ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বহির্নোঙরে মাদার ভেসেলের দীর্ঘ সারি

চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে বেড়েছে কন্টেনারের স্তূপ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১৭ জুলাই ২০১৯

চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে বেড়েছে কন্টেনারের স্তূপ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে কন্টেনার ওঠানামা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বিরূপ অবস্থার কারণে পণ্য ডেলিভারি হয়েছে অনেক কম। এতে করে ইয়ার্ডে বেড়েছে কন্টেনারের স্তূপ। অপরদিকে, একই সময়ে বহির্নোঙরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ থাকলেও একের পর এক এসেছে মাদার ভেসেল। ফলে বেড়েছে পণ্যবোঝাই অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ও জাহাজ জট দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে গত ১০ দিনে। বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত পণ্য খালাস নেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে আমদানিকারকদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমদানিকারকরা জানাচ্ছেন, বৈরী আবহাওয়ায় তারা নিরুপায়। এদিকে, বন্দর অভ্যন্তরভাগ পণ্যে ঠাসা থাকায় ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে ইয়ার্ডে কন্টেনারের পরিমাণ ছিল ৪৪ হাজার ৩০০ টিইইউএস, যা ধারণ ক্ষমতা ছুঁইছুঁই করছে। বর্তমানে ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা সব মিলিয়ে ৪৯ হাজার টিইইউএস। নির্বিঘেœ কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম চালাবার জন্য ধারণ ক্ষমতার অন্তত ৩০ শতাংশ কম কন্টেনার থাকতে হয়। সে হিসেবে কোনভাবেই বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার ৩৫ হাজারের ওপরে যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু রয়েছে অন্তত ১০ হাজার কন্টেনার বেশি। এতে করে ইকুপমেন্টস পরিচালনায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোঃ ওমর ফারুক সোমবার জনকণ্ঠকে জানান, আবহাওয়া প্রতিকূল হলেও গত প্রায় ১০ দিন কন্টেনার ওঠানামা ঠিক ছিল। কিন্তু ডেলিভারি স্বাভাবিক ছিল না। প্রতিদিন যেখানে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার কন্টেনার ডেলিভারি হয় সেখানে গত ১০ দিনের কোন কোন দিন তা ২ হাজারে নেমে আসে। গড়ে প্রতিদিনই বেড়েছে ১ হাজার করে কন্টেনার। তবে আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় পর থেকে কন্টেনার খালাস নেয়ার হিড়িক পড়েছে। সোমবার থেকে আগামী ক’দিন কন্টেনার ডেলিভারি গড়ে প্রায় ৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। কারণ বৃষ্টির কারণে যারা কন্টেনার খালাস নিতে পারেননি তারা এখন তৎপর হয়েছেন। দৈনিক ১ থেকে দেড় হাজার কন্টেনার অতিরিক্ত ডেলিভারি হলে ৪/৫ দিনের মধ্যেই ইয়ার্ডের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ইয়ার্ডে কন্টেনারের পরিমাণ বেশি মূলত গত রোজার ঈদের সময় থেকে। কারণ ঈদের ছুটিতেও কন্টেনার ওঠানামাসহ অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটি ভোগ করে বিধায় পণ্য ডেলিভারি সেভাবে হয় না। ঈদের ছুটির পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে না হতেই শুরু হয়ে গেছে বর্ষা। ফলে অবস্থা স্বাভাবিক হতে পারেনি। গত ১ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার ছিল ৪৩ হাজার ৫৭৩ টিইইউএস। এই পরিমাণ ক্রমেই কমছিল। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হওয়ায় চেহারা ফিরে যাচ্ছে আগের অবস্থায়। কন্টেনার ডেলিভারি যেখানে দৈনিক সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার হওয়ার কথা, তা নেমে আসে ২ থেকে আড়াই হাজার পর্যন্ত। এদিকে, বহির্নোঙরের চিত্রটি উল্টো। বৃষ্টির মধ্যে মাদার ভেসেল ঠিকই ছিল। কিন্তু পণ্য লাইটারিং থাকে বন্ধ। কারণ সাগর অশান্ত থাকায় ছোট লাইটার জাহাজগুলোকে বড় জাহাজের পাশাপাশি রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া বৃষ্টির মধ্যে খোলা খাদ্যপণ্য লাইটারিং সম্ভব নয়। এতে মালামাল নষ্ট হওয়ার সমূহ ঝুঁকি। তবে সোমবার থেকে পুরোদমে পণ্য লাইটারিং এবং অভ্যন্তরীণ জলপথে পরিবহন শুরু হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে বেড়ে গেছে মাদার ভেসেলের সারি। সোমবার পণ্যবোঝাই অপেক্ষমাণ বড় জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩৫টির মতো। অভ্যন্তরীণ জলপথে চলাচলকারী লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ জনকণ্ঠকে জানান, বৃষ্টির কারণে বেশ ক’দিন কাজ বন্ধ থাকার পর পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে বহির্নোঙরে। সোমবার বুকিং হয়েছে ২৮টি লাইটার জাহাজ। আগের দিন বুকিং হয়েছিল ৩৬টি জাহাজ। এসব জাহাজ গম, ভুট্টা, চিনি, সিমেন্ট ক্লিংকার ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য লাইটারিং কাজে রয়েছে। তিনি জানান, প্রায় দশদিন কাজ বন্ধ থাকায় মাদার ভেসেলের পরিমাণ এখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব জানিয়েছেন, আমদানির পণ্য যথাসময়ে ডেলিভারি নেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। যদি নির্দিষ্ট চারদিনের মধ্যেই খালাস না নেয় তাহলে ইয়ার্ডে রাখা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত দ-ভাড়া আরোপ করা হবে। কিন্তু আমদানিকারকরা জানাচ্ছেন, তারা নিরুপায়। আবহাওয়া অনুকূল না থাকলে তাদেরও প্রাত্যহিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাছাড়া সড়কের অবস্থাও বেহাল। পরিস্থিতি উন্নতি হলে সঙ্কটও কেটে যাবে। এদিকে, বন্দর ইয়ার্ডে সারিবদ্ধভাবে পড়ে থাকা কন্টেনারগুলোর মধ্যে অন্তত সাড়ে ৫ হাজার রয়েছে নিলামযোগ্য। এগুলো আমদানিকারকরা খালাস নেবেন, এমন সম্ভাবনাও আর নেই। তবে নিলামের বিষয়টি সম্পূর্ণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার। দফায় দফায় সেই পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে সংশ্লিষ্ট পক্ষ।
×