ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উইম্বলডনের নতুন রানী সিমোনা

প্রকাশিত: ১২:০১, ১৭ জুলাই ২০১৯

উইম্বলডনের নতুন রানী সিমোনা

ঘাসের কোর্টে বাজিমাত করলেন সিমোনা হ্যালেপ। মহিলা এককে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ন হলেন রোমানিয়ান তারকা। সিমোনার মুকুটে যোগ হলো নয়া পালক। শনিবার ফাইনালের প্রথম সেট থেকেই লড়াকু মনোভাবে দেখা যায় রোমানিয়ান হ্যালেপকে। শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে রোমানিয়ান তারকা ৬-২ এবং ৬-২ গেমে রীতিমতো উড়িয়েই দেন শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে। সেই সঙ্গে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় মেজর শিরোপার দেখা পেলেন তিনি। উইম্বলডনের ট্রফি উঁচিয়ে ধরে দারুণ রোমাঞ্চিত হ্যালেপ। আমেরিকান কিংবদন্তিকে হারিয়ে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছেন ২৭ বছরের এই টেনিস তারকা। শিরোপা জয়ের পর হ্যালেপ বলেন, ‘কার বিপক্ষে খেলছি এটা আদৌ ভাবিনি আমি। এই ম্যাচের আগেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম যে, সেরেনার বিপক্ষে নয় বরং নিজের খেলার উপরই মূল দৃষ্টিটা রেখেছিলাম। এ কারণেই স্বস্তিতে, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থেকেই নিজের সেরা খেলাটা উপহার দিতে পেরেছি। আমি নিশ্চিত যে, এটাই আমার জীবনের সেরা ম্যাচ।’ রোমানিয়ার হয়ে মহিলা এককে এটাই কোন খেলোয়াড়ের প্রথম উইম্বলডন শিরোপা। তার আগে পুরুষ এককেও কোন রোমানিয়ান এখন পর্যন্ত অল ইংল্যান্ড ক্লাবের শিরোপা জিততে পারেননি। ২০১৮ সালে রোলা গ্যাঁরোতে ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন হ্যালেপ। এবার সেই সংখ্যাটাকে নিয়ে গেলেন দুইয়ে। এমন কীর্তি গড়ে রোমানিয়ান তারকা স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসিত। তিনি বলেন, ‘আমার যখন ১০ বছর বয়স ছিল তখন মা আমাকে বলেছিলেন যদি টেনিসে কিছু করে দেখাতে হয় তবে তোমাকে উইম্বলডনের ফাইনালে খেলতে হবে। আমি খুব বেশি নার্ভাস ছিলাম। শারীরিকভাবেও কিছুটা দুর্বল ছিলাম। কিন্তু তারপরেও এর চেয়ে ভাল ম্যাচ আর কোনদিন খেলিনি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই আমি বলেছিলাম আমার একটাই লক্ষ্য, শিরোপা জয় ও এই ক্লাবের আজীবন সদস্য হওয়া।’ এদিকে, নতুন মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেরেনা উইলিয়ামস। কিন্তু আমেরিকান কিংবদন্তিকে ইতিহাস গড়তে দিলেন না সিমোনা। রোমানিয়ার প্রতিভাবান এই এই তারকার কাছে উইম্বলডনের ফাইনালে মাত্র ৫৬ মিনিটে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেন সেরেনা। আর এই পরাজয়ে রেকর্ড স্পর্শকারী ২৪তম গ্র্যান্ড স্লামের শিরোপা জেতা হলো না মার্কিন তারকার। এই ম্যাচের শেষে সেরেনা নিজেও অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, হ্যালেপের কাছ থেকে এতটা আগ্রাসী খেলা আশা করেননি তিনি। হ্যালেপের কাছে গত পাঁচ বছরের মধ্যে এটাই সেরেনার প্রথম পরাজয়। এই হারের পর হ্যালেপকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সেরেনা। এ বিষয়ে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকা বলেন, ‘অসাধারণ খেলেছে সে। যদিওবা আমার বিপক্ষে কারও ভাল খেলাটাকে মোটেও বিস্ময়কর মনে করি না। তবে আমি ভিন্নভাবে খেলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কোন কিছুই আমার পক্ষে যায়নি। পাশাপাশি অনেক ভুলও করেছি আমি।’ এদিকে, পুরুষ এককে উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন নোভাক জোকোভিচ। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার ম্যারাথন ফাইনালে রবিবার রজার ফেদেরারকে হারিয়ে উইম্বলডনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন তিনি। সার্বিয়ান তারকা এদিন ৭-৬(৭/৫), ১-৬, ৭-৬ (৭/৪), ৪-৬ এবং ১৩-১২ (৭/৩) গেমে অবিশ্বাস্য পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে পরাজিত করেন সুইস টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি রজার ফেদেরারকে। সেই সঙ্গে উইম্বলডনের পঞ্চম শিরোপা জিতলেন সার্বিয়ান তারকা। রুদ্ধশ্বাস এই ম্যাচে এদিন দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কেউই একে অপরকে ছাড় দেননি এক ইঞ্চি। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক টেনিস উপহার দেন রজার ফেদেরার। অন্যদিকে, রক্ষণাত্মক কৌশলে একটু একটু করে এগোতে থাকেন সার্বিয়ার জোকোভিচ। প্রথম সেট টাইব্রেকারে ৭-৬ ব্যবধানে জিতে যান টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন। দ্বিতীয় সেটেই অবশ্য ঘুরে দাঁড়ান সুইস তারকা। ৬-১ ব্যবধানে সেট নিজের নামে করে নেন তিনি। তৃতীয় সেট ছিল জোকারের নামে। টাইব্রেকারে ৭-৬ ব্যবধানে জেতেন তিনি। চতুর্থ সেটে আবারও ৬-৪ ব্যবধানে জেতেন ফেড এক্সপ্রেস। ফলে ম্যাচ ২-২ হয়। ম্যাচের রোমাঞ্চ যেন তখনও বাকি। শেষ সেটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় জোকার ও ফেদেরারের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে জিতে এবারের উইম্বলডনও ঘরে তুলে নেন নোভাক জোকোভিচ। যা তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম উইম্বলডন। সর্বমোট ১৬তম গ্র্যান্ডস্লাম। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ স্থায়ী ফাইনালে ফেদেরারকে পরাজিত করে শিরোপা ধরে রাখার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লেন সার্বিয়ান তারকা। এর ফলে সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে উইম্বলডনের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে পারলেন না ফেদেরার। ৪ ঘণ্টা ৫৭ মিনিটের দীর্ঘ উইম্বলডন ফাইনালে প্রথমবারের মতো শেষ সেটের নিষ্পত্তি ঘটেছে টাইব্রেকে। ৭১ বছরের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ম্যাচ পয়েন্ট রক্ষা করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জোকোভিচ। সেইসঙ্গে সাবেক তারকা বিওন বর্গের পাঁচ উইম্বলডন শিরোপার মাইলফলকও স্পর্শ করেন নোভাক জোকোভিচ। এমন কীর্তির পর দারুণ রোমাঞ্চিত ৩২ বছর বয়সী এই সার্বিয়ান তারকা। ম্যাচ শেষে জোকোভিচ বলেন, ‘সর্বকালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় রজারের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের এটি আমার অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ। রজারকে আমি খুব শ্রদ্ধা করি। দুর্ভাগ্যবশত, এই ধরনের ম্যাচে কোন একজনকে পরাজিত হতে হয়। দুটি ম্যাচ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত ফিরে আসাটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’ সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২০টি গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন ফেদেরার। এবার সেই সংখ্যাটাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানি ছিল তার সামনে। কেননা, নিজের প্রিয় ঘাসের কোর্টে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছেন আটত্রিশ ছুই ছুই ফেদেরার। সুইস তারকার রেকর্ড ২০ গ্র্যান্ড স্ল্যামের বিপরীতে জোকোভিচ আর মাত্র চার শিরোপা দূরে রয়েছেন। সুইস তারকার তুলনায় পাঁচ বছরের ছোট জোকোভিচের সামনে নিশ্চিত সুযোগ আছে এই রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবার। উইম্বলডনেও রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল ফেদেরারের সামনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার আর হতে দেননি জোকোভিচ। ম্যাচ শেষে ফেদেরার বলেন, ‘ম্যাচটি দীর্ঘ ছিল, এখানে সবকিছুই হয়েছে। আমিও আমার উত্তর পেয়েছি, সেও পেয়েছে, দিনের শেষে দারুণ এক টেনিস দেখেছে সবাই। আশা করছি ৩৭ বছরে এখনও সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি।’ বিশ্ব টেনিসে গত দুই দশক ধরেই রাজত্ব চলছে ‘বিগ থ্রি’ খ্যাত ফেদেরার-নাদাল এবং জোকোভিচের মধ্যে। এবারের উইম্বলডনও জোকোভিচ জেতায় তিন তারকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল শেষ ১১টি স্লাম।
×