ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টেক্সাফোর্নিয়া আমেরিকার ভবিষ্যতের নির্ধারক

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১৭ জুলাই ২০১৯

টেক্সাফোর্নিয়া আমেরিকার ভবিষ্যতের নির্ধারক

এনামুল হক ॥ বাহ্যিক বিচারে মনে হতে পারে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউজে বসে নির্দেশাবলী দেন যা জাতির জীবন ও ভবিষ্যত রূপান্তরিত করে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ঠিক তেমনটা নয়। আমেরিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোর অনেকগুলোই ওয়াশিংটনে নির্ধারিত হয় না বরং রাজ্যগুলোর দ্বারা বিশেষ করে দুটি রাজ্যের দ্বারা নির্ধারিত হয়। রাজ্য দুটির একটি হলো টেক্সাস, অন্যটি ক্যালিফোর্নিয়া। টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়া হলো আমেরিকার সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য। দুটো রাজ্যই সমানভাবে নিশ্চিত যে তারাই হলো আমেরিকার ভবিষ্যত। প্রতি পাঁচজন আমেরিকানের একজন টেক্সাস কিংবা ক্যালিফোর্নিয়াকে নিজেদের স্বদেশ বলে গণ্য করে। ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতি চারজন আমেরিকানের একজন তাই করবে। গত ২০ বছরে এই দুটি রাজ্য আমেরিকায় এক-তৃতীয়াংশ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তাদের অর্থনৈতিক ভার বা গুরুত্ব বাকি সমস্ত অঙ্গরাজ্যের সমান। তারা যদি আলাদা রাষ্ট্র হতো তাহলে জিডিপির বিচারে টেক্সাস হতো দশম বৃহত্তম রাষ্ট্র, যার স্থান হতো কানাডার আগে। আর একই মানদ-ে ক্যালিফোর্নিয়া হতো পঞ্চম বৃহত্তম যার স্থান ঠিক জার্মানির পেছনে। আমেরিকার ডেমোগ্রাফিক বা জনমিতির ভবিষ্যতও এই দুটি রাজ্যের দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে। দুটি রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ হলো হিমপ্যানিন যা জাতীয় গড়ের দ্বিগুণ। ক্যালিফোর্নিয়ায় অশ্বেতাঙ্গরা ২০০০ সাল থেকেই সংখ্যার দিক দিয়ে শ্বেতাঙ্গদের ছাড়িয়ে গেছে। আর টেক্সাসে তারা ছাড়িয়ে গেছে ২০০৫ সাল থেকে। জনমিতির এই অবস্থাটা বাকি রাজ্যগুলোতে শতাব্দীর মাঝামাঝির আগ পর্যন্ত পৌঁছাবে না। ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসে প্রায় এক-চতুর্থাংশ আমেরিকায় সন্তান শিক্ষা লাভ করে তাদের অনেকেই গরিব ও অস্থানীয় ইংরেজী ভাষী। তবে অনেক দিক দিয়ে এই দুই অঙ্গরাজ্য গত কয়েক দশক ধরে দুই বিপরীত দিকে ধাবিত হচ্ছে। দুই রাজ্যই দুই আলাদা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে যার মধ্য দিয়ে বোঝা যাবে কোন্ পথে আমেরিকার ভাল হয়। টেক্সাস হচ্ছে এমন এক রাজ্য সেখানে করের পরিমাণ কম, বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রণ কম এবং নাগরিকদের জন্য সরকারের প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ও বিধি ব্যবস্থা কম থাকে। অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় করের হার বেশি, নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা কঠোর এবং নাগরিকদের সমস্যা সমাধানে সরকারের ভূমিকাও বেশি থাকে। দুই রাজ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল থেকেই নির্ধারিত হবে আমেরিকা কোন ধরনের দেশ হয়ে উঠবে। প্রথম দৃষ্টিতেই মনে হবে দুই রাজ্যের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। ক্যালিফোর্নিয়ার আইনসভায় ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য। সিনেটের ৪০ সদস্যের মধ্যে ২৯ জন ডেমোক্র্যাট ও ১১ জন রিপাবলিকান। প্রতিনিধি পরিষদের ৮০ সদস্যের ৬১ জন ডেমোক্র্যাট ও ১৮ জন রিপাবলিকান। অন্যদিকে টেক্সাসের ৩১ জন সিনেটরের ১৯ জন রিপাবলিকান ও ১২ জন ডেমোক্র্যাট। প্রতিনিধি পরিষদের ১৫০ জন সদস্যের ৮৩ জন রিপাবলিকান ও ৬৭ জন ডেমোক্র্যাট। অর্থাৎ রিপাবলিকানদেরই প্রাধান্য সেখানে। টেক্সাসে রাজ্য আয়কর নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার রাজ্য আয়করের শীর্ষ হার ১৩ শতাংশ যা গোটা আমেরিকার মধ্যে সর্বোচ্চ। টেক্সাসের পরিবেশগত বিধিনিয়ম শিথিল। ক্যালিফোর্নিয়ায় কঠোর। টেক্সাসে নগরগুলোকে বিস্তৃত হতে দেয়া হয়। ক্যালিফোর্নিয়ায় এ ব্যাপারে বিধিনিষেধা আছে। অবশ্য আরও নিবিড়ভাবে দেখলে টেক্সাসকে কৈশোরের ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অধিকতর মনে হবে। আশির দশকের শেষ দিকে ক্যালিফোর্নিয়ার জনসংখ্যা যে স্তরে ছিল টেক্সাসের জনসংখ্যা অতি সম্প্রতি সেই স্তরে পৌঁছেছে। ক্যালিফোর্নিয়া এক সময় প্রসারমান ও রিপাবলিকান প্রধান রাজ্য ছিল সেখানে কড় ছিল কম। শিক্ষার ক্ষেত্রে টেক্সাসের ঘাটতি আছে। ক্যালিফোর্নিয়ার মতো টেক্সাসের স্থলগুলোর শিক্ষাগত সক্ষমতা ভাল নয় এবং এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালর ধারেকাছে নেই। এ থেকে মনে হতে পারে যে টেক্সাস যতই বিকশিত হবে ততই তা ক্যালিফোর্নিয়ার মতো হয়ে দাঁড়াবে তবে সেটা এক নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত। ক্যালিফোর্নিয়ার প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠার ব্যাপারটা খুব সুন্দরভাবে বা চমৎকারিত্বের সঙ্গে ঘটেছে এমন নয়। ক্যালিফোর্নিয়া প্রতি বছর আমেরিকানদের লোকসানের কারণ ঘটায়, অন্যদিকে টেক্সাস তাদের লাভ এনে দেয়। রাজ্য সরকার বিশাল অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকারের হাতে এখন ভাল উদ্বৃত্ত আছে। আপতকালীন তহবিলও ভাল। তবে সামাজিক সমস্যাগুলো প্রকট। তার মধ্যে সবচেয়ে দৃশ্যমান সমস্যা হলো গৃহহারা। বেকারত্বের হারও একটানা বেশি এবং টেক্সাসের তুলনায় ক্যালিফোর্নিয়ায় আয়ের অসমতা অধিকতর বেশি। আমেরিকার যে কোন রাজ্যের তুলনায় ক্যালিফোর্নিয়ায় বেকারত্ব অধিক। তবে এসব সমস্যা সত্ত্বেও আমেরিকা এই উভয় রাজ্য থেকে অনেক কিছুই শিখতে এবং নিজের ভবিষ্যত রচনা করতে পারে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×