ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাইকোর্টে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন

বাজারের ১৪ কোম্পানির ১১ পাস্তুরিত দুধেই অতিরিক্ত মাত্রার সিসা

প্রকাশিত: ১০:৫০, ১৭ জুলাই ২০১৯

বাজারের ১৪ কোম্পানির ১১ পাস্তুরিত দুধেই অতিরিক্ত মাত্রার সিসা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাজারের ১৪ কোম্পানির ১১টি পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে সবটিতেই অতিরিক্ত মাত্রার সিসা ও উচ্চমাত্রার ক্যাডমিয়াম (মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ধাতব পদার্থ) পাওয়া গেছে। আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। অন্যদিকে দুধ-দইয়ে অনুজীব, কীটনাশক ও সিসার বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে সুয়োমটো রুলের রায় না হওয়া পর্যন্ত পশু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গাভীকে এ্যান্টিবায়োটিক না দিতে, সামাজিক তহবিল গঠন ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১১ কোম্পানির বিষয়ে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে রিপোর্ট আগামী ২৮ জুলাই জমা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছে। আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। আদালতে দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) অনুমোদিত বাজারের ১৪ কোম্পানির মধ্যে ১১টি পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে এর সবটিতেই অতিরিক্ত মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়। অতিরিক্ত সিসা পাওয়া গেছে- মিল্ক ভিটা, ডেইরি ফ্রেশ, ঈগলু, ফার্ম ফ্রেশ, আফতাব মিল্ক, আল্ট্রা মিল্ক, আড়ং, প্রাণ মিল্ক, পিউরা, আয়রন ও সেফ ব্র্যান্ড। এছাড়া মিল্ক ভিটা, আল্ট্রা ও পিউরা এই তিনটিতে পাওয়া গেছে ক্ষতিকর ক্যাডমিয়াম (ঈধফসরঁস)। রাজধানীর ৬টি ল্যাব- বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর, প্লাজমা প্লাস, ওয়াফেন রিসার্চ, পরমাণু শক্তি কমিশন ও আইসিডিডিআরবিতে এই পরীক্ষা করা হয়। এসব ল্যাবে পাস্তুরিত দুধ, খোলা দুধ ও গো-খাদ্য পরীক্ষা করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। দুধে সিসা, কেমিক্যাল ও ক্ষতিকারক পদার্থ মিশিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরির বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছে, বাজারের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে কোন অজুহাত দেখতে চাই না, আমরা চাই বিশুদ্ধ দুধ। আদালত আরও বলে, সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন অনেক বাড়ানো হয়েছে, তারপরও কেন ঘুষ খেতে হবে। ঘুষের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে আদালত। এ তথ্য জানিয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এর আগে পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে অতিরিক্ত মাত্রায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী। তারা (নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ) আদালতকে জানান, ভেজাল দুধের বিষয়ে এখন পর্যন্ত ১০০ মামলা হয়েছে। হাইকোর্ট বলে, দুধে ভেজাল মোকাবেলায় ফান্ড তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কি কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানাতে হবে। এই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন গাভীকে এ্যান্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না বলেও আদালত বলেছে। আদালতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। এ সময় বিএসটিআইর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান (মামুন)। দুদকের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না এবং মোঃ সাইফুল আলম। প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পায়। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, গরুর খোলা দুধে অনুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত। এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব। পরে আদালত দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনী হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল। এছাড়া রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনী ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদ-) নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি আদালত ঢাকাসহ সারাদেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মোঃ মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এরপর ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আজ সেই প্রতিবেদন জমা দেয়া হলো।
×