ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

সফল তারকা, ব্যর্থ দেশ...

প্রকাশিত: ১২:০০, ১৭ জুলাই ২০১৯

সফল তারকা, ব্যর্থ দেশ...

সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ) ॥ অবিস্মরণীয় একটি বিশ্বকাপ কেটেছে এবার ক্রিকেটারদের। ফাইনাল খেলা দল দুটির বাইরেও অনেক পারফর্মার নিজেদের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন তিন ক্রিকেটার। রবিন লীগ পর্ব থেকেই ছিটকে যাওয়া বাংলাদেশের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বিস্ময় ছড়িয়েছেন। ওয়ানডের বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার ৮ ম্যাচে ব্যাট হাতে ৬০৬ রান করেন এবং বাঁহাতি স্পিনে শিকার করেন ১১ উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে তার ধারে কাছেও নেই আর কেউ। তবে ব্যাটিংয়ে ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা ৯ ম্যাচে ৬৪৮ রান করেন ৫ সেঞ্চুরি ও ১ অর্ধশতকে। আর অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বাধিক ২৭ উইকেট শিকারের অনন্য ইতিহাস রচনা করেন ১০ ম্যাচ খেলে। এ ক’জনই এবার টুর্নামেন্ট সেরা হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের হয়ে কেন উইলিয়ামসন অধিনায়ক হিসেবে এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক ৫৭৮ রানের রেকর্ড গড়েন। দলকে দারুণ নেতৃত্ব দিয়ে ফাইনালেও তোলেন। অল্পের জন্য ট্রফি হাত ফসকে গেলেও বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছেন উইলিয়ামসন। শুধুমাত্র দলগত ব্যর্থতার কারণেই বিস্ময়কর পারফর্মেন্স দেখিয়েও সেরা হতে পারলেন না সাকিব। রবিন লীগ শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত থেকেই এবারের বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা ওয়ানডে অলরাউন্ডার সাকিব, ভারতীয় ওপেনার রোহিত, অস্ট্রেলিয়ান গতি তারকা স্টার্ক ও কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে এবার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে বাজিমাত করলেন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন। সাকিব দলগত ব্যর্থতায় সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার না পেলেও আইসিসি ঘোষিত বিশ্বকাপের সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন। সেই একাদশের অধিনায়ক হিসেবে আছেন উইলিয়ামসনই। সাকিব বাংলাদেশের তিন ম্যাচেই জয়ের নায়ক ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে দলকে জিতিয়েছেন এবং হয়েছেন ম্যাচসেরা। তবে এই ম্যাচগুলোয় তিনিই এককভাবে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেননি। সাকিবের অবদান সবচেয়ে উজ্জ্বল হলেও অন্যরা ভাল করেছিলেন সেই ম্যাচ তিনটিতে। তবে ৮ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি আর ৫ হাফসেঞ্চুরিতে ৬০৬ রান এবং ১১ উইকেট নেয়ার পথে অনেকগুলো নতুন রেকর্ডের জন্ম দিয়ে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে ছিলেন তিনি। অপরদিকে, কিউই অধিনায়ক একাই দলকে ফাইনাল পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন। বিশেষ করে রবিন লীগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৬ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৮ রান করে একাই দলকে জিতিয়েছেন এবং ম্যাচসেরাও হয়েছেন। আবার সেমিতে তার ৬৭ রান ভারতের বিপক্ষে জেতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বোলিং না করলেও দারুণ নেতৃত্ব দিয়ে লো-স্কোরিং ম্যাচগুলোতেও বুদ্ধদীপ্ত ও কার্যকর কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে জিতিয়েছেন। আর এক বিশ্বকাপ আসরে দলের পক্ষে সর্বাধিক ৫৭৮ রানের রেকর্ডও গড়েছেন। তাই তিনি হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। আইসিসি এ দুই ক্রিকেটারকেই পুরস্কৃত করেছে বিশ্বকাপের সেরা একাদশে রেখে। সাকিবকে রাখার বিষয়ে আইসিসি লিখেছে, ‘কোন সন্দেহ নেই, ২০১৯ বিশ্বকাপের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় তিনি। আইসিসির অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা সাকিব বাংলাদেশের জার্সিতে ৩ নম্বরে নেমে ৮৬.৫৭ গড়ে করেছেন ৬০৬ রান। তবে টপঅর্ডারের মান বিবেচনা করে এই একাদশে তাকে রাখা হয়েছে ৫ নম্বরে।’ রোহিত শর্মা (ভারত) ॥ কোন বোলারই তাকে থামাতে পারছেন না নির্দিষ্ট গন্তব্যের আগে। তার গন্তব্য হয়ে গেছে সেঞ্চুরি হাঁকানো! তিন অঙ্কের ফিগারে পৌঁছানো যেন ছেলেখেলায় পরিণত করেছেন। ৯ ম্যাচে ৬৪৮ রান করেন ৫ সেঞ্চুরি ও ১ অর্ধশতকে। রোহিত শর্মা নিশ্চিতভাবেই যে কোন প্রতিপক্ষের জন্য ছিলেন মাথাব্যথার কারণ। সেমিফাইনাল থেকে ভারত বিদায় নিলেও রোহিত বিশ্বকাপে অনেক রেকর্ড গড়েছেন। বিশ্বকাপে সর্বাধিক ৬ সেঞ্চুরির রেকর্ডে রোহিত-শচীন এক কাতারে। গতবার নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ১টি আর এবারের বিশ্বকাপে ৫ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। এবার এক আসরে সর্বাধিক রানের দিক থেকেও ভারতীয় কিংবদন্তিকে পেছনে ফেলার সুযোগ ছিল তার। শচীন ২০০৩ বিশ্বকাপে ৬৭৩ রান করেছিলেন ১১ ম্যাচ খেলে। এবার রোহিত ৫ সেঞ্চুরিতে ৮ ম্যাচেই করেছিলেন ৬৪৭ রান। কিন্তু সেমিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মাত্র ১ রান করে আউট হওয়ায় নিজ দেশের ক্রিকেট ঈশ্বরকে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এক বিশ্বকাপে এর আগে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারার ৪ সেঞ্চুরি ছিল। ৫ শতকে তাকে পেছনে ফেলেছেন ৩২ বছর বয়সী রোহিত। ভারতের এবার বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সেই ম্যাচেই অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংস উপহার দেন রোহিত। ভারতীয় দলের টপঅর্ডার নিয়ে দুশ্চিন্তাটা শেষ হয়ে যায় তখনই। পরের ম্যাচে ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তার উপযুক্ত সঙ্গী ছিলেন শিখর ধাওয়ান। কিন্তু ইনজুরিতে এ বাঁহাতি ওপেনার ছিটকে যাওয়ার পর ভারতের টপঅর্ডারে একমাত্র আশা-ভরসা হয়ে দাঁড়ান রোহিত। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে লোকেশ রাহুলের ফর্মটা তেমন সুবিধাজনক ছিল না। এ কারণে লোকেশ এমনকি চার নম্বরেও ব্যাট করতে নেমেছিলেন। ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে লোকেশই সঙ্গী হয়ে যান রোহিতের। সেই লোকেশ একপ্রান্তে থেকে ভালভাবেই সঙ্গ দিয়েছেন। তিনি রোহিতকে দেখেছেন একে একে বড় কিছু ইনিংস খেলতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ¯œায়ুচাপের ম্যাচে রোহিত ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আগেই নিজের দলকে ভারমুক্ত করে দিয়েছেন। এবার বিশ্বকাপের দুই তলানির দল আফগানিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তারাই শুধু সফল হয়েছে রোহিতকে আগেভাগে সাজঘরে ফেরাতে। আফগানদের বিপক্ষে ১ আর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাত্র ১৮ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন রোহিত। এ দুটি ম্যাচের পর আর রোহিত হতাশ করেননি। টানা তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২, বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৪ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন। মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া) ॥ দ্রুতগতির সঙ্গে সুইং আর কৌশলগত প্রয়োগ থাকলে কোন পেসারের বোলিংকে ‘আগুনের গোলা’ বলে সংবধন করা হয়ে থাকে। এবার বিশ্বকাপে সেদিক থেকে সবচেয়ে বিধ্বংসী রূপ ছিল মিচেল স্টার্কের। ২৯ বছর বয়সী এ তারকা এবার পুরো আসরেই প্রতিপক্ষের জন্য ‘আগুনের গোলা’ ছুড়ে আতঙ্কের নাম ছিলেন। শুধু ভারতের বিপক্ষে ৭৪ রানে ১ উইকেট নিয়ে অনুজ্জ্বল ছিলেন, সেই ম্যাচেই হেরেছিল তার দল অস্ট্রেলিয়া রবিন লীগপর্বে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও শেষ লীগ ম্যাচে জ্বলতে পারেননি, তাই হেরেছে দল। কিন্তু ততদিনে ৯ ম্যাচে ২৬ উইকেট শিকার করে সাবেক স্বদেশী পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রার এক আসরে সর্বাধিক উইকেট নেয়ার রেকর্ড ছুঁয়েছিলেন। নতুন ইতিহাস গড়েছেন সেমিফাইনালে। কিন্তু সে ম্যাচেই সবচেয়ে ভোঁতা আর অকার্যকর বোলিং করেছেন এ বাঁহাতি গতি তারকা। ৯ ওভারে ৭০ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করে ১০ ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়ে এখন বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বাধিক উইকেট শিকারি স্টার্ক। কিন্তু দল হেরে যাওয়াতে ফাইনাল খেলা হচ্ছে না তার টানা দ্বিতীয়বারের মতো। তবে নতুন রেকর্ড গড়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা দ্বিতীয়বার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হাতে তোলার জোরালো দাবি জানিয়ে রেখেছেন স্টার্ক। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বাধিক ৭১ উইকেট নিয়েছেন ম্যাকগ্রা। সেখানে দ্বিতীয় স্থানে শ্রীলঙ্কার অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরন ৪০ ম্যাচে ৬৮, তৃতীয় লঙ্কান ডানহাতি পেসার লাসিথ মালিঙ্গা ২৯ ম্যাচে ৫৬ ও চতুর্থ স্থানে আছেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি বাঁহাতি পেসার ওয়াসিম আকরাম ৩৮ ম্যাচে ৫৫ উইকেট নিয়ে। এ তালিকায় এখন ৫ নম্বরে উঠে এসেছেন স্টার্ক। তিনি গত বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে ২২ এবং এ বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচে ২৭ উইকেট নিয়ে সবমিলিয়ে ১৮ ম্যাচেই নিয়েছেন ৪৯ উইকেট। শ্রীলঙ্কার সাবেক বাঁহাতি পেসার চামিন্দা ভাসও ৪৯ উইকেটে মালিক বিশ্বকাপে, কিন্তু ৩১ ম্যাচ খেলার কারণে এবং গড় ও স্ট্রাইকরেটে পেছনে পড়ে গেছেন স্টার্কের। বর্তমানে পেসারদের তালিকায় বিশ্বকাপে সর্বকালের সেরা তালিকায় স্টার্কের অবস্থান চারে হলেও বাঁহাতিদের তালিকায় ওয়াসিম আকরামের পরেই দ্বিতীয় স্থানে তিনি। কিন্তু ১২ বিশ্বকাপে বোলিং পারফর্মেন্সের সেরা ২০ বোলারের মধ্যে এক্ষেত্রে সবার ওপরে স্টার্ক। সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে এত উইকেট নিয়েছেন, তাই সেরা ২০ বোলারের মধ্যে সবচেয়ে ভাল গড় ও স্ট্রাইকরেট তার। স্টার্কের গড় বিস্ময়কর ১৪.৮১ ও স্ট্রাইকরেট ১৯.১! বিশ্বকাপ ইতিহাসে এখন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ম্যাকগ্রার পরই দ্বিতীয় অবস্থানে স্টার্ক। ম্যাকগ্রা ৪ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন, তাই উইকেট সংখ্যা অনেক বেশি। আর স্টার্ক দুই বিশ্বকাপ খেলে ৪৯ উইকেট নিয়ে তার পরেই। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে তৃতীয় সেরা বিশ্বকাপ বোলার আরেক গতি তারকা ব্রেট লি। তিনি ১৭ ম্যাচ খেলে ৩৫ উইকেট নিতে পেরেছেন। ২৯ বছর বয়সী স্টার্কের দারুণ সুযোগ আছে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলে সবাইকে পেছনে ফেলে সেরা হওয়ার। তবে এই বিশ্বকাপেই একটি ক্ষেত্রে ম্যাকগ্রাসহ সবাইকে পেছনে ফেলে সেরা হয়ে গেছেন তিনি। ম্যাকগ্রা যা করে গিয়েছিলেন তারপর একই কীর্তি শুধু করেই ক্ষান্ত হননি- তাকে ছাড়িয়ে গেছেন স্টার্ক। উপযুক্ত উত্তরসূরি পেয়ে চলমান বিশ্বকাপ আসরে আরেকবার শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া দল। টানা দুই বিশ্বকাপে (২০০৩ ও ২০০৭) ২০টির অধিক উইকেট শিকার করেছিলেন অসি কিংবদন্তি পেসার ম্যাকগ্রা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর চলতি বিশ্বকাপেও ২০ উইকেটের বেশি নিয়ে ম্যাকগ্রার পাশে বসে গেছেন স্টার্ক। এক বিশ্বকাপ আসরে সর্বাধিক ২৬ উইকেট শিকার করে রেকর্ড ছিল সাবেক এ ডানহাতি অসি মিডিয়াম পেসারের। এবার দুরন্ত গতির বাঁহাতি তারকা স্টার্ক প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নাস্তানাবুদ করে মাত্র ১০ ম্যাচেই ২৭ উইকেট শিকার করে ম্যাকগ্রার ইতিহাস পাল্টে দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রবিন লীগপর্বে অস্ট্রেলিয়ার শেষ ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে তিনি স্বদেশী গ্রেট ম্যাকগ্রাকে ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। একযুগ (১২ বছর) পর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নতুন রেকর্ড গড়ে সর্বকালের সেরা হওয়ার মোক্ষম সুযোগ ছিল তার। কিন্তু সেই একটি উইকেট তুলে নিতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে স্টার্ককে। চলতি বিশ্বকাপে নিজের সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের নজির দেখিয়েছেন এদিন, ৯ ওভারে ৭০ রান খরচায় ১ উইকেট নেন। আর এতেই নতুন ইতিহাস রচিত হয়। ম্যাকগ্রাকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বাধিক উইকেটের রেকর্ড গড়েন। কিন্তু দল হেরে যাওয়াতে এই রেকর্ডটাও যেন ম্লান হয়ে গেছে তার কাছে। নয়া ইতিহাস গড়েও তাই আক্ষেপ নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে তাকে। এবার বিশ্বকাপে প্রচুর রান হয়েছে। প্রতিটি দলেরই ব্যাটসম্যানরা মন খুলে ব্যাট চালাতে পেরেছেন ফ্ল্যাট উইকেট হওয়ার কারণে। কিন্তু এতে করেও স্টার্কের ধারালো বোলিংয়ে হেরফের তো হওয়ার দূরের কথা উল্টো যেন আরও শাণিয়ে উঠেছে। কারণ এত রানের ম্যাচগুলোতেও মাত্র ৫.৪৩ ইকোনমি ও ১৮.৫৯ গড়ে উইকেট শিকার করেছেন তিনি। বোলিং পারফর্মেন্সে এবারের বিশ্বকাপে তার ধারে কাছেও নেই অন্য কেউ। শাহিন আফ্রিদি (পাকিস্তান) ॥ এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম চমক পাকিস্তানী পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। তরুণ এ পেসার দুর্দান্ত বোলিং করেন। সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে তিনি করেন সবচেয়ে সেরা বোলিং। যা আবার বিশ্বকাপে পাকিদের হয়ে সবচেয়ে সেরা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তিনি এ রেকর্ড গড়েন। রাউন্ড রবিন লীগে মূলত তার আগুনঝড়া পেসের কাছেই অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। শাহিন শাহ ৯.১ ওভারে মাত্র ৩৫ রান খরচায় নেন ৬ উইকেট। এছাড়া সবচেয়ে কম বয়সী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটের এক ইনিংসের ৪৭ রানে ৪ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন শাহিন আফ্রিদি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের লিডসে তিনি এ কীর্তি গড়েন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী (১৯ বছর ৮৪ দিন) ক্রিকেটার হিসেবে শাহিন আফ্রিদি ৪ চার উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন। এর আগে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের ক্রিকেটার জন বিলিং (২০ বছর ১৪০ দিন) বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে কমবয়সী ক্রিকেটার হিসেবে ৪ উইকেট শিকার করে ইতিহাস গড়েছিলেন। দুই দশক পর জন বিলিংয়ের সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন করে ইতিহাস লিখেছেন পাকিস্তানের তরুণ পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সব ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি শাহিন আফ্রিদি। দলের ৯ ম্যাচের মধ্যে খেলেছেন মাত্র ৫টিতে। তাতেই নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। টাইগারদের একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার। দারুণ রেকর্ডের পর তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের রথী মহারথীরা। তার বন্দনায় মেতেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন। বলা বাহুল্য, বাঁহাতি পেসারের অনিন্দ্যসুন্দর পারফর্মেন্সের পরও বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘটেছে পাকিস্তানের। তাদের সমান ১১ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় সেমিফাইনালে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। ভন বলেন, টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে আফ্রিদিকে পাকিস্তান না খেলানোয় আমি হতাশ। আসরের বাকি সময়ে তাকে দেখতে পাব না বলেও খারাপ লাগছে। তার মতো বোলারের বোলিং উপভোগ থেকে বঞ্চিত হবো। তবে আশা করছি, ভবিষ্যতে সেই আক্ষেপ থাকবে না। কারণ, সে আরও বিশ্বকাপ খেলবে। দলকে সেমিতে তুলবে।
×