ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা;###;১৩ নদীর পানি ২৫ পয়েন্টে এখনও বিপদসীমার ওপরে

দুর্ভোগে বানভাসি মানুষ ॥ সারাদেশে ১৫ জেলায় ১১ লাখ বন্যা কবলিত

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৭ জুলাই ২০১৯

দুর্ভোগে বানভাসি মানুষ ॥ সারাদেশে ১৫ জেলায় ১১ লাখ বন্যা কবলিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী বন্যায় সারাদেশে ১৫ জেলায় ১১ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সমতলে দেশের সব প্রধন নদীর পানি বাড়ছেই। এছাড়া উজান থেকে পানি আসার কারণে ১৩ নদীর পানি ২৫ পয়েন্টে এখনও বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত। আগামী দু’একদিনে বন্যার আরও অবনতি হবে। ২০ জুলাই থেকে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়ে আসবে। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পেরিয়ে দেশের মধ্যাঞ্চলও বন্যায়কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে বানভাসি লোকজন চরম দুর্ভোগের মধ্যে। খাদ্য পানীয় সমস্যার পাশাপাশি নানা রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেয়া দিয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় হাজার হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় হাজারখানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নদীভাঙ্গনের প্রকোপ বেড়েছে। বন্যাদুর্গতদের চলাচলের একমাত্র বাহন এখন নৌকা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দেশের ১৫ জেলায় ১১ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এদিকে জনকণ্ঠের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবারও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার পানি শহরের প্রবেশ করেছে। জামালপুরে যমুনার পানি বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রেলস্টেশনে প্রবেশ করেছে পানি। সিলেটে বন্যার কারণে সাড়ে তিনলাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নওগাঁয় বাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবেশ করেছে পানি। নীলফামারীতে দ্বিতীয় দফায় তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। কুড়িগ্রামে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। নেত্রকোনার আরও তিন উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইলে বন্যার কারণে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বগুড়ার তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারি বর্ষণের কারণে রাঙ্গুনিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, সমতলে দেশের সব প্রধান নদীর পানি বাড়ছে। ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা নদীর পানি আরও বাড়বে। আজকেই পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ের মধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তবে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের প্রধান ১২টি নদীর পানি ২৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদসীমার সবচেয়ে বেশি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা নদীর পানি। ফুলছরি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং কাজিপুর পয়েন্টে যথাক্রমে ১৩০, ১৩৭, ৯৫ ও ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর বাইরে ধলেশ্বরী, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, ধরলা, কংস, সোমেশ্বরী, খোয়াই, পুরাতন সুরমা, মনু, কুশিয়ারা এবং সুরমা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, সারাদেশে নদ-নদীর ৯৩টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ৬৩ পয়েন্টে নদীর পানি বাড়ছে। গত এক সপ্তাহর বেশি সময় ধরে দেশের ওপর ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া পার্শ¦বর্তী ভারতের অসম ও নেপালে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভারি বৃষ্টির সঙ্গে অসমের বন্যার পানি নেমে আসায় দেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন এই অবস্থা থাকবে। বন্যা উত্তরাঞ্চল ছাড়িয়ে মধ্যাঞ্চলে নেমে আসবে। তবে তিনি বলেন, নেপালে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলেও এই পানির সব দেশে আসছে না। তবে কিছু পানি সেখান থেকে আসছে। এদিকে জানা গেছে, ভারতের বিহারে ভারি বর্ষণের পানির কারণে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। তবে পদ্মার পানি বাড়লেও তা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে না। স্বাভাবিক অবস্থানেই রয়েছে। তবে যমুনা নদীর পানি নেমে আসায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি ফুলে উঠছে। আজকের মধ্যে তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের ওপর ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরের পাশাপাশি চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। তবে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ওপর আর কোন ধরনের ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ রূপ নেবে তা নির্ভর করছে ভারি বৃষ্টিপাতের ওপর। এটি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তবে ভারি বৃষ্টি থেমে গেলে বন্যা নিয়ে আশঙ্কার কোন কারণ নেই। আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার থেকে দেশের ওপরে ভারি বৃষ্টিপাতের কোন সতর্কতা নেই। গাইবান্ধা ॥ ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। শহর সংলগ্ন খোলাহাটী ইউনিয়নের গোদারহাট এলাকায় সোনাইল বাঁধের প্রায় ২০০ ফুট এলাকা ধসে যাওয়ায় ওই পানিতে শহরের কুটিপাড়া, পূর্বপাড়া, সবুজপাড়া, ডেভিড কোম্পানিপাড়া, মুন্সীপাড়া, বানিয়ারজানসহ বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি উঠেছে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ উপমহাসড়ক, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, টেনিস কমপ্লেক্স, পুরাতন বাজারসহ আশপাশের এলাকায়। জেলা রোভার স্কাউটের সদস্যরা দিনভর ওসব এলাকার লোকজন ও মালামাল নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিতে উদ্ধার অভিযান চালায়। জামালপুর ॥ বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। বন্যায় উপজেলা সদরসহ আটটি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন প্ল্যাটফরম ও রেললাইনে পানি ওঠায় মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনসহ সকল ট্রেন ইসলামপুর পর্যন্ত চলাচল করছে। বন্যায় বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যার্তরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সকল নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যায় দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ী-রাজিবপুর সড়কসহ অভ্যন্তরীণ গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় জলমগ্ন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। রৌমারীতে বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রৌমারীর কর্ত্তিমারীতে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে পানিতে পড়ে সাইফুল ইসলাম (২৫) নামে এক যুবক নিখোঁজ হয়ে যায়। এ নিয়ে দু’দিনে জেলায় এক প্রতিবন্ধীসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার ফলে পানিবন্দী মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও আশ্রয়ের সঙ্কটে ভুগছেন তারা। চরাঞ্চলে গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সারাদিন পানিতে চলাফেরা করায় বানভাসিরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বগুড়া ॥ বগুড়ার তিন উপজেলা সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। উজানে গাইবান্ধায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল দেখা দেয়ায় ভাটির সারিয়াকান্দির বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সারিয়াকান্দি-মথুরাপাড়া পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমা থেকে ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাঙালী নদীর পানি বিপদসীমার খুব কাছে। চন্দনবাইশার ঘুঘুমারি ও শেখপাড়ায় যমুনার ¯্রােতের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিসি ব্লক ফেলে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ রক্ষা করছে। নীলফামারী ॥ নীলফামারীর তিস্তা নদী কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বেলা তিনটা হতে পুনরায় বিপদসীমা দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় নদী চরগ্রাম ও তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। মঙ্গলবার তিস্তা নদীর ডিমলা উপজেলার ফরেস্টের চর, বাইশপুর, ছোটখাতা, ঝাড়সিংহেশ্বর এলাকায় দেখা যায় সেখানকার পরিবারের বসতভিটায় এখনও হাঁটু সমান পানি রয়েছে। তবে উজানের ঢল কমে আসায় সেই পানি ধীরে ধীরে কমছে। তবে যে কোন সময় উজান থেকে ফের ঢল নেমে এলে তিস্তার বন্যা পুনরায় গর্জে উঠবে। নওগাঁ ॥ নওগাঁয় আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেঃমিঃ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুরে ও ভাঙ্গিপাড়ায় আত্রাই নদীর দুটি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে নওগাঁ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। এমনভাবে বাড়তে থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ইতোমধ্যেই জেলাবাসী বন্যা আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইল॥ গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণের ফলে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে গত কয়েকদিনে যমুনা নদীর তীরবর্তী নাগরপুর উপজেলার আগদিঘুলিয়া, নিশ্চিন্তপুর ও পাইকশা মাঝাইল গ্রামে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার কাজীবাড়ি ও কেদারপুরে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। আর এতে গৃহহীন হচ্ছে বহু পরিবার। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্র্তৃপক্ষ বলছে আগামী দুই/তিন দিন নদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষ পানি ও খাদ্যের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। সিলেট ॥ ১৩ টি উপজেলায় ৪৮ হাজার পরিবারের ৩ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার থেকে সিলেটে বিভিন্ন নদীর পানি কমছে। বন্যা কবলিতদের চিকিৎসা সহায়তায় ১৪০টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লক্ষাধিক পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক জানান, বন্যায় ১৫টি স্থানে ২৪৫ মিটার বাঁধ ভেঙ্গেছে আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫ কিলোমিটার। জেলায় আউশ, রোপা আমন,বীজতলাসহ ৩৮৬৬ হেক্টর ফসলাদির ক্ষতি হয়েছে। জেলায় মোট ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮১টি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ১৩টি উপজেলায় ১৯০টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে যারমধ্যে ২টি কেন্দ্রে মোট ৫১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পানি না কমা পর্যন্ত আক্রান্তদের সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। নেত্রকোনা॥ জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে উজানের পানি নি¤œাঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় পূর্বধলা, খালিয়াজুরি এবং নেত্রকোনা সদর উপজেলার কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত ছয় উপজেলার ২শ’ ৬৪ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। খালিয়াজুরি উপজেলার রূপনগর গ্রামের বেশকিছু পরিবার স্থানীয় কলেজে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে অতিবৃষ্টি ও বন্যার পানিতে বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ২ হাজার ৯শ’ ৬৩ পুকুর তলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৩শ’ ৪২ মেট্রিক টন মাছ পানিতে ভেসে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ৩শ’ ৫০টি। এর মধ্যে ২শ’ ৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কলমাকান্দার উব্দখালি নদীর পানি বিপদসীমার ১২মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাঙ্গুনিয়া ॥ গত কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে র্স্তাাঘাট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ী এলাকায় ভূমিধসে অনেক বতসবাড়ি ভেঙ্গে গেছে। নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে অনেক ঘরবাড়িতে। পানিবন্দী হয়েছে শত শত গ্রামবাসী। ভারি বর্ষণের সময় দুর্যোগ মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের সতর্ক অবস্থানের কারণে কোথাও মৃত্যুর ঘটনা ঘ্েটনি। তবে রাস্তাঘাট ধস ও ভেঙ্গে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
×