূলধনে শেয়ার সংখ্যা রয়েছে ২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৭টি। এই শেয়ারের বিপরীতে কোম্পানিটির ঋণাত্মক সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৯৩১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ২০০৫ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পিপলস লিজিংয়ে মোট শেয়ারের মধ্যে ১৯ কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার বা ৬৭.১০ শতাংশই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। এ শেয়ারগুলোর সর্বশেষ প্রতিটির বাজার দর ৩ টাকা অনুযায়ী মোট বিনিয়োগমূল্য ছিল ৫৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। তবে অবসায়নের মাধ্যমে এই বিনিয়োগমূল্য শূন্যতে নেমে আসবে। কোম্পানিটিতে বাকি শেয়ারের মধ্যে ২৩.২১ শতাংশ উদ্যোক্তা/পরিচালক, ৮.৭৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ও ০.১৯ শতাংশ বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। ফলে কোম্পানিটির অবসায়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন পিপলসের অবসায়নে সরকার সম্মতি দিয়েছে। এ অবসায়নের সিদ্ধান্ত হবে আদালতে, এ জন্য আইনজীবীও নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরবর্তীতে ১১ জুলাই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। যা ১৪ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
×